চৈত্রসংক্রান্তি বা নববর্ষ এ দুটোরই উৎস হচ্ছে লোকায়িত। বাঙালির সংস্কৃতির সঙ্গে কমপক্ষে ৪০০ বছর বা ৫০০ বছর মিশে আছে। নববর্ষের উৎপত্তি তো সবাই বলেন সম্রাট আকবরের সময় থেকে। চৈত্র মাসের শেষটা হচ্ছে চৈত্রসংক্রান্তি। এখন সেটা অঞ্চলভেদে নানা রকমভাবে, নানা ধর্মের মানুষ পালন করে। তবে বাঙালির কথা যদি বলি, সেখানে হিন্দু-মুসলমান সবাই অন্তর্গত। আবার মিলিতভাবেও কিছু কাজ তারা করে। যেমন ঢাকায় আমরা দেখি চৈত্রসংক্রান্তিতে ঘুড়ির উৎসব হয়, আরও নানা রকমের উৎসব হয়। কিন্তু স্থানভেদে সেটার ব্যতিক্রম ঘটে, সেগুলো নিয়ে যদি কেউ কাজ করে, তাহলে আমরা অনেক কিছু জানতে পারব।&nbs🐽p;
বাংলাদেশে পয়লা বৈশাখের মতো ধর্মনিরপেক্ষ উৎসব পৃথিবীর আর কোথাও আছে বলে আমার জানা নেই। এই উৎসবের আদিটাও লোꦡকায়িত। এই উৎসব গ্রামবাংলা থেকে উঠে আসা এবং চাষিদের কেন্দ্র করে এটা উঠে এসেছে। পরে উৎসবটি পরিব্যাপ্ত হয়েছে। এখন বৈশাখে কেন উৎ൲সব হলো, তা নিয়ে একটা গবেষণা চলতে পারে। কিন্তু বৈশাখের যে রুদ্র রূপ, রুদ্র প্রকৃতি, তার ওপর আবার বৃষ্টি-বাদল হলে প্রকৃতি শান্ত হয়। এই যে বৈচিত্র্য বা ধান কাটা, এসব কিছু মিলে রূপ নিয়েছে নববর্ষের উৎসব। আসলে তো হেমন্তে বা অগ্রহায়ণে যদি হতো, তাহলে হয়তো আরও আমরা উদযাপন করতে পারতাম।
বৈশাখ উৎসব বাংলাদেশে কিন্তু প্রতিরোধ ও প্রতিবাদও বটে। এভাবেই কিন্তু আমরা বৈশাখকে দেখেছি। বৈশাখ শুধু নববর্ষ নয়। আমাদ꧅ের দেশে বৈশাখ প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ দুটোকেই বোঝায়। রমনা রেসকোর্স বা আমাদের ভাষায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাকোড়তলায় যে নববর্ষ উদযাপন হয়, সেটাও তো ষাটের দশকের পাকিস্তান ঔপনিবেশিক আমলে সাংস্কৃতিক নিপীড়নের প্রতিবাদে হয়েছিল। মঙ্গল শোভাযাত্রা যেটা নাকি এখন একটা বিশ্ব-ঐতিহ্যের অংশ, এটিও কিন্তু হয়েছে এরশাদের স্বৈরশাসনের আমলে।
দেখা যাচ্ছে বৈশাখকে আমর♎া প্রতিবাদ হিসেবেও ব্যবহার করেছি, অন্যায়ের প্রতিরোধ হিসেবেও ব্যবহার করেছি, আবার নববর্ষের উৎসব হিসেবেও। বৈশাখটি এমন একটি বিষয় হয়েছে এখন, যা হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান নয়,🌳 এটা হয়ে উঠেছে বাঙালির উৎসব। কেবল আমাদের বাংলাদেশের বাঙালি না, পৃথিবীজুড়ে বাঙালির একটা উৎসবে পরিণত হয়েছে। এবং এটা টিকে থাকবে এই কারণে যে এটার একটা অর্থনৈতিক ভিত্তি তৈরি হয়েছে।
লেখক: ইতিহাসবিদ