করোনার সংক্রমণ ক্রমাগত বাড়ছে, গ্রাম ও শহরের পার্থক্য আর নেই বললেই চলে। মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের কপালে দুশ্চিন্তার ছাপ। হাসপাতালে ঠাঁই নেই, অক্সিজেন নেই, আইসিইউ বেড খালি নেই। যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এত দিন স্বাস্থ্য খাতে সক্ষমতার বিবরণ দিতেন, এখন তিনি বলছেন সংক্রমণ আরও বাড়লে করার আর কিছুই থাকবে না। কষ্টকর মৃত্যুই শেষ পরিণতি। বাঁচতে হলে ঘরে থাকুন! এযাবৎকালের সবচেয়ে কড়া লকডাউন চলছে। রাস্তায় সামরিক বাহিনীও আছে মানুষকে ঠেকাতে। ৫ আগস্ট পর্যন্ত সব ধরনের গাড়ি চলাচল বন্ধ। এ পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা এ✨লো🥂 গার্মেন্টসসহ রপ্তানিমুখী কারখানা ১ আগস্ট থেকে চালু করা হবে।
ঘোষণা তো এমনি এমনি আসেনি! মালিকদের পক্ষ থে🔜কে প্রথমে আবদার, তারপর দাবি, এরপর মৃদু হুমকির মুখে চলমান কঠোর ও💞 সর্বাত্মক লকডাউন এবং বিধিনিষেধের মধ্যেই তৈরি পোশাকসহ সব রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা রোববার খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। পোশাক কারখানার মালিক তথা রপ্তানিকারকদের মুখে এখন তৃপ্তির হাসির সঙ্গে একটু গর্বের ঝিলিক। মুখের ভাষায় না হলেও ভাবে প্রকাশিত হচ্ছে তাদের মনের কথা: বলেছিলাম না আমাদের কথা সরকারকে শুনতেই হবে!
রোববার সকাল ছয়টা থেকে পো🥀শাকসহ সব রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানাকে বিধিনিষেধের আওতামুক্ত ঘোষণা করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ শুক্রবার বিকেলে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। বৃহস্পতিবার ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিনের নেতৃত্বে একদল ব্যবসায়ী মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে বৈঠক করে যত দ্রুত সম্ভব শিল্পকারখানা খুলে দেওয়ার অনুরোধ জানান। তাদের অনুরোধ ফেলতে পারেনি সরকার। এর আগে শ্রম প্রতিমন্ত্রী আবেদন জানিয়েছিলেন, যেন মালিকরা কারখানা লে অফ না করেন। তিনি কিন্তু বলেননি যে বেআইনি লে অফ করলে শ্রম আইন অনুযায়ী শাস্তি পেতে হবে। বরং শ্রমিকদের ভয়ের ইঙ্গিত দেখালেন। এখন সিদ্ধান্ত নাও, করোনার ভয়, না কাজ হারানোর ভয় কোনটা বড়? সব জটিলতার অবসান ঘটিয়ে শেষে রপ্তানিমুখী সব শিল্পকারখানা খুলে দেওয়ার ঘোষণা দিল সরকার। যাক! শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেঁচে গেলেন লে অফজনিত দুশ্চিন্তা থেকে আর মালিক নেতারা দেখালেন তাদের ক্ষমতা। কিন্তু শ্রমিকেরা? এই চলমান বিধিনিষেধে শ্রমিকেরা দূরদূরান্ত থেকে কীভাবে কর্মস্থলে আসবেন, তার কোনো ব্যবস্থা করা হবে কি না, তা বলা হয়নি।
করোনা সংক্রমণের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী ২৩ জুলাই থেকে জারি করা কঠোরতম বিধিনিষেধের মধ্যে গত ২৭ জুলাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে সরকারের উচ্চপর্যায়ের এক সভা হয়। তাতে সিদ্ধান্ত হয়, চলমান বিধিনিষেধে শিল্পকারখানা খোলার জ🍌ন্য ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে অনুরোধ থাকলেও তা গ্রহণ করা যাচ্ছে না। তার মানে ৫ আগস্ট পর্যন্ত পোশাকসহ অন্যান্য শিল্পকারখানা বন্ধই থাকছে। কিন্তু ৩০ জুলাই সিদ্ধান্ত হলো কারখানা খুলছে।
ঈদের ছুটি এবং ৫ আগস্ট পর্যন্ত কঠোর লকডাউনের ঘোষণায় ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ থেকে মানুষ কীভাবে যে গ্রামের দিকে ছুটেছে, তা যমুনা সেতুতে গাড়ির ভিড়, সদরঘাটে লঞ্চে যাত্রীর ভিড়, দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে মানুষ আর গাড়ির ভিড় দেখে বোঝা গেছে। এরা কারা? এই মানুষগুলো বাড়ি গিয়েছিল খরচ বাঁচাতে। কারণ কারখানা বন্ধ এখানে থেকে কী করবেন? এখন আবার আসবেন চাকরি বাঁচাতে। তারা আসবেন তিন গুণ চার গুণ বেশি খরচ, অবর্ণনীয় কষ্ট আর সময় ব্যয় করে। কোথায় থাকবে স্বাস্থ্যবিধি আর কোথায় কি! এসব দেখে অনেকেই 💎হয়তো বলবে, বুঝলেন, আসলে বাঙালি কথা শুনে না, নিয়ম মানে না। কিন্তু যারা ঘন ঘন নিয়ম পাল্টান, বাধ্য করেন শ্রমজীবী মানুষদের তাদের হুকুম মানতে, তাদের কি কোনো দায় নেই?
মালিক দেখছে উৎপাদন, অর্ডার, মুনাফা। সরকার দেখছে রপ্তানি আয়। একদিকে ৩৪ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়, অন্যদিকে ৪০ লাখ গার্মেন্টস শ্রমিক। অর্ডার বাতিল হলে আর পাওয়া যাবে না, মুনাফা হাতছাড়া হয়ে যাবে। 𓄧কিন্তু শ্রমিক তো যথেষ্টই আছে। আর শ্রমিক দেখছেন তার চাকরি। এটা না থাকলে তিনি বাঁচবেন কীভাবে? করোনার চাইতে ক্ষুধার যন্ত্রণা যে বেশি! তাই তিনি ঝুঁকি নিতে পরোয়া করেন না। মুনাফার জন্য এক মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়ে গেল।
হুকুম তামিল করতে এক পায়ে খাড়া হয়ে থাকা মানুষটিও যখন ঘনঘন সিদ্ধান্ত পাল্টানোর সঙ্গে তাল মেলাতে পারেন না, আর সে কারণে শাস্তির মুখোমুখি হয়, তখন তার একটিমাত্র জবাবꦍ থাকে, ‘এত কিছু কেমনে সামলাই বলেন, আমিও তো মানুষ!’ কিন্তু গার্মেন্টস শ্রমিকরা বলবেন, ‘করোনা-ফরনা বাদ দেন, আমরা কি মানুষ যে আমাদের করোনা হবে?’
লেখক: শ্রমিকনেতা ও কলামিস্ট