বাংল🐻াদেশ মূলত দ্বিদলীয় ধারার রাজনীতিতে বিভক্ত। একটি ধারার নেতৃত্বে বিএনপি। ক্যান্টনমেন্টে জন্ম হলেও প্🀅রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন করে গণতান্ত্রিক চরিত্র অর্জন করে দলটি। জিয়াউর রহমানের ৭৫-৮১ সময়ের পরেও বেগম জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি তিন মেয়াদে ১০ বছর ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু ২০০৬ সালের পর থেকে টানা ১৬ বছর ক্ষমতার বাইরে দলটি। ১/১১ সরকারেে সময় এবং বর্তমান সরকারের সময়ও মামলা-হামলায় দলটি পর্যুদস্ত। বিশেষ করে গত ১৩ বছরে আওয়ামী লীগ বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে কোনঠাসা রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও দণ্ড মাথায় নিয়ে লন্ডনে পালিয়ে আছেন।
অনেকের ধারণা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার কারণেই বিএনপির প্রতি আওয়ামী লীগ এতটা বেপরোয়া। এই সময়ে বিএনপি নানাভাবে আন্দোলনের চেষ্টা করলেও সরকারের বাধার মুখে টিকতে পারেনি। নেতৃত্বহীন বিএনপি অনেকদিন ঘরোয়া সেমিনার আর ব্রিফিংয়ে নিজেদের তৎপরতা সীমাবদ্ধ রেখেছিল। তখন তাদের 🌠`বিএনপি আন্দোলন করতে পারে না, সক্ষমতা নেই, জনগণের সাথে যোগাযোগ নেই, কোন ঈদের পর আন্দোলন` ইত্যাদি টিকা-টীপ্পনী শুনতে হয়েছে। তবে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে গত কয়েকমাস ধরেই নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে সক্রিয় বিএনপি। যথারীতি হামলাও হচ্ছে, আবার মামলাও হচ্ছে তাদের নামেই। এরইমধ্যে ভোলা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জে চারজনের প্রাণ গেছে। তবে আগের মত এবার তারা মাঠ ছাড়েনি। কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় এখন চলছে বিভাগীয় সমাবেশ।
গত ১২ অক্টোবর চট্টগ্রামের সমাবেশ দিয়ে শুরু হওয়া এই কর্মসূচি শেষ হবে আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ দিয়ে। এরই মধ্যে ময়মনসিংহে সমাবেশ হয়েছ꧙ে। আজ হবে খুলনায়। চট্টগ্রামের সমাবেশটি প্রায় বিনা বাধায় করতে পেরেছিল বিএনপি। তাতে বিপুল লোকসমাগমও হয়েছিল। তাতেই যেন কাল হয়েছে। বাস বন্ধ করে ময়মনসিংহের সমাবেশে লোক ঠেকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করেছে সরকার ও সরকারি দল।
খুলনায় সরকারি দল আরো বেপরোয়া। সমাবেশে লোক আসা ঠেকাতে খুলনাকে কার্যত সারাদেশ থ꧃েকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে। পরিবহণ ধর্মঘট ডেকে মানুষের চলাচলের বাধার সৃষ্টি করছে। শুধু সড়ক পরিবহন নয়, নৌপথেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে, বন্ধ করে দেয়া হয়েছে খেয়া পারাপারও। রেলস্টেশনে সরকার দলীয়দের সতর্ক পাহারা, শহরজুড়ে সরকারি দলের নেতাকর্মীদের মহড়া। চলছে পুলিশের অভিযান, ধরপাকড়। সব মিলে খুলনা এখন বিচ্ছিন্ন, থমথমে এক আতঙ্কের নগরী। কিন্তু রাজনৈতিক আন্দোলনের নিয়মই হলো, `বাধা দিলে বাধবে লড়াই`। যত বাধা, তত আগ্রহ।
সরকারি দলের বাধা সত্ত্বেও বিএনপি নেতাকর্মীরা বিভাগের বিভিন্ন এলাকা থেকে নানাভাবেꦬ খুলনা শহরে পৌছেছেন। সমাবেশ শনিবার দুপুর ২টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও শুক্রবার রাত থেকেই কয়েক হাজার মানুষ সমাবেশস্থলে জড়ো হয়েছেন। খুলনায় যাদের থাকার জায়গা নেই, তারা চট বিছিয়ে রাজপথেই অবস্থান নিয়েছেন। গ্রেপ্তার এড়াতে তারা একসাথে থাকছেন। শুক্রবার রাতটা তারা আতঙ্ক দূর করতে উৎসবমুখরতায় কাটিয়েছেন🥂। আজ ২টায় শুরু হওয়া সমাবেশ কেমন হবে জানি না, কিন্তু সরকার ও সরকারি দলের সর্বাত্মক চেষ্টায় অনুষ্ঠানের আগেই বিএনপির সমাবেশ সফল হয়ে গেছে। একটি সমাবেশ থেকে বিএনপি যা যা পেতে পারতো, তারচেয়ে অনেক বেশি পাওয়া হয়ে গেছে। কোনো বাধা ছাড়া করার সুযোগ পেলে হয়তো বিএনপির সমাবেশে লক্ষাধিক মানুষের সমাবেশ হতো। একদিনের কাভারেজেই ফুরিয়ে যেতো তা। কিন্তু সরকারি দল প্রাণান্তকর চেষ্টা করে একদিনের কাভারেজকে তিনদিনের কাভারেজ বানিয়েছে। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন শুধুই সমাবেশের খবর। বিএনপি বিভাগীয় সমাবেশ করছে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে। খুলনা বিভাগের বিএনপি নেতাকর্মীরা এখন দারুণভাবে চাঙা। যত বাধা, তত চাঙা। দ্বন্দ্ব ভুলে মাঠে নেমেছেন সবাই। সমাবেশে যদি আর লোক নাও আসে, কাল রাত থেকে যারা আছেন, তাতেই সমাবেশ সফল। আওয়ামী লীগ বাধা না দিলে বিএনপি খুলনার সমাবেশ ঘিড়ে এত কাভারেজ পেত না, নেতাকর্মীদেরও এত উজ্জীবিত করতে পারত না।
বিএনপির সমাবেশ ঠেকাতে গিয়ে সরকার খুলনা এবং আশপাশের জেলার লাখো মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলেছে। তাদের মধ্যে সবাই নিশ্চয়ই বিএনপি করে না, অনেকে হয়তো আওয়ামী লীগও করে। কিন্তু দুর্ভোগ সবার সমান হয়েছে। যারা দুর্ভোগে পড়েছেন, তারা সবাই সরকারের ওপর বিরক্ত। সরকার অনেক চেষ্টা করে বিএনপির প্রতি মানু🎐ষের সহানুভূতি আদায় করে দিয়েছে।
খুলনায় বিএনপি সমাবেশ করছে পুলিশের অনুমতি ন𝐆িয়ে। কিন্তু সরকারি দল এবং পরিবহণ মালিকরা মিলে যা করছে, তা আইনবহির্ভূত। মানুষের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্ট൲ির কোনো অধিকার কারো নেই। প্রশাসনের উচিত মহড়া দেয়া আওয়ামী লীগ আর ধর্মঘট ডাকা পরিবহন মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট