আমাদের দেশ ও সমাজে নানা রকম উৎসবের আয়োজন করা হয়ে থাকে। বলা যায়, উৎসব আমাদের জাতীয় জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। এব𝔍ার ক্রান্তিকাল কাটিয়ে এসেছে ঈদুল ফিতর। দুই বছর করোনাকালে ঈদের আনন্দ স্তব্ধ হয়েছিল। এ বছর ঈদ উদযাপন নতুন রূপꦗে ফিরে এসেছে। সবাই অতীতের ঈদকে জীবনে প্রতিষ্ঠিত করে ভালো-মন্দ বোধের চেতনায় প্রদীপ্ত হবে। সবার সঙ্গে সবার সংযোগ এ বছরের ঈদকে গভীর আনন্দে ভরিয়ে দেবে।
উৎসবের ছুটি এবং আনন্দ উপভোগে মেতে উঠবে সবাই, ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে। উৎসব মানুষকে কাছাকাছি করে। বৈষম্যের জায়গা ভুলে আনন্দ পেতে উদগ্রীব হয়ে ওঠে মানুষ। সমাজবাস্তবতার এটি আরেক ধরনের চিত্র। সেজন্য সবাই মিলে বলা দরকার, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। এটি শুধু বলার জন্য বলা কথা নয়। এর গভীর অর্থ আছে। ধর্মের নামে নানা ঘটনা সংঘটিত হয়েছে আগে এবং বর্তমানেও। উপমহাদেশের এটি একটি সামাজিক, রাজনৈতিক বাস্তবতা। ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’—এভাবে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উৎসব প▨ালিত হলে মানুষের মাঝে মর্যাদা অক্ষুণ্ন থাকবে।
মুসলিম সম্প্রদায়ের বড় উৎসব হচ্ছে ঈদ। যদিও ধর্মীয় উৎসব, তবু তাকে কেন্দ্র করে আমাদের সাহিত্যও একটা জায়গা করে নিয়েছে। এই উৎসবের সঙ্গে সাহিত্যের সম্পর্ক থাকতে পারে— এমন চিন্তা যারা করেছিলেন, তারা আমার নমস্য। ঈদ মানে ঈদগাহে যাওয়া, নতুন কাপꦆড় কেনা, সেমাই-ফিরনি, পোলাও-কোর্মা রান্না— এই সঙ্গে একটি ঈদসংখ্যা প্রকাশ এবং বিপণন করে বাঙালির সাংস্কৃতিক রুচির সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া নিঃসন্দেহে অভিনব। সাংস্কৃতিক রুচি তৈরিতে এই সংখ্যাগুলো উৎসবের একটি বেশ বড় দিক বলা যায়। মধ্যবিত্তের নানা সওদার সঙ্গে একটি ঈদসংখ্যা এই সময়ের বাংলাদেশের নতুন সংযোজন আর বলা যাবে না। এর একটি চরিত্র দাঁড়িয়ে গেছে।
উৎসব মানেই মানুষের মিলন মেলা। উৎসবের দিন সৌন্দর্যের দিন। এ দেশের উৎসব জাতীয় জীবনে মুকুটমণিস্বরূপ। এই উৎসবকে মোটা দাগে তিনটি বৈশিষ্ট্যে ভাগ করা যায়। যেমন— সাংস্কৃতিক উৎসব, জাতীয় দিবসের উৎসব, ধর্মীয় উৎসব। ঈদুল ফিতর আমাদের একটি ধর্মীয় উৎসব হলেও এই মিলℱন মেলা প্রাত্যহিক জীবনের দুঃখ-কষ্ট, আনন্দ-উচ্ছ্বাস সবকিছুকে গৎবাঁধা জীবনের ঊর্ধ্বে অন্যরকম আস্বাদনের আনন্দ উপভোগ করতে চায়। উৎসবের মূল সুর চিন্তার বাইরে সত্য, সুন্দর এবং শুভবোধের মধ্যে আপন চেতনাকে প্রসারিত করা।
আমরা যদি একে অন্যের পাশে, বিশেষ করে যারা অসহায় তাদের পাশে আরও উদাত্তভাবে দাঁড়াই, তাহলে উৎসব যে মানুষের মহামিলনকে মূর্ত করে দেয় মানবিকতার ছোঁয়ায় তার প্রকাশ হবে আরও ব্যাপক𒈔। উৎসবের রূপান্তর ঘটে, কিন্তু টিকে থাকে তার নির্যাসটুকু। উৎসব শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, উৎসব আবেগের, উৎসব পরিচয়ের এবং মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসার আরও বিস্তৃতকরণের। আমাদের অনেক উৎসবই অসাম্প্রদায়িক মানবপ্রীতির নিদর্শন। দুর্যোগের মেঘ কেটে🐬 চারদিকে আলোর বিচ্ছুরণ ছড়িয়ে পড়ুক। জয় হোক মানবতার।
লেখক : কথাসাহিত্যিক, সম্পাদক, সংবাদ প্রকাশ