• ঢাকা
  • রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Songbad Prokash

ইনস্টাগ্রাম

টুইটার


লিংকডইন

পিন্টারেস্ট

গুগল নিউজ


ঘূর্ণিঝড়

সাহসী কৃষকদের যেন ভুলে না যাই


প্রভাষ আমিন
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৭, ২০২২, ০৩:৪৬ পিএম
সাহসী কৃষকদের যেন ভুলে না যাই

যতটা আশঙ্কা করা হয়ে♈ছিল, ততটা ভয়ংকর হয়নি ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে হানতে সিত্রাং অনেকটাই দুর্বল হয়ে গিয়েছিল। আর অল্প সময়েই তা বাংলাদেশ অতিক্রম করে যায়। তাই ক্ষয়ক্ষতি আশঙ্কার চেয়ে অনেক কম হয়েছে। কম হলেও যা হয়েছে, তাই লাখো মানুষকে নিঃস্ব করে দিয়েছে, তছনছ করে দিয়েছে উপকূলীয় এলাকা। এমনকি সিত্রাংয়ের ক্ষতচিহ্ন এখন রাজধানীজুড়েও। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশকে প্রতিবছরই ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলা করতে হয়। কখনো কখনো তা সিডর বা আয়লার মতো প্রলয়ংকরী হয়, কোনো বছর ছোট ঘূর্ণিঝড় হয়। এবার যဣেমন সিত্রাং প্রলয়ংকরী হতে গিয়েও শেষ পর্যন্ত দুর্বল হয়ে গিয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ে নানা রকম ক্ষতি হয়। তবে অপূরণীয় ক্ষতি হলো মানুষ🧔ের প্রাণ। কারণ, কোনো কিছুর বিনিময়েই একজন মানুষেরের প্রাণ দেওয়া যায় না। একসময় ঘূর্ণিঝড় হলে লাখ লাখ মানুষ মারা যেত। যথাযথ পূর্বাভাস, আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তরসহ নানা প্রস্তুতিমূলক নানা ব্যবস্থার কারণে এখন মানুষের প্রাণহানির সংখ্যা কমে এসেছে। এত কিছু্র পরও এবার মোট ৩৮ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। ‘৩৮’ আমাদের কাছে নিছকই একটা সংখ্যা। কিন্তু যে ৩৮ জন মানুষ মারা গেছেন, তাদের পরিবারের কাছে তারাই সবকিছু। প্রাণহানির সংখ্যা কমিয়ে আনা গেলেও ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি, ধরে নিচ্ছি কখনো যাবেও না। তাই বাংলাদেশের মানুষকে ঝড়-জলোচ্ছ্বাস-বন্যা মোকাবেলা করেই টিকে থাকতে হয়, টিকে থাকতে হবে। আর এই টিকে থাকতে থাকতে বাংলাদে𒈔শে দুর্যোগ মোকাবেলার কৌশল শিখে গেছে। বছরের পর বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে টিকে থাকার সামর্থ্য এবং সাফল্য পেয়েছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। 

আশঙ্কার চেয়ে কম হলেও সিত্রাং কিন্তু ক্ষতি একেবারে কম করেনি। ৩৮ জন মানুষের প্রাণহানির কথা তো আগেই বไলা হয়েছে। এই ক্ষতির কোনো পূরণ নেই। কিন্তু সম্পদের ক্ষতিও কিন্তু কম হয়নি। বিভিন্ন পত্রিকার প্রকাশিত খবর বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অন্তত ১০ হাজার বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে, ৫৯ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে, ভেসে গেছে এক হাজার মাছের ঘের, ভেঙেছে অনেক বাঁধ। গবাদিপশুর ক্ষতির চিত্রটা আম♋রা এখনো জানি না। আমার ধারণা, সত্যিকারের ক্ষতির চিত্র পেতে আমাদের আরও অপেক্ষা করতে হবে। 

সমস্যা হলো ঘূর্ণিঝড়ের আগে এবং ঘূর্ণিঝড়ের সময় আমাদের সবার যতটা মনোযোগ থাকে, ঝড় থেমে গেলে আর তা থাকে না। চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মিডিয়াও ভুলে যায় ঝড়ের কথা। কিন্তু ঝড়টা যাদের ওপর দিয়ে যায়, তাদের বছরের পর বছর সেই ঝড়ের ক্ষত বয়ে বেড়াতে হয়। আয়লা বা সিডরের ক্ষত এখনো পুরোটা যায়নি। সিত্রাং চলে গেলেও যে ১০ হাজার বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে, তাদের অনেককে এখনো খোলা আকাশের নিচে থাকতে হচ্ছে। মিডিয়ায় কিন্তু তাদের খবর আর পাবেন না আপনি। সরকার হয়তো কিছু টিন দেবে। কিন্তু শুধু টিনে তো আর ঘর বাঁধা যায় না। সঙ্গে আরও অনেক কিছু লাগে। তবে ঘূর্ণিঝড়ের সবচেয়ে বড় আঘাতটা যায় কৃষির ওপর দিয়ে। মাঠে মাঠে এখন শীতের সবজি আর আমন ধান। যেসব এলাকায় সিত্রাং আঘাত হেনেছে, সেসব এলাকার শীতের সবজি পুরোটাই গেছে, আমন ধানের ক্ষতিও কম নয়। সিত্রাংয়ের পর ভোলার এক প্রান্তিক কৃষক জামাল হোসেন এটিএন নিউজের টক শোতে বলেছেন, তিনি এক কানি জমিতে আমন চাষ করেছিলেন, যার ৮০ ভাগই নষ্ট হয়ে গেছে। সামগ্রিক বিবেচনায় সিত্রাংয়ের ক্ষতি হয়তো বেশি নয়। তবে জামাল হোসেনের মতো প্রান্তিক কৃষকদের তো সিত্রাং একেবারে নিঃস্ব করে দিয়ে গেছে। প্রতিবছরই এমন ঘূর্ণিঝড় বা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বা ফসলের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া কৃষকের কান্না শুনে আমি শঙ্কিত হই, ভাবি এই কৃষক কীভাবে আবার ঘুরে দাঁড়াবেন। কিন্তু আমার ভয়ের চেয়ে তাদের সাহস অনেক বেশি। জামাল হোসেনরা আসলে জাদু জানেন। তারা ঠিকই♑ আবার মাঠে যান, নতুন করে আবার স্বপ্ন বোনেন। লড়াই করে টিকে থাকার শক্তিটা তাদের সহজাত। 

মিডিয়া যতই ভুলে যাক, সরকার যেন এই সাহসী কৃষকদের ভুলে না যায়♎, যেন সর্বোচ্চ সামর্থ্য ও আন্তরিকতা নিয়ে যেন তাদের পাশে দাঁড়ায়। যার ঘর ভেঙে গেছে, সরকার যেন তার ঘরটা তুলে দেয়। যার ফসল নষ্ট হয়েছে, সরকার যেন বীজ, সার, সেচ, উপকরণ নিয়ে তার পাশে থাকে। চারদিকে যখন দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি, মন্দার হাহাকার; তখন এই কৃষকরাই আমাদের শেষ ভরসা। সময়মতো দরকারি সহায়তা পেলে এই সাহসী কৃষকরাই আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। আমরা যেন তাদের ভুলে না যাই।

 

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট

Link copied!