• ঢাকা
  • রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Songbad Prokash

ইনস্টাগ্রাম

টুইটার


লিংকডইন

পিন্টারেস্ট

গুগল নিউজ


পিটার অ্যাপস

ঋণের ফাঁদ ও ‘লঙ্কাকাণ্ড’ থেকে এশিয়ার শিক্ষা


গোলাম আনোয়ার সম্রাট
প্রকাশিত: মে ১৭, ২০২২, ০৮:৩৫ পিএম
ঋণের ফাঁদ ও ‘লঙ্কাকাণ্ড’ থেকে এশিয়ার শিক্ষা

বিশ্বে দুই বছর পার করছে করোনা মহামারি। বিধিনিষেধের কড়াকড়ি আগের 🅘চেয়ে কমেছে। এ সময়ে এসে জনগণকে আবদ্ধ করার চেষ্টা করছে শ্রীলঙ্কা। সরকারের লিখিত অনুমতি ছাড়া জনগণের বাইরে বের হওয়া নিষেধ। যদিও দেশটিতে কারফিউ জনস্বাস্থ্যের পক্ষে দেওয়া হয়নি। এটি বিপর্যস্ত অর্থনৈতিক অবস্থার মধ্যে অস্থিরতা দমনে সরকারের মরিয়া প্রচেষ্টা। এতে বরং উত্তেজনা বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে পদত্যাগ করেছ🦋েন। মন্ত্রিসভার সদস্যরাও পদত্যাগ করেছেন। সংসদ ভবনে হামলা করা হয়েছে। সামরিক কঠোর অবস্থার মধ্য দিয়েও যেতে হচ্ছে।

ইউক্রেনে রুশ আক্রমণের পর থেকে খাদ্য ও জ্বালানির মূল্য আকাশচুম্বী। রাজনৈতিক ও জীবনযাত্রার ব্যয়ের সংকটে ভুগছে প্রায় সব দেশ। দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষেত্💎রে যা চরম সত্য। বিশেষ করে পাকি💦স্তান ও শ্রীলঙ্কার মতো ডিগবাজি খাওয়া সরকারের জন্য। উভয় দেশেই আছে চীনের ভূরাজনৈতিক প্রভাব। এক দশকের বেশি সময় দুই দেশে সম্পৃক্ততা ও বিনিয়োগ সম্প্রসারিত করেছে বেইজিং। উভয়ের অর্থনৈতিক প্রধান সমর্থক বেইজিং। এখন তাদের রাজনৈতিক আভিজাত্যের প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হওয়ার রূপ দেখছে চীন। বিশেষ করে ঋণের বোঝার জ্বালা, যা চীনকে ক্ষমতা ও বিপুল অর্থ হারানোর ঝুঁকিতে ফেলেছে। এতে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে সুগন্ধি খুঁজছে ভারত।

ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে মূল্যবৃদ্ধি এশিয়ার দেশ আফগানিস্তানের চলমান মানবিক সংকট তরান্বিত করেছে। আফগানদের নিয়ে বেইজিংয়ের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা এখনো অনিশ্চিত। প্রতিবেশী ও সমর্থক পাকিস্তানও তালেꦆবান শাসকদের এখনো পর্যন্ত প্রকাশ্যে স্ব🦂ীকৃতি দিতে অনিচ্ছুক।

এদিকে গত মাসে পাকিস্তানের রাজনীতিতে নতুন ইত🐼িহাস সৃষ্টি হয়েছে। ইমরান খান আস্থা ভোটে হেরে প্রধানমন্ত্রিত্ব হারান। দেশের ইতিহাসের প্রথম কোনো নেতা এভাবে ক্ষমতাচ্যুত হলেন। ঠিক এই সংকটে আছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে। বিক্ষুব্ধ জনতার🍌 বিক্ষোভে ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রিত্ব হারিয়েছেন তার বড় ভাই মাহিন্দা রাজাপক্ষে। তিনি দেশটির সাবেক তিনবারের প্রেসিডেন্ট। দেশের দক্ষিণের রাজনৈতিক কেন্দ্রস্থল হাম্বানতোতায় রাজাপক্ষে পরিবারের বাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ জনতা।

ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে উভয় দেশেই মূল্যস্ফীতি বেড়🔯েছে। যূদ্ধের পূর্বের অর্থনৈতিক অবস🎉্থা ও মুদ্রার মান সীমিত আকারে নেমে এসেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বিপর্যস্ত। বিশেষভাবে শ্রীলঙ্কা প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি ও প্রায় ৫১ বিলিয়ন ডলার ঋণ পরিশোধের জন্য সংগ্রাম করছে। বেইজিংকে এখন পর্যন্ত কলম্বোর সবচেয়ে বড় ঋণদাতা হিসেবে বিশ্বাস করা হয়।

২০০৫ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার প💧্রেসিডেন্ট ছিলেন মাহিন্দা রাজাপক্ষে। ২০১৯ সাল থেকে বর্তমান প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে আছেন তার ছোট ভাই গোতাবায়া রাজাপক্ষে। দুই ভাইয়ের শাসনামলে কলম্বোর প্রতি চীনা সমর্থন তীব্রভাবে বৃদ্ধি পায়। প্রাথমিকভাবে তামিল টাইগার বিদ্রোহীদের দমনে সামরিক সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে অর্থায়নের মাধ্যমে ভূমিকা রাখে চীন। পরে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন বৃদ্ধি ও বিশেষ করে রাজাপক্ষের পৈতৃক বাড়ির এলাকা হাম্বানতোতাকে উন্নত করতে অর্থায়ন করে বেইজিং।

জানুয়ারিতে কলম্বো সফরে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ‍‍‘কাছের বন্ধু‍‍’ হিসেবে মাহিন্দা রাজাপক্ষের প্রশংসা করেন। ছোট ভাই প্রেꦏসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে ইতোমধ্যে ঋণ মওকুফের জন্য বেইজিংয়ের কাছে অনুরোধ করেছেন। কিন্তু অন্যান্য দেশের জন্য নজির স্থাপনের ভয়ে প্রকাশ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়নি চীন।

এশিয়া, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে কৌশলগত প্রভাবের জন্য অবক🍨াঠামো প্রকল্পের ঋণ দেওয়া বেইজিংয়ের বেল্ট অ্যান্ড রোড কর্মসূচির কেন্দ্রবিন্দু। এসব অঞ্চলের ছোট দেশগুলোকে যে চীন ‍‍‘ঋণের ফাদে‍’ ফেলেছে সে ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত আগে থেকেই সতর্ক করেছিল। পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার সংকটকে যুক্তি হিসেবে ব্যবহার নিজেদের সতর্কতা সত্যি হিসেবে প্রমাণ করতে চাইছে ভারত।

ইউক্রেনে যুদ্ধের প্রভাবে মূল্যবৃদ্ধি শ্রীলঙ্কার দুর্দশার একমাত্র কারণ নয়। মহামারি চলাকালে পর্যটন থেকে বৈদেশিক মুদ্রার আয় কমে যাওয়া আরেকটি বড় কারণ। পাকিস্তানেও মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে একই দুর্দশা দেখা দিয়েছে। এতে করে অপ্রত্যাশিত কূটনৈতিক উপহার পেল ভারত। নয়াদিল্লি চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু হয়ে মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেছে। 🐈ছাড় দেওয়া রাশিয়ার তেল ও গ্যাস কেনা বাড়িয়েছে ভারত সরকার। মহামারি থাকা সত্ত্বেও ভারতেও এই বছর তুলনামূলক ভালো ফসল উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু দেশটিতে মুদ্রাস্ফীতিও বাড়ছে।

শ্রীলঙ্কা বৈদেশি💛ক মুদ্রার রিজার্ভ বর্তমানে ৫০ মিলিয়ন ডলারের কম। বর্তমানে কলম্বো আমাদানি করা জ্বালানির মূল্য পরোশোধ করতে নয়াদিল্লির ঋণের ওপর নির্ভরশীল। শ্রীলঙ্কাকে ৫০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে বছরের শুরুতে চুক্তি করে ভারত সরকার। চলতি সপ্তাহে এর পরিমাণ আরো ২০০ মিলিয়ন ডলার বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু এই অর্থ দিয়ে শুধু মে মাসে আমদানি করা কার্গোর বিল পরিশোধ করা সম্ভব। আগামী কয়েক মাস চলার জন্য শ্রীলঙ্কা আরো ৫০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ খুঁজছে।

জ্বালানি খাত ছাড়া শ্রীলঙ্কায় ভারতের অন্য সহায়তার পরিমাণ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে সরকার গঠন না করতে পারলে দেশের অর্থনীতি সম্পূর্ণ ধসে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দৈনিক ১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকবে দেশ। জ্বালানির অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্𒀰রগুলো ব্ল্যাক আউট পালন করছে। ডিজেল ও পেট্রোলের অভাবে কৃষকরা ফসল রোপণ করতে অক্ষম হয়ে পড়েছেন।

মোদি সরকার শ্রীলঙ্কায় ভারতের স্বার্থ আরও গভীর করতে চায়। আদর্শিকভাবে এর উদ্দেশ্য চীনকে সরিয়ে দেওয়া। কিন্তু ১৯৮০-এর দ🅰শকের শেষে ও ১৯৯০-এর দশকের শুরুতে বিপর্যয়কর সামরিক হস্তক্ষেপের পর অভ্যন্তরীণ জীবনযাত্রার খরচও বেড়ে যাওয়ায় মোদি সরকারও সতর্ক। যে কারণে চলতি সপ্তাহে শ্রীলঙ্কায় সেনা পাঠানোর বিষয় অস্বীকার করে ভারত। একইভাবে শ্রীলঙ্কার নেতাদের পালিয়ে নয়াদিল্লিতে অভয়ারণ্যের খোঁজে যাওয়ার প্রস্তাব অস্বীকার করছেন মোদি। তবে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কা নিয়ে সতর্ক চীন। শ্রীলঙ্কার বিরোধী দল ও ক্ষমতাসীন দল মিলে নতুন সরকার গঠন করে ‘দেশের মৌলিক স্বার্থ’ বজায় রাখার আশা রাখছে বেইজিং। গোতাবায়া রাজাপক্ষে চলতি সপ্তাহে নতুন প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভা নিয়োগ দিয়েছেন। কিন্তু নতুন নেতৃত্বের বিষয়ে বিরোধীরা এখনো বিভক্ত।

শ্রীলঙ্কায় মানবিক সহায়তার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে চীন। বেইজিং-ভিত্তিক এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্ক (এডিবি) থেকে সম্ভাব্য বেলআউটের পাশাপাশি নিজস্ব ক্রেডিট লাইনের কথা বলা হচ্ছে। যা হাম্বানতোতা ও কলম্বোতে ভারত মহাসাগরের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর উন্নয়নসহ দেশে চীনের স্বার্থ বজায় রাখার এক নতুন মাত্রা। বেইজিংয়ের খদ্দের যেকোনো সরকারকে ফাঁকা চেক দিতে পারে চীন। তবে🥂 সংকটের মধ্যে চীনের এমন ফাঁদে পুনরায় পা দেওয়া হবে সবচেয়ে বড় ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত।

লেখক : পিটার অ্যাপস; রয়টার্সের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, বিশ্বায়ন ও দ্বন্দ্ব বিষয়ক কলামিস্ট এবং ২১ শতকের প্রজেক্ট ফর স্টাডির প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী।

(কলাম স্বত্ব : ইকোনোমিক টাইমস। অনুবাদ : গোলাম আনোয়ার সম্রাট)

Link copied!