দুর্নীতির কীট বাঙালির ফুটবলের ভেতরের শাঁস ও রস শুষে নিয়ে তাকে ফাঁপা করে দিয়েছে। দেশের ফুটবল চলে যাচ্ছে মহাপ্রস্থানে! বাংলাদেশ ফুটবলকে ঘিরে এক ধরনের বিষণ্নতা। আর্তি। শোক। ক্ষোভ। হতাশা। সব কিছুর বহিঃপ্রকাশ দেখা যাচ্ছে। কিন্তু বিষ্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, যে কারণে বাংলাদেশ ফুটবল মৃত্যুপথযাত্রী, সেই দুর্নীতি নিয়ে প্রায় সবাই সংশয়হীন! বাফুফের সভাপতি দিন꧂ কয়েক আগেও দুর্নীতির দায়ে শাস্তিপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের পাশে থাকার আভাস দিলেন, তিনিও ইউটার্ন করেছেন! স্বীকার করেছেন ফিফার দেয়া অর্থকড়ি খরচে অনিয়ম হয়েছে! সভাপতির এই একশ ༺আশি ডিগ্রি ঘুরে যাওয়া নিজের দায় এড়ানোর কৌশল ছাড়া অন্য কিছু নয়।
কিন্তু সেই তিনি আবার তার সౠিনিয়র সহসভাপতির পাশে নীরবে বসে থাকলেন! আর তার সিনিয়র সহসভাপতি দাবি করলেন𓂃, `বাফুফেতে কোন দুর্নীতি হয়নি! সোহাগ যা করেছেন সেটা জালিয়াতি! `
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের আর্থিক অনিয়ম দেখার দায়িত্ব অবশ্যই অর্থ কমিটির আছে।ঐ কমিটির প্রধান বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি। তিনি সরকার দলীয় একজন সংসদ সদস্যও বটে। তিনি ফিফার একান্ন পৃষ্ঠার রিপোর্ট পড়ে আবিস্কার করেছেন দুর্নীতি হয়নি, জালিয়াতি করেছেন সোহাগ!`
সহসভাপতির দাবি সত্যি হলে, প্রশ্নটা আরও সহজ হয়ে যাচ্ছে। সোহাগের এই জালিয়াতি সিন𝓀্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত কারা? বাফুফের অর্থ কমিটির লোকজনের অজান্তে তিনি জালিয়াতি করেছেন তা কীভাবে সম্ভব? আর অর্থ কমিটির প্রধানের অজান্তে যদি এটা হয়, তাহলে সবার আগে ব্যর্থতার দায় নিয়ে পদত্যাগ করা উচিত তার।
ফিফার রিপোর্ট যে সত্যি সেটাতো বাফুফে মেনে নিয়ে আজীবনের জন্য সোহাগকে নিষিদ্ধ করেছে। কি🌳ন্তু সাংবাদিক সম্মেলনে সেটা অস্বীকার কেন? এত উত্তেজিত কন্ঠেই বা কথা বলতে হলো কেন! সভাপতি কেন নিশ্চুপ থাকলেন! এইসব প্রশ্নের একটাই উত্তর: ধোয়া যখন ওড়ে আগুন তো কোথাও না কোথাও লেগেছে। সেটা তদন্তের জন্য দশ সদস্যদেꦬর কমিটি কেন? কেন বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি নয়?
সোহাগের জায়গায় 🦩সভাপতির ব্যক্তিগত সহকারীকে কেন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিয়োগ দেয়া হলো! নতুন করে এই নিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন। সব কিছু মিলিয়ে ফুটবল ফেডারেশনে লেজে গোবরে অবস্থা! আসলে দেশের ফুটবল পরিচালনার জন্য যারা দায়িত্ব পেয়েছিলেন তারা মানুষকে হতাশ করেছেন। নিজেদের ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। বাঙালির ইতিহাস নিয়ে ওপার বাংলার এক বিখ্য🧔াত লেখক লিখেছেন, `যে সমাজের চরিত্র শিথিল ব্যাপক সামাজিক দুর্নীতি সেখানে। সেখানকার সমাজবিন্যাসে মেরুদণ্ডহীন ব্যক্তিত্ব অলঙ্কার বাহুল্যের বিস্তার ঘটায়।`
বাংলাদেশ ফুটবলের দুর্নীতি অনিয়ম আর্থিক। যার প্রভাব সামাজিক এবং রাজনৈতিকভাবে পড়ছে। ফুটবল প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত না থাকা একজন ব্যক্তিকে যারা নিয়োগ দিয়েছেন। বারবার মেয়াদ বৃদ্ধি করেছেন আবু নাঈম সোহাগের কোন যোগ্যতা বা দক্ষতায় মুগ্ধ হয়েছিলেন তারা! বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগকে ফিফা নিষিদ্ধ করেছে। জরিমানা করেছে। এখন সভাপতিও স্বীকার করছেন আর্থিক অনিয়ম করেছে। ফিফার একান্ন পৃষ্ঠার রিপোর্ট পড়ার পর সভাপতির সেটা মনে হয়েছে। তবে এখানে বাফুফের অর্থ কমিটি পেশাদারিত্ব পরিচয় দিতে পারেননি বলে মনে করেন বাফুফে সভাপতি। বাফুফে সভাপতির বক্তব্যের শেষাংশটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একই সঙ্গে তাৎপর্যপূর্ণ।
অর্থ কমিটি কী করছে, তার সাধারণ সম্পাদক কী করছেন এটা দেখার দায়িত্ব কার? বাফুফের আর্থিক অনিয়ম নিয়ে যখন প্রশ্ন তুলেছিলেন প্রয়াত সাবেক তারকা ফুটবলার, যিনি বাফুফের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন একাধিকবার,টানা তিনবারের নির্বাচিত সহসভাপতি সেই বাদল রায়কে বাফুফে ভবনে না যাওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন কে? আবু নাঈম সোহাগকে কারা এত ক্ষমতা দিয়েছিলেন? বাদল রায় প্রশ্ন তুলেছিলেন ফিফা সভাপতি সেপ ব্লেটার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে খেলাধুলার প্রতি বঙ্গবন্ধু কন্যার আন্তরিকতায় মুগ্ধ হয়ে একাডেমি করার জন্য যে সাত লাখ ডলার দিলেন তা কোথায় খরচ করা হলো? ব্যাঙ্কার্স অ্যাসোসিয়েশন ফুটবলের উন্নয়নে যে পনের কোটি টাকা দিলো তার সঠিক ব্যবহার হলো কোথায়? সেই সোহাগের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন যে কর্মকর্তারা তাদের কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর সময় এসেছে। ফিফা সোহাগকে নিষিদ্ধ করেছে। এটা কান টানলে মাথা আসবে সেই প্রবচনকে মনে করিয়ে দেয়।
বাদল রায়কে হুমকি দেয়া, অপমান করার সাহস দেখিয়েছেন সোহাগ যাদের ꦦজন্য, তাদের কাছে জাতি যদি চায়, বাদল রায় সেদিন সোহাগের বহিষ্কার দাবি করেছিলেন। আপনারা তাকে পুরস্কৃত করলেন মেয়াদ বাড়িয়ে। চুক্তি নবায়ন করে। সোহাগের প্রতি এতো দুর্বলতার কারণ কী? সেদিন একজন নিখাদ ফুটবলপ্রেমী সহসভাপতির কথা গুরুত্ব না দিয়ে আপনারা আদরে-সোহাগে ভরিয়ে রাখলেন একজন বেতনভোগী সাধারণ সম্পাদককে! তার কী একটাই কারণ, তিনি ভুয়া ভাউচার তৈরি আর টাকা পয়সা নয়-ছয়ে দারুণ স্কিলফুল!
সেদিন এই বাফুফের কিছু মেরুদণ্ডহীন কর্মকর্তা বলেছিলেন, `বাদল অসুস্হ।ও কী বলছে না বলছে এটাকে এতো গুরুত্ব দেয়ার কী আছে?` অসুস্থ বাদল রায়ের মস্তিষ্কে যে ফুটবল বোধ আর মেধা ছিল, তা আপনাদের অনেকের ফুটবল জ্ঞানের সমষ্টির চেয়ে বেশি। ফুটবলের প্রতি তার যে ভালোবাসা ছিল তাও আপনাদের তুলনায় নিখাদ। আপনাদের কেউ সময়ান্তরে ব্যবসায়ী থেকে রাজনীতিবিদ হয়েছেন। সেই পরিচয়ে বাফুফেতে। কিন্তু মৃত্যুর পরও বাদল রায়ের সব পরিচয় ছাপিয়ে একটা পরিচয় জনমানসের স্মৃতিতে। ফুটবলার বাদল রায়। সেদিন তার কথা আপনাদের কাছে বি📖শ্বাসযোগ্য মনে হয়নি! আজ ফিফার একান্ন পৃষ্ঠার রিপোর্ট পড়ার পর মনে হল আর্থিক অনিয়ম হয়েছে! অদক্ষ ফুটবল প্রশাসক হিসেবে পদ আকড়ে থাকলে এদেশের মানুষের কাছে অন্য বার্তা যাবে। সোহাগ আর আপনাদের একই পাল্লায় মাপতে শুরু করবে মানুষ। দেশের ফুটবল এখন মৃত্যুপথযাত্রী। তাকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টাটা অন্যদের করতে দিন।
বাং🦹লাদেশ ফুটবল ফেডারেশন নাকি এখন নিঃস্ব! দিনকয়েক আগে তেমন আর্তি ছিলো খোদ সভাপতির কথায়। নারী ফুটবলারদের বিদেশ পাঠানোর টাকা নেই। কেউ টাকা দিতে চায় না! কথাটা অসত্য। সেটা খোদ বাফুফে ভবনে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়ে গেলেন নারী দল𝔍ের স্পন্সর ঢাকা ব্যাংকের কর্মকর্তারা। তারা জানি গেলেন তাদের কাছে টাকাই চাওয়া হয়নি। অথচ অর্থাভাবে নারী দলকে মিয়ানমার পাঠানো গেলো না! সভাপতির বয়ানে তিনি অনেক ভিক্ষা করেছেন। এখন কেউ আর তাকে টাকা দিতে চান না!` সোহাগ কাণ্ডের পর সত্যি কেউ আর বাফুফেকে টাকা দিতে চাইবে?
প্রধানমন্ত্রী ফুটবলকে বাঁচাতে ক্রীড়াপ্রশাসনকে নির্দেশ দিতে পারেন, নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি করে বাফুফের অনিয়ম, দুর্নীতি, জালিয়াতি খতিয়ে দেখতে। দোষীরা যাতে পার না পান সেটা প্রধানমন্ত্র♛ীকে নিশ্চিত করতে হবে। ফিফা বাফুফের আর্থিক দুর্নীতির কথা বলেছে। এর সাথে দেশের ভাবমূর্তি জড়িয়ে আছে, সেটা যাদের🦄 কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হল তাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো না হলে দেশ ফুটবল আরও নিঃস্ব হয়ে যাবে।
লেখক: সাংবাদিক