ভারতীয় ‘পিংক’ চলচ্চিত্রে দেখা যায় যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘না মানে না’, এই বক্তব্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। ছবিটিতে অসাধারণ এক আইনজীবীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন অমিতাভ বচ্চন। চলচ্চিত্রের আদালতে না হয় অমিতাভ 🌠বচ্চনকে পাওয়া গেছে, কিন্তু বাস্তবে বিচারকের চেয়ারে যে মানুষটি বসে আছেন, তিনি নিজেই যদি হন জেন্ডার অসংবেদনশীল, এবং পুরুষতন্ত্রের পক্ষের একজন মানুষ, তাহলে সেই আদালত থেকে ন্যায়বিꩵচার পাওয়া কি আদৌ সম্ভব?
সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ, নানান প্রমাণ আদালতের সামনে উপস্থাপনের ভিত্তিতে আদালত রায় দিয়ে থাকেন। কিন্তু রায় দিতে গিয়ে রায়ের ভাষা যদি হয় অপেশাদার, জেন্ডার অসংবেদনশীল এবং পুরুষཧতান্ত্রিক হয় তাহলে&n🎃bsp;ধর্ষণের বিচার চাওয়ার জন্য, সাধারণ মানুষের আর কোথাও যাওয়ার জায়গা রইল না।
অত্যন্ত মর্মাহত হয়ে আজ লিখছি। বনানীতে রেইনট্রি হোটেলে দুই তরুণীর ধর্ষণ মামলায়, আদালত আসামিদের বেকসুর খালাস দেন। এই বিষয় নিয়ে কোনো মন্তব্য নেই। কিন্তু রায় দেওয়ার সময়, বিভিন্ন মিডিয়ার ভাষ্য অনুযায়ী, আদালত বলেছেন, মেডিকেল পরীক্ষায় দুই তরুণী যেহেতু আগে থেকেই যৌন সম্পর্কে অভ্যস্ত, এতে প্রমাণিত হয় যে, তারা রেগুলার শারীরিক সম্পর্ক পারফর্ম করে। তাই তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থাকে। সাক্ষ্য আইন ১৮৭২ অনুযায়ী ফৌজদারি মামলায় চরিত্র বিবেচনা প্রাসঙ্গিক। কিন্তু ভালো চরিত্র বলতে, নারীদের পূর্ব যৌন অভিজ্ঞতা থাকা না থাকার প্রশ্ন কেন আসে, বুঝলাম না। তার মানে, আদালতের এই বক্তব্যে কি এটা প্রমাণিত হয় না যে, আগে 🦋যৌন অভিজ্ঞতা থাকলে পরে সেই নারীর সঙ্গে যদি ধর্ষণ ঘটে, তবে তা জায়েজ? তার মানে ▨বিভিন্ন সময়ে গৃহবধূ ধর্ষণের যে মামলা দায়ের হয়, আদালতের ভাষ্য অনুযায়ী সেগুলোতেও সমস্যা আছে? তবে কি পূর্ব যৌন অভিজ্ঞতা থাকার জন্য, তাদের সঙ্গে ঘটা ধর্ষণ জায়েজ?
নাকি এই বক্তব্যের মাধ্যমে আদালত এটা বোঝাতে চাচ্ছেন য﷽ে, নার🍃ী যদি অবিবাহিত থাকে, এবং অবিবাহিত থাকার পরও যৌন সম্পর্কে লিপ্ত অভ্যস্ত থাকে, তবে তাদের চরিত্র খারাপ, এবং তাই তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থাকে?
ধর্ষণে ভিকটিমের সম্মতিকেন্দ্꧋রিক কোনো আলোচনা রায়ে করা হয়নি। উল্টো আদালত বলছেন, “২২-২৩ বছরের একজন লেডি, এক বেডে চারজন একত্রে শুয়েছিল, মদ খেল, ড্যান্স করল—♕এটা জেনেও অহেতুক এই প্রতিবেদন দিয়ে কোর্টের টাইম কনজিউম করল।”
কেউ মদ খেল কি না, কেউ ডান্স করল কি না, এমনকি কেউ ⛦বেডে পাশাপাশি শুয়ে রইল কি না, সেগুলোর কোনোটাই ধর্ষণ হয়নি তা প্রমাণ করে না এবং সেগুলোর কোনোটাই ধর্ষণকে জা💟য়েজ করে না। মদ খেয়ে ডান্স করে পাশাপাশি শুয়ে থাকার পরও কোনো নারী যদি যৌন সম্পর্ক করতে সম্মতি না দেয়, এবং তারপরও যদি ব্যক্তি জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে, তবে তা ধর্ষণ।
ধর্ষণ মামলায়, ৭২ ঘণ্টা পর মেডিকেল পরীক্ষায় আলামত পাওয়া দুরূহ হয়ে পড়ে, কিন্তু তার মানে এই না যে, একজন ভুক্তভো🏅গী, একজন ধর্ষণের শিকার ভিকটিম তিনি মামলা দায়ে💯র করতে পারবেন না।
আদালতের এই ধরনের বক্তব্য, পুলিশ প্রশাসনকে খোলাখুলি পরামর্শ দিয়ে দিয়েছে, মামলা নিতে অনীহা প🙈্রকাশ করার। অথচ পুলিশ মামলা নিতে বাধ্য। আদালতে তথ্য প্রমাণ পেতে সমস্যা হয়, সময় লাগে বলে, নিম্ন আদালত কি এ রকম সরাসরি ৭২ ঘণ্টার পর ধর্ষণের মামলা না নিতে পুলিশকে আদেশ/নির্দেশ/উপদღেশ/সুপারিশ কিছু দিতে পারে?
আমরা সাসটেইনেবল ডেভলপমেন্ট গোলে, যেখানে ন্যায়বিচার 🦄পাওয়ার তথা 𒉰এক্সেস টু জাস্টিসের জন্য ক্রমাগত আন্দোলন করছি, লড়াই করে যাচ্ছি, সেখানে, এই আলোচিত মামলায়, এ রকম একটি রায়, এবং রায়ের বক্তব্য, ধর্ষণের শিকার ব্যক্তির বিচার পাওয়াতে বাধা প্রয়োগ করবে।
আমরা ক্রমাগত বলে যাচ্ছি আদালত প্রাঙ্গণ যেন আরও বেশি নার👍ীবান্ধব হয়ে ওঠে। আমরা বলছি, বিচার বিভাগ যেন আরও বেশি জেন্ডার সেনসেটিভ হয়ে ওঠে। সেখানে, আদালতের রায়ে এ রকম বক্তব্য, অত্যন্ত আপত্তিকর।
বিশেষ সম্পর্কে, ব্যক্তির সঙ্গী যদি না বলেন, তার মানে তার সম্মতি নেই। যদি হ্যাঁ বলেন, তার মানে সম্মতি আছে। এমনকি কোনো যৌনকর্মীও যদি যৌন সম্পর্কের উদ্দেশ্যে আসে, এবং আসার পর যদি তিনি মনে করেন সম্পর্কে তিনি যাবেন না, তিনি না করেন, তখন যদি তার সম্মতি উপেক্ষা করে জোরপূর্বক তাকে ধর্ষণ করা হয়, তবু সেটা ধর্ষণ। সে ক্ষেত্রে, আদালতের এমন বক্তব্য যে, আগে শারীরিক সম্পর্কে অভ্যস্ত বিধায় তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, এটা অসম্ভব র🍎কমের অসংবেদনশীল বক্তব্য।
আদালতের সময় গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু আদালতের সময় কি মানুষের জীবনের চাইতে গুরুত্বপূর্ণ? মানুষ দিন শেষে বলে, আই উইল সি ইউ ইন কোর্ট। কারণ, সাধারণ নাগরিক বিশ্বাস করে, যদি সরকার তার কথা না শোনে, যদি প্রশাসন তার কথা না শো♋নে, তবে কোর্ট তার কথা শুনবে। জনগণের আদালত এবং বিচার বিভাগের প্রতি এখনো আস্থা আছে। কিন্তু সেই আস্থা ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে যায়, যখন কোনো বিজ্ঞ বিচারক এমন অসংবেদনশীল মন্তব্য করেন। বিচারকের পদে যে ব্যক্তিই বসুক না কেন, তার অবস্থান নিরপেক্ষ হতে হবে, এবং তার মূল ধর্মই হবে, ন্যায়বিচার করা। কিন্তু এই বনানী রেইনট্রি ধর্ষণ মামলায়, বিজ্ঞ আদালত রায় দেওয়ার পাশাপাশি যে জাজমেন্টাল বক্তব্য দিয়েছেꦍন, অভিযোগকারীর সেক্সুয়াল স্ট্যাটাস নিয়ে, তা অত্যন্ত আপত্তিকর। পাশাপাশি ৭২ ঘণ্টা পার হলে ধর্ষণের মামলা পুলিশকে না নিতে যে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, তা অগ্রহণযোগ্য ও আইন পরিপন্থী। নিম্ন আদালতের একজন বিচারক এ রকম আদেশ দিতে পারেন না।
আমরা বিচারক হিসেবে নিরপেক্ষ মানুষ চাই। পুরুষতন্ত্র বা ধর্মীয় মৌলবাদ সমর্থন করে এ রকম মানুষ বিচার বিভাগে অবস্থান করা মানে, নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সুবিচার পাওয়া ꦦথেকে বঞ্চিত হওয়া।
লেখক: আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী