• ঢাকা
  • রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Songbad Prokash

ইনস্টাগ্রাম

টুইটার


লিংকডইন

পিন্টারেস্ট

গুগল নিউজ


সব বিষয়ে সবাইকে কথা বলতে হবে?


মাহবুব রেজা
প্রকাশিত: আগস্ট ৪, ২০২১, ০৭:২৫ পিএম
সব বিষয়ে সবাইকে কথা বলতে হবে?

যতই দিন যাচ্ছে সরকারি দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা মন্ত্রী- নেতাদের লাগামহীন বক্তব্য ক্ষমতাসীনদের কর্মকাণ্ডকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিচ্ছে। কোন কোন ജক্ষেত্রে তাদের এ ধরনের কথাবার্তা সরকারের সাফল্যকেও ম্লান করে দিচ্ছে। এছাড়া তাদের জেনে, না জেনে যার যা খুশি বলার প্রবণতাও সরকারি দলকে নানা বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। পাশাপাশি নানা ক্ষেত্রে নীতিনির্ধারকদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার বিষয়টিও মোটা দাগে মানুষের মনে নেতিবাচক ধ্যানধারণার জন্ম দিচ্ছে।

সরকারি দলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের এ রকম সিদ্ধান্তহীনতা আর সমন্বয়হীনতার বিষয়টিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ভিন্নভাবে মূল্যায়ন করছেন। তারা মনে করছেন, মাঠে ময়দানে প্রায় মৃতবৎ বিএনপির অনুপস্থিতিতে ক্ষমতাসীনদের যেখানে আরাম-আয়েশে নিশ্চিন্তে দিন কাটানো উচিত ছিল, সেখানে রাজনীতির বাইরের নানা বিষয়ে ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকদের সমন্বয়হীনতা, সিদ্ধান্তহীনতা, বেফাঁস কথাবার্তা সরকারকে ঠেলে দিচ্ছে এক অনিশ্চয়তায়। গত দেড় বছরের অধিককাল ধরে চলতে থাকা করোনা পরিস্থিতিকে সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় সরকারের নানা রকম সিদ্ধান্তহীনতা, অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতিকে ছাপিয়ে কে কার আগে করোনা নিয়ে কথা বলবেন, তা নিয়ে সরকারের ভেতরের একটি মহলে তৈরি হয়েছে অবান্তর কথা বলার প্রবণতার, তারা এই পরিস্থিতিকে লেজেগোবরে অবস্থার সঙ্গে তুলনা করে বলছেন, ক্যামেরার সা♏মনে কথা বলার আগে তথ্য-উপাত্ত আর তাদের ওপর অর্পিত দায়-দায়িত্বের কথাও তাদের ভাবা উচিত। শুধু ক্যামেরা পেলেই দায়িত্বজ্ঞানহীন কথা বলতে হবে—এই প্রবণতা বাদ দিতে হবে।

সর্বশেষ সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি পর্যালোচনাসংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের দেওয়া এক বক্তব্যকে কেন্দ্র করে এ বিষয়টি আরও প্রকাশ্য হয়ে পড়ে। গত মঙ্গলবার সচিবালয়ে উক্ত সভার সভাপতিত্ব শেষে মন্ত্রী সাংবাদিকদের যা বলেছেন তা এ রকম, ১১ আগস্🐠টের পর বিধিনিষেধ শিথিল থাকবে এবং এ সময় ১৮ বছরের বেশি বয়সের কেউ ভ্যাকসিন গ্রহণ ব্যাতিরেকে বাইরে বের হতে পারবেন না। যদি কেউ এই অনিয়ম ভঙ্গ করে তাহলে তাকে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হবে। এ সময় স্বাস্থ্যবিধির আইন না মানলে সরকার প্রয়োজনে অধ্যাদেশ জারি করে শাস্তির ব্যবস্থাও করতে পারে বলে তিনি আভাস দেন।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী যখন সচিবালয়ে এ বক্তব্য রাখছিলেন, তখন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক তার পাশে উপস্থিত থাকলেও মন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে তাকে কোনোরকমের দ্বিমত প্রকাশ করতে দেখা য🀅ায়নি।

এরই মধ্যে মন্ত্রীর বক্তব্যটি গুরুত্বের সঙ্গে গণমাধ্যমে প্রচারিত হলে সব মহলে বিষয়টি ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ টেলিভিশন টক শোগুলোতে পক্ষ-বিপক্ষের আলোচকরা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর এই বক্তব্য এবং তার পাশে দর্শকের 🍸আসনে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বসে বসে নীরব শ্রোতার ভূমিকার সমালোচনা চলতে থাকে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর এই বক্তব্যে বিকেল থেকেই টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়। অন্যদিকে স্বাস্থ্য খাতের সংশ্লিষ্টরা মন্ত্রীর বক্তব্যে হতবাক বনে যান। তারা এ বিষয়ে পরিসংখ্যান দেখিয়ে বলছেন, বর্তমানে দেশে ১৮ থেকে ৬৪ বছর বয়সী নাগরিক রয়েছেন ১০ কোটি ৫৭ লাখ। আর ৬৫ বছরের বেশি বয়সী নাগরিক রয়েছেন ১ཧ কোটি ২৩ লাখ। সে ক্ষেত্রে টিকা দেওয়ার মতো মানুষের সংখ্যা মোট ১১ কোটি ৮০ লাখ। অথচ এ পর🔯্যন্ত দেশে প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন ৯১ লাখ ৮ হাজার, দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৪৩ লাখ ৫১ হাজার আর মোট টিকাগ্রহীতা ১ কোটি ৩৪ লাখ। তারা এই পরিসংখ্যানের বিপরীতে বর্তমানে দেশে সোয়া কোটি ভ্যাকসিনের মজুত আছে উল্লেখ করে ভ্যাকসিন সরবরাহে সংকটের চিত্র তুলে ধরে বলছেন, তাহলে আগামী সাত দিনের ভেতরে কীভাবে দেশের ১৮ ঊর্ধ্ব প্রায় সাড়ে ১০ কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনা সম্ভব!

অভিজ্ঞজনেরা বলছেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করার সার্বিক বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মনিটরিং করছেন। সেখানে এ খাতে সংশ্লিষ্টদের আরও দায়িত্ব নিয়ে কথা বলা থেকে শুরু করে কাজকর্ম করা উচিত। তারা করোনা মোকাবেলায় উল্টাপাল্টা, বেফাঁস কথাবার্তা কিংবা কাজকর্ম থেকে বিরত থেকে এই পরিস্থিতিকে একটি যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করে মানুষের পাশে থেকে কাজ করার 🧔আহ্বান জানান।

 

জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর বক্তব্যটি সরকারের শীর্ষ নীতিনির্ধার𓆏কদের মধ্যেও নানা ক্রিয়া- প্রতিক্রিয়ার তৈরি করে। জীবন-জীবিকার সমন্বয় সাধনে যেখানে সরকারের দিশেহারা অবস্থা তখন ♏সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে তার এই বক্তব্য পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে—এ রকম চিন্তায় নীতিনির্ধারকদের কপালে দুশ্চিন্তার রেখা ফুটে ওঠে। তারা এ বিষয়ে জনমনে যাতে ভুল মেসেজ না যায়, সে বিষয়ে গুরুত্ব দেয়। ফলে ওই দিন মধ্যরাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগ থেকে পাঠানো একটি বার্তায় বলা হয়েছে, ‘টিকা নেওয়া ছাড়া ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে কেউ বাইরে বের হতে পারবে না’ বলে যে সংবাদটি প্রচার হচ্ছে, তা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়নি। ওই বক্তব্যের যে তথ্য প্রচারিত হয়েছে, তা সঠিক নয় বলে দাবি করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য💞꧑সংশ্লিষ্টরা করোনা বিষয়ে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তদের আরও সতর্ক হয়ে কথাবার্তা বলার তাগিদ দেন।

 

লেখক: কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক

 

 

Link copied!