দরজায় কড়া নাড়ছে বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম প্রাণের উৎসব পয়লা বৈশাখ। আর পয়লা বৈশাখে একটি বড় জায়গা দখল করেছে মঙ্গল শোভাযাত্রা। আর ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নামটি চলে এলে, চলে আসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা ইনস্টিটিউটের নাম। গেল বছরগুলোর মতই🔥 এবারও জোরেশোরে চলছে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি।
বাঙালি ও বাঙালিয়ানা সংস্কৃতির মেলবন্ধনের উৎসব পয়লা বৈশাখের বাকি তিন দিন। অন্যান্য বছরের মত এবারও দিন-রাত এক করে কাজ করে যাচ্ছেন এখানকার শিক𝕴্ষক-শিক্ষার্থীরা। ছোট-বড় বিভিন্ন গ্রু꧂পে ভাগ হয়ে কাজ করছেন।
অনুষদের সাব🏅েক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে কর্মশালায় আঁকা ছবি ও বিভিন্ন শিল্পকর্ম বিক্রি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে আর্থিক অনুদানের অর্থ থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। প্রতিবছর শোভাযাত্রার আয়োজনের দায়িত্বে থাকে চারুকলা অনুষদের দুটি ব্যাচ। এ বছর দায়িত্বে আছে অনুষদেജর ২৪ ও ২৫তম ব্যাচ।
সরেজমিন🔜ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা রং তুলি হাতে নিয়ে মাটির জিনিসপত্রে🌠, মুখোশে বাহারি রঙে রাঙিয়ে তুলছেন। এছাড়া কেউ কেউ পেঁচা, ঘোড়া, মূর্তি, ট্যাপা পুতুল, পাখির অবয়বের বিভিন্ন প্রতিকৃতির চাটাই বুনছেন, কেউবা আঠা দিয়ে চাটাইতে কাগজের আবরণ দিচ্ছে।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাক༒ুরের গান ‘বরিষ ধরার মাঝে শান্তির বারি’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে ১৫ দিন আগ থেকে কাজ শুরু হয়েছে। আয়োজকরাꦦ বলছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মঙ্গল শোভাযাত্রার কাজ শেষ হবে।
কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্রয়িং অ্যান্ড প্রিন্টিং বিভাগের শিক্ষার্থী সজীব বিশ্বাসের সঙ্গে। সজীব বলেন, “পুরোদমে মঙ্গল শোভাযাত্রার কাজ চলছে। এবার শোভাযাত্রায় প্রদর্শনের জন্য বড় শিল্পকর্মগুলো আগে হাত দেওয়া হয়েছে। কাজও প্রায়, শেষের দিকে। আমরা আশাবাদী নির্ধারিত সময়ের মধ্♊যে আমাদের কাজ শেষ হয়ে যাবে।”
একই বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী অরিজিৎ বলেন, “মঙ্গল শোভাযাত্রা আন্তর্জাতিকভꦿাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এই কাজের সঙ্গে যুক্ত থা𝓀কতে পেরে সত্যি আনন্দিত। শুধু আমিই না, এখানে যারা আছে, সবার কাছেই গর্বের। সবাই এটাকে নিজের কাজ মনে করি।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন,“ মঙ্গল শোভাযাত্রা থামিয়ে দিতে গুজব চলছে, এটি থামিয়ে দিতে আদালত পর্যন্ত যাওয়া হয়েছে। এটি অনেক কষ্টের। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া একটি 🌌শোভাযাত্রা, এভাবে থেমে দেওয়ার চেষ্টা মানা যায় না। আশা করি শুভ বুদ্ধির উদয় ঘটবে।”
শোভাযাত্রা সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করতে গঠন করা হয়েছে তিনটি উপকমিটি। গত ২৯ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের পয়লা বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক সভায় এই কমিটি গঠন করা হয়𝕴।
কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি : বা✃ংলা নববর্ষ উদযাপনের কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার উদ্দেশ্যে সভায় প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদকে আহ্বায়ক করে ২৪ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন এই কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন।
শৃঙ꧋্খলা উপকমিটি : কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়াও সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে নববর্ষ উদযাপনের লক্ষ্যে দুটি উপকমিটি গঠন করা হয়। এগুলো হচ্ছে শৃঙ্খলা উপকমিটি ও মঙ্গল শোভাযাত্রা উপকমিটি। ১২ সদস্যবিশিষ্ট শৃঙ্খলা উপকমিটির আহ্বায়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী এবং সদস্য সচিব সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. লিটন কুমার সাহা।
শোভাযাত্রা উপকমিটি : ৩২ সদস্যবিশিষ্ট মঙ্গল শোভাযাত্রা উপকমিটির আহ্বায়ক চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক🌟 নিসার হোসেন এবং সদস্য সচিব সহকারী প্রক্টর মো. নাজির হোসেন খান।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, পয়লা বৈশাখে ব𝄹িশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের মুখোশ পরা এবং ব্যাগ বহন করা যাবে না। তবে চারুকলা অনুষদ কর্তৃক প্রস্𝐆তুতকৃত মুখোশ হাতে নিয়ে প্রদর্শন করা যাবে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভুভুজেলা বাঁশি বাজানো ও বিক্রি করা থেকে বিরত থাকার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
ক্যাম্পাসে নববর্ষের দিন সব ধরনের অনুষ্ঠান বিকেল ৫টার মধ্যে শেষ করতে হবে। নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসে বিকেল ৫টা প♌র্যন্ত প্রবেশ করা যাবে। ৫টার পর কোনভাবেই প্রবেশ করা যাবে না, শুধু বের হওয়া যাবে। নববর্ষের আগের দিন ১৩ এপ্রিল বুধবার সন্ধ্যা ৭টার পর ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকারযুক্ত গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে পারবে না। নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের যানবাহন চালানো যাবে না এবং মোটরসাইকেল চালানো সম্পূর্ণ নিষেধ। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বসবাসরত কোনো ব্যক্তি নিজস্ব গাড়ি নিয়ে যাতায়াতের জন্য শুধুমাত্র নীল🌊ক্ষেত মোড় সংলগ্ন গেইট ও পলাশী মোড়সংলগ্ন গেট ব্যবহার করতে পারবেন।
স্বৈরাচারী শাসনের ব💮িরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ঐক্য এবং একই সঙ্গে শান্তির বিজয় ও অপশক্তির অবসান কামনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের উদ্যোগে ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দে সর্বপ্রথম আনন্দ শোভাযাত্রার প্রবর্তন হয়। ওই বছরই ঢাকাবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয় এই আনন্দ শোভাযাত্রা। সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে এই আনন্দ শোভাযাত্রা বের করার উদ্যোগ প্রতি বছর অব্যাহত রাখে। জানা যায়, ১৯৯৬ সাল থেকে চারুকলার এই আনন্দ শোভাযাত্রা মঙ্গল শোভাযাত্রা হিসেবে নাম লাভ করে।
এদিকে বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আবেদনক্রমে ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের✨ ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশের ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ ইউনেস্কোর মানবতার অধরা বা অস্পর্শনীয় সাংস্কৃতিক ঐতিꦏহ্যের তালিকায় স্থান লাভ করে।