প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদত্যাগের নির্দেশ পাওয়া প্রতিমন্ত🌠্রী ডা. মুরাদ হাসানেꦉর সাম্প্রতিক কেলেঙ্কারিটি নারী অবমাননার জায়গা থেকেই নয়, বরং আরো বেশ কিছু ইস্যুতে বিষয়টি খতিয়ে দেখার অবকাশ আছে। এক্ষেত্রে প্রতিমন্ত্রী পদ থেকে তার সরে যাওয়ার মধ্য দিয়েই ব্যাপারটার সমাধান হয় না। কারণ তার কৃতকর্ম অত্যন্ত গর্হিত, এবং সমাজে তার সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক ফলাফল বয়ে আনতে পারে।
দুই তিন দিন আগে আমরা মুরাদ হাসানকে একটি ভুঁইফোড় ফেসবুক পেইজে লাইভে আসতে দেখি। লক্ষণীয় যে এই ধরনের অনলাইনগুলোর কাজই হলো সুরসুরি দিয়ে লোক হাসানো অথবা চরম অশ্লীলতা ছড়িয়ে দেয়া। এদের কেউ কেউ ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি করে। আবার কেউ কেউ রসালো ইন্টারভিউ নিয়ে ভাইরাল হবার ধান্দায় থাকে। আলোচিত পেইজটি ঠিক এই রকমই একটি ফেসবুক পেইজ। এরা মুরাদ হাসানকে ন♚িয়ে আসে এবং আলাপ তোলে বিরোধীদলকে🧸 নিয়ে।
আমাদের রাজনীতিতে পরস্পরকে নিয়ে অসভ্য মন্তব্য করা, বক্তব্য দেওয়া একটি সংস্কৃতিতে পরিণত হয়ে💝ছে। এই কালচার এতদিন ছিল নেতানেত্রীদের ঘিরে। ক্রমে তা বংশানুক্রমে নিচের দিকে নেমেছে। এবং দুঃখজনক হলো, জাইমা রহমান তারেক জিয়ার মেয়ে হলেও তিনি রাজনীতিতে আসেননি, তবু তিনি রক্ষা পান নাই। রাজনীতি থেকে শতহস্ত দূরে থেকেও এই সদ্য তরুণ মেয়েটিকে বাংলাদেশের রাজনীতির অশ্লীলতা-চর্চার ভেতরে পড়তে হয়েছে। অবশ্য এদেশে জন্মালে এ ধরনের অবস্থার শিকার হওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। যেমন আমরা যারা সাধারণ মানুষ, তারাও বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বলি হই, অশ্লীল আক্রমণের শিকার হই, 🅰সেক্ষেত্রে আমাদের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকা, না থাকাও ম্যাটার করে না। আমাদেরকে যে কেউ ইচ্ছেমত যা খুশি তা উপাধি দিতে পারে, আর নারী হলে তো মুহুর্তেই তাকে এর তার ‘শয্যাসঙ্গিনী’ কিংবা ‘মক্ষীরানী’ হিসেবে প্রচার করতে পারে।
যাই হোক, মুরাদ প্রসঙ্গে আসি। মুরাদ হাসান জাইমা, তারেক জিয়া, খালেদা জিয়াকে নিয়ে যেসব মন্তব্য করেছেন তা সকলেই শুনেছেন। এইসব মন্তব্যের মূল টার্গেট নারী ও ‘সতীত্ব’ কনসেপ্টের ভেতর দিয়ে নারীকে মাপার সমাজের সেই অসভ্য মানসিকতা, যা দিয়ে তারা সব নারীকেই মাপতে এবং বাঁধতে চায়। এবং অবশ্যই আঘাতও করতে চায়। এ হলো শ্রেণিসমাজে পুরুষের সেই প্রাচীন পদ্ধতি, যা দিয়ে তারা গর্ভের সন্তানের ঔরস বিষয়ে নিশ্চিত হয়। সন্তানটি আ🐬সলেই তার তো? কি অসম্ভব এক মানসিক ইনসিকিউরিটি পুরুষের, পুরুষের সমাজের! আর তার শিকার যুগে যুগে প্রতিটি নারী।
ডা. মুরাদ ওই টকশোতে চরম বর্ণবাদী আচরণও করেছেন। ‘কালো মানুষ’ বুঝাতে শব্দ ব্যবহার করলেন- কাইল্লা, নিগ্রো। এই সভ্য সমাজে এই ধরনের লোক এত বড় পদে টিকে ছিল, বা এখনো হয়তো💜 বহু এরকম লোক আছে, বাইরের জগতে এটি যদি জানাজানি হয়, বাংলাদেশের ‘ভাবমূর্তি’ কোথায় নামবে, তা নিয়ে কি সংশ্লিষ্ট♉রা চিন্তা করেছেন কিছু? নাকি এখনো গায়েই লাগছে না!
নারীদের নিয়ে নোংরা কথা বলে, ইঙ্গিত করে, যে চরম সেক্সিষ্ট মিসোজিনিস্ট আচরণ প্রকাশ করেছেন ডা. মুরাদ সেটি রীতিমত শাস্তিযোগ্য অপরাধ। উন্নত দেশে এ ধরণের বক্তব্যের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা হতে পারে। শাস্তি হতে পারে অভিযুক্তের। মুরাদের এই লাইভটি🔴 প্রচারের পরদিনই ফাঁস হলো তার টেলিফোন আলাপ। কে ফাঁস করলো, কীভাবে হলো- তা অজানা। তবে এই কল রেকর্ডের ভেতর দিয়ে আমরা এক কুৎসিত অন্ধকার জগৎকে আবিষ্কার করলাম, যা হয়তো আমরা আগে আন্দাজ করতাম, কিন্তু সে যে এতটা ভয়াবহ কুৎসিত তা হয়তো আমাদের অনেকেরই চিন্তারও বাইরে ছিল। সিনেজগতের নারীরা চরম নিরাপত্তহীনতায় থাকেন, সেটি আমরা কিছুটা জানি। অনেক কিছু অনুমানও করি। ক্ষমতাধরদের লালসা ও লোভের মুখে পড়ে বহু নায়িকা অভিনেত্রী মডেলকে চিরতরে চলে যেতে হয় এ জগৎ ছেড়ে। অনেককে প্রাণও বিসর্জণ দিতে হয়, যার উদাহরণ মডেল কন্যা তিন্নী। ডা. মুরাদের সাথে নায়িকা মাহিয়া মাহীর কথোপকথনের কল রেকর্ড আমাদের শিউরে উঠতে 🅺বাধ্য করেছে। পুরুষের ফ্যান্টাসি, ডার্টি টক ইত্যাদি যে কতটা বীভৎস হয়ে উঠতে পারে, তাও আবার ফোনে, এবং যিনি করছেন তিনি আবার সরকারের দায়িত্বে থাকা একজন প্রতিমন্ত্রী- এই ভয়াবহ ঘটনাটা আমরা অনেকেই হজম করতে পারিনি। আমরা চমকে উঠেছি। থমকে গিয়েছি। পুরুষের যৌন অবদমন কিংবা যৌন স্বেচ্ছাচার দুটোই বীভৎস হয়ে ওঠে যদি পুরুষটি হয় ক্ষমতাবান। যদি পুরুষটি হয় দুর্নীতিবাজ।
টেলিফোনে ডা. মুরাদ নায়িকা মাহীকে রীতিমতো যৌন হয়রানি করেছেন। কারণ ওপাশ 🥂থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল মাহী কথা বলতে ইচ্ছুক নন, সোনারগাঁও হোটেলে যেতে আরো বেশি অনিচ্ছুক। তাকে🌳 রীতিমতো জোর জবরদস্তি করছিলেন মুরাদ। নোংরা কথা ও গালি দিয়ে মেয়েটিকে আঘাত করছিলেন। হুমকি দিচ্ছিলেন। সেই হুমকির বর্ণনা এত অশ্লীল যে আমরা হতবাক হয়ে যাই! একজন প্রতিমন্ত্রী একজন নায়িকাকে ধর্ষণের হুমকি দেন ফোনে, এও সম্ভব? একটি সভ্য দেশে? গণতান্ত্রিক দেশে?
মুরাদ তার ফোনালাপে সোনারগাঁও হোটেলে নিজস্ব স্যুইট থাকার কথা বলেছেন। বলেছেন তিনি প্রতিমন্ত্রী, তাই এসব সুবিধা তার আছে। তাই কি? এই গরীব দেশের একজন প্রতিমন্ত্রীকে কি সোনারগাঁও হোটেলে স্যুইট রাখার সুবিধা দেয়া হয়? আমরা🔯 এটা জানতে চাই। মুরাদ এই কথা বলার সময় ব্যাঙ্গাত্মক ভঙ্গিতে নিজেকে প্রজাতন্ত্রের চাকর বলছিলেন। ঠিক যেমন আমরা সিনেমায় ভিলেনকে করতে দেখি। এ যেন জীবন্ত এক ভিলেন! কিংবা তার চেয়েও ভয়ানক। বারবার মাহীকে তিনি র্যাব পুলিশ দিয়ে ধরে নিয়ে আসার হুমকিও দেন। এগুলো কথা উচ্চারণ করাও একজন দায়িত্বশীল ব্য♍ক্তির জন্য নিষিদ্ধ। নাকি এই ব্যক্তিরা সব ধরনের নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকেন?
আমরা ডা. মুরাদ হাসানের শাস্তি দাবি করি। তার বিরুদ্ধে ভয়াবহ সব অভিযোগ এসেছে। মাহী এবং ইমন দুইজন🌌ই ঘটনা সত্য, তা বলেছেন। তাদের উপর জবরদস্তির কথা জানিয়েছেন। এই চরম পুরুষতান্ত্রিক, লোভী, নীতিহীন ব্যক্তির বিরুদ্ধে যথাযথ প্রক্রিয়ায় মামলা দায়ের হওয়া জরুরি। শুধুমাত্র পদ কেড়ে নিলেই শাস্তি হয় না। তার উপরে তিনি এখনো সংসদ সদস্য আছেন। এই ধরণের অন্যায় অসভ্যতা করবার পরও যদি তিনি আইনগতভাবে বিচারের আওতার বাইরে থেকে যান, তাহলে হাজারো মুরাদ হাসান, যারা লুকিয়ে আছে আপাতত, তাদের সাহস ও দম্ভ বেড়ে যাবে। স্পর্ধা আকাশ ছোঁবে। ভবিষ্যতে তারা চলে যাবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তাই দ্রুত এই মুরাদকে বিচারের আওতায় এনে সঠিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করুক সরকার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমার আহ্বান, তিনি এই চরম অন্যায়কে যেন মেনে না নেন। ডা. মুরাদের যেন উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত হয়।
লেখক: সম্পাদক, ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টর