• ঢাকা
  • সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৭ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Songbad Prokash

ইনস্টাগ্রাম

টুইটার


লিংকডইন

পিন্টারেস্ট

গুগল নিউজ


পাঠ্যক্রম বিতর্ক : মুখস্থকে হ্যাঁ, নাকি না?


তানিয়া কামরুন নাহার
প্রকাশিত: নভেম্বর ৯, ২০২৩, ১১:৩৫ এএম
পাঠ্যক্রম বিতর্ক : মুখস্থকে হ্যাঁ, নাকি না?

একটা গল্প দিয়ে শুরু করি। একটি প্রতিষ্ঠানে দুজন চাকরিপ্রার্থী উপস্থিত। দুজনেই যথেষ্ট যোগ্যতাসম্পন্ন, পরীক্ষার ফলাফলও দুজনেরই প্রায় একই রকম। ভাইভাতে একজনকে জিজ্ঞেস করা হলো, প্রতিষ্ঠানের পাশের টাওয়ারটির উচ্চতা কত। তিনি উচ্চতাটি আগে থেকেই জানতেন, তাই ঠিকঠাক বলে দিলেন। এবার পরের জনের ভাইভা। তাকেও একই প্রশ্ন করা হলো। ꦉকিন্তু টাওয়ারের উচ্চতা তার জানা ছিলো না। তিনি বললেন, ‘আমাকে কিছুক্ষণ সময় দিলে ♌এর উচ্চতা আমি বলে দিতে পারবো।’ তাকে সময় দেওয়া হলো। তিনি একটি কাঠির সাহায্যে ত্রিকোণমিতির কিছু সূত্র ব্যবহার করে, টাওয়ারের উচ্চতা বের করে ফেললেন। এবং প্রথমজনের মুখস্থ উত্তরের সঙ্গে তার নির্ণয় করা উচ্চতা মিলে গেলো। এবার বলুন তো, চাকরিদাতা কাকে নিয়োগ দেবেন? যিনি মুখস্থ উত্তর বলে দিতে পেরেছিলেন, তাকে নাকি দ্বিতীয় জনকে?

আমাদের মধ্যে অনেকেই পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব ফটাফট মুখস্থ বলে দিতে পারেন। কিন্তু কতজন হাতে কলমে এ দূরত্ব নির্ণয় করতে পারেন? কোনো এক অতীতে মুখস্থ বিদ্যায় পারদর্শী হওয়াটা খুব কৃতিত্বের ব্যাপারে ছিলো। বিভিন্ন গাণিতিক সূত্র, তথ্য, উপাত্ত, টাকা পয়সার লেনদেনের হিসাব নিকাশ, ইলিয়াড বা মহাভারতের মতো দীর্ঘ মহাকাব্য একসময় লোকে মুখস্থ রাখতেন। মুখস্থ করেই তথ্যগুলো এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্ম পর্যন্ত সংরক্ষণ করতেন। কেননা, তখন কাগজ অত সুলভ ছিলো না। সহজে তথ্যগুলো লিখে রেখে সংরক্ষণ করাও যেতো না। তাই স্মৃতিধর ব্যক্তিদের এসব মুখস্থ করিয়ে রাখা হতো। সমাজে এই মুখস্থ করা ব্যক্তিদের কদরও ছিলো বেশ। তারই ধারাবাহিকতায়, পুরোনো পরীক্ষা পদ্ধতিতে মুখস্থ করে পাস করনেওয়ালাদেরই কদর ছিলো বেশি। আর তাই পিথাগোরাসের উপপাদ্যের সৌন্দর্য কখনো অনুভব করতে না পারলেও পরীক্ষার খাতায় এর প্রমাণ মুখস্থ লিখে দিয়ে এসে দিব্যি ভালো রেজাল্ট করা যায়। সমাজে নিজের মুখও উজ্জ্বল হয়। এত ভালো রেজাল্ট করেও বাস্তব জীবনে পিথাগোরাসের উপপাদ্যের কোনো প্রয়োগ তিনি করতে জানেন না। 
শ্রমের মর্যাদা রচনা মুখস্থ করেও বাস্তব জীবনে মানুষের বিভিন্ন রকম পেশাকে তিনি শ্রদ্ধা করতে শেখেন না। পরিবেশ রক্ষার উপায়গুলো পরীক্ষার খাতায় তিনি ঠিক ঠিক লিখে আসেন। পাতার পর পাতা তিনি লিখে যান, ডাস্টবিনে ময়লা ফেলতে হ🎐বে, বেশি করে বৃক্ষ রোপণ করতে হবে—এসব লিখে তিনি ভালো রেজাল্টও অর্জন করেন, সবাইকে মিষ্টি মুখ করান। কিন্তু দিন শেষে ময়লাটা ফেলেন যেখানে সেখানে। একটা গাছের চারা রোপণ তো দূরের কথা, গাছের যত্নও করেন না। এসব কাজ নিয়ে ভাবা বা কাজ করার চেয়ে পরীক্ষার জন্য পড়া মুখস্থ করাই অনেক শ্রেয় বলে অনেকের ধারণা। সে ধারণা থেকে আজও লোকে বেরিয়ে আসতে পারেনি।

নতুন পাঠ♋্যক্রম নিয়ে একটা অহেতুক আতংক সৃষ্টি করা হচ্ছে, শিক্ষার্থীরা মুখস্থ থেকে সরে আসছে, এতে নাকি ভয়াবহ কাণ্ড ঘটে যাবে। অথচ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, “মুখস্থ করিয়া পাস করাই তো চৌর্যবৃত্তি! যে ছেলে পরীক্ষাশালায় গোপনে বই লইয়া যায় তাহাকে খেদাইয়া দেওয়া হয়; আর যে ছেলে তার চেয়েও লুকাইয়া লয়, অর্থাৎ চাদরের মধ্যে না লইয়া মগজের মধ্য🔥ে লইয়া যায়, সেই-বা কম কী করিল?”

আর আইনস্টাইন মনে করেন, যে তথ্য লিখে রাখা যায়, ওটা মস্তিষ্কের মধ্যে বোঝাই করার কোনো মানে নেই। তাঁর বꦛিখ্যাত উক্তি স্মরণীয়, “Never memorie♚s something that you can look up.

কোনো পাঠ্যক্রমই মুখস্থকে উৎসাহিত করে না। নতুন বা পুরনো পাঠ্যক্রমের যেকোনো পাঠ্যবইয়ের যে কোনো একটা অধ্যায় খুলে দেখুন। সেখানে আচরণিক বৈশিষ্ট্যে কোথাও লেখা নেই, সূচকীয় রাশি মুখস্থ বলতে পারবে। বরং লেখা রয়েছে, সূচকীয় রাশি সম্পর্কে ধারণা পাবে ও প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারবে। কোথাও লেখা নেই, মৌলিক ও যৌগিক পদার্থ﷽ের পার্থক্য মুখস্থ লিখতে ও বলতে পারবে। বরং লেখা থাকে, পদার্থের ধর্ম খুঁটিয়ে দেখে মৌলিক ও যৌগিক পদার্থের পার্থক্য করতে পারবে। মুখস্থ নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে এসে শিক্ষার্থীরা যেন বিষয়গুলো বুঝে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে পারে, নতুন পাঠ্যক্রম সে লক্ষ্য নিয়েই শুরু হয়েছে।

আপনারা জানেন, বর্তমানে ‘এআই’ (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) প্রযুক্তি চলে এসেছে। এক সময় কাগজ আবিষ্কার ছিলো সভ্যতার পরিচয়। এখন কাগজ ব্যবহার না করাটাই সভ্যতার পরিচয়। এমন যুগে কিছু সূত্র মুখস্থ রাখার♓ চেয়ে বরং দরকার, বাস্তব জীবনের যে কোনো পরিস্থিতিতে যথাযথ সূত্রকে ঠিকমতো প্রয়োগ করার দক্ষতা। যাকে বলে ক্রিটিক্যাল থিংকিং। লেখার শুরুতে এক চাকরি প্রার্থীর টাওয়ারের উচ্চতা নির্ণয়ের গল্প বলেছিলাম, মনে আছে? কোনো শিক্ষার্থী যদি ඣসূত্রগুলো ঠিক মতো বুঝে আত্মস্থ (মুখস্থ নয়) করতে পারে, তাহলে সে ব্যারোমিটার দিয়েও টাওয়ারের উচ্চতা নির্ণয় করতে পারে।

Link copied!