কোনো চিকিৎসায় ভুল হয়েছে কি, হয়নি, তা সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে একমাত্র ডাক্তারই সিদ🍸্ধান্ত দিতে পারেন। একজন ডাক্তারের ভুল আরেকজন ডাক্তারই ধরতে পারবেন। প্রায়ই আমরা খবরে দেখি, অপারেশন করতে গিয়ে পেটের ভেতর তুলা, গজ, সেলাইয়ের সুঁইসুতা, কাচি রেখে দিয়েই সেলাই করে রোগী রিলিজ দেওয়া হয়েছে । রোগী গিয়েছেন ডান কিডনি অপারেশন করাতে, ডাক্তার করেছেন বাম কিডনি অপারেশন। এগুলো যে ভুল, তা বুঝতে একজন সাধারণ মানুষকে অ🦹বশ্যই ডাক্তার বা রকেট সায়েন্টিস্ট হতে হয় না। এসব ক্ষেত্রে কখনো কি কোনো ডাক্তারদের বিচার বা শাস্তি হয়েছে?
ডাক্তারদের আরও কিছু টেকনিক্যাল ভুল, যা হয়তো আমরা সাধারণ মানুষ বুঝতে পারি না। উপাꦬয় না দেখে বিদেশে ট্রিটমেন্ট নিতে গিয়ে ধরা পড়ে দেশের চিকিৎসা ছিল সম্পূর্ণ ভুল। ততদিনে আর্থিক, মানসিক ক্ষতির পাশাপাশি রোগীর অঙ্গহানি বা শারীরিক বড় ক্ষতি হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে কার কাছে এর বিচার বা প্রতিকার চাইতে হবে, সাধারণ মানুষ জানে না। ডাক💃্তাররা নিজেরা কখনো এগুলোর বিচার বা শাস্তি চাইবেন না, জানা কথা। এইখানে ডাক্তাররা সব একজোট। একই পেশার কেউ অন্যায় করলেও সবাই একসঙ্গে মিলে সাফাই গান। সাধারণ মানুষের দাঁড়াবার কোনো জায়গা নেই। তখন বিচারহীনতার সংস্কৃতিতে তাদের হাতে একটাই অপশন মারধর, হাসপাতাল ভাঙাভাঙি।
ডাক্তারদের দায়বদ্ধতা, অন্য যেকোনো বিষয়ের (ইঞ্জিনিয়ার, কৃষি ইত্যাদি) বা অন্য যেকোনো পেশাজীবীদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। আজ আমি যে পেশায়, তাতে আমার কোনো ভুল বা দায়িত🍬্বহীনতায় কারো জীবন মৃত্যু নিয়ে টানাটানি লাগবে না। হ্যাঁ, সমাজে রাষ্ট্রে এর বিরূপ প্রভাব অবশ্যই থাকবে। কিন্তু কারো জীবন মরণ সমস্যা হবে না। সুতরাং অন্যদের দুর্নীতি, দায়িত্বে অবহেলার সঙ্গে, ডাক্তারের কাজের তুলনা করা মানে ডাক্তাররা নিজেরাই নিজেদের সেকেন্ড গডের স্থান থেকে নিচে নামিয়ে ছোট করছেন।
সম্প্রতি সেন্ট্রাল হাসপাতালের ঘটনায় কিন্তু খোদ ডাক্তাররাই আশ্চর্যজনকভাবে নিরব একটি অবস্থান নিয়েছেন। যারা একটু মুখ খুলছেন, তারা বারবার ডাক্তার মুনার মুক্তি চেয়েছেন। কিন্তু মূল অপরাধীর বিচার বা শাস্তি দাবি তারা করেননি। বরং বারবার রোগীদের দোষ বর্ণনায় ব্যস্ত হয়ে কার যেন আইওয়াশ করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন! বারবার তারা ইনিয়ে বিনিয়ে বলার চেষ্টা করছেন, ‘যা কিছু চুরি হয়, গিন্নি বলেন কেষ্টা ব্যাটাই চোর’—সব দোষ ওই নন্দ ঘোষ রোগীদের! হ্যাঁ, রোগীদেরই তো দোষ, তারা অসুস্থ হয়, আর অসুস্থ হয়ে পালে পালে ডাক্তারদের কাছে যায়। অথচ রোগীদের এত অসচেতনতার জন্য কি ডাক্তারদের সিস্টেমের দায় নেই? রোগীদের সচেতন করতে ডাক্তাররা সম্মিলিত হয়ে কবে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?
চিকিৎসার মতো মৌলিক চাহিদাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে স্বাস্থ্যসেবার অসুস্থ সিস্টেমের সঙ্গে ডাক্তাররা অভিযোজন করে নিয়েছেন। কেউ এসব নিয়ে প্রতিবাদ করলে, তার চিকিৎসা করাবেন না বলে অমানবিক হুমকি দেন। অথচ কাউকে চিকিৎসা না করানো ডাক্তারদের এথিক্স বিরোধী। মানবসেব⭕ার শপথবাক্য পাঠ করেই ডাক্তার হতে হয়। এখন ডাক্তাররা শুধু বড় বড় ডিগ্রি অর্জনই করেন আর নামের শুরুতে ডা. ও নামের শেষে নানা রকম এবিসিডি যুক্ত করে আত্মতৃপ্তিতে ভোগেন। কিন্তু হিপোক্রিটাসের সেই শপথবাক্য ‘অতঃপর আমি শপথ গ্রহণ করছি যে জেনেশুনে এবং ধর্মত রোগীর ক্ষতি হয় এমন কোনো ওষুধ দেব না। শত্রু-মিত্রভেদে সব রোগীকে সমান মনপ্রাণ দিয়ে চিকিৎসা করব এবং তার মানসিক দুশ্চিন্তা লঘু করার জন্য সব সময় ভরসা দেব।’ তারা সম্ভবত পাঠ করেন না, পাঠ করলেও অন্তরে ধারণ করেন না। জানি ♉না, কেন তারা চিকিৎসকের মতো মহান পেশা বেছে নিয়েছেন!
ডাক্তারদের বোঝা উচিত তাদের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা অনেক কম। রোগীরা এখন এক ডাক্তারকে দেখিয়ে এসেই গুগলে কিংবা আরেক ডাক্তারের কাছে প্রেসক্রিপশন ক্রসচেক করেন। অর্থাৎ ডাক্তারদের ওপর আর বিশ্বাস নেই। এরজন্য কে/কারা দায়ী? রোগীরা? এটা জেনে রাখা ভালো যে, বাংলাদেশের ডাক্তাররা শত ভালো চিকিৎসা করলেও তাদের আজ আর কেউ মন থেকে বিশ্বাস করেন না। এজন্য অনেক ডাক্তারের আক্ষেপ, রোগীরা তাদের সম্মান করেন না। এখন আপনি কি জোর করে মানুষের সম্মান শ্রদ্ধা আদায় করতে পারবেন? পারবেন না। যাদের সামর্থ্য রয়েছে তারা বিদেশে চিকিৎসার জন্য চলে যান। আর আমরা যারা সাধারণ, যাদের সামর্থ্য নেই, তারা দেশের ডাক🌠্তারদের কাছে যাই বটে, তবে প্রচণ্ড অবিশ্বাস আর আস্থাহীনতা নিয়েই যাই। যেতে বাধ্য হই। নিজেদের ডাক্তারদের হাতে এক রকম সঁপে দিই। এই আস্থাহীনতার জায়গা থেকে রোগীদের উদ্ধার করার দায় আসলে কার?
আজ ডাক্তাররা সেন্ট্রাল হাসপাতালের দায়িত্বহীনতা, প্রতারণার দায় এড়াতে ভিক্টিম ব্লেমিং করে বলছেন যে, সুমন কেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক🦩্স থেকে অসুস্থ স্ত্রী নিয়ে সেন্ট্রাল হাসপাতালে চলে এসেছিলো? এর জবাব হচ্ছে, আস্থাহীনতার জায়গা থেকেই ভুক্তভোগী সুমন সেন্ট্রালে এসেছিলো। কিন্তু এরপর সেন্ট্রাল হাসপাতাল যা যা করেছে, তা যে প্রতারণামূলক অন্যায় ছিলো, এটা ডাক্তাররা স্বীকার করছেন না। একজন রোগী মারা যেতেই পারেন। জন্মালে মারা যেতে হয়। কিন্তু তাই বলে হাসপাতালে কর্তৃপক্ষ বা ডাক্তারের দায়িত্বে অবহেলা, গাফিলতি কি গ্রহণযোগ্য? এখন আরো জানা𝔍 যাচ্ছে, ডা. সংযুক্তা সাহা ১৩ বছর ধরে বিএমডিসির নিবন্ধন রিনিউ করেননি। এ তথ্য জানার জন্য একজন মা ও তার নবজাতকের মৃত্যু পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। না জানি, আরও কতো ডাক্তারের এরকম নিবন্ধন নেই বা রিনিউ করেননি। জানি, এসব নিয়েও ডাক্তাররা মোটেও লজ্জা পাবেন না। তারা আবারও রোগীদের দিকে আঙ্গুল তুলবেন। উলটো হুমকি দিতে আসবেন, চিকিৎসা করবেন না! এটুকুই হয়তো তাদের ক্ষমতা! কিন্তু তবুও একটা অসুস্থ সিস্টেমকে পাল্টানোর কোনো পদক্ষেপ তারা নেবেন না।
লেখক : শিক্ষক ও লেখক।