ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার পতনের আগে ও পরে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের কয়েকশ নেতা, এমপি, সাবেক মন্ত্রী গোপনে দেশ ছ꧒েড়েছেন। সরকার পতনের আগে বৈধভাবে গেছেন ডজনের বেশি নে🧸তা। আর ৫ আগস্টের পর থেকে গত প্রায় দেড় মাসে বাকিরা অবৈধভাবে সীমান্ত পার হয়ে গেছেন। অবশ্য, অনেকেই পালাতে গিয়ে ধরা পড়েছেন। সীমান্ত পার হতে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।
বিভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া তথ্যমতে, শেখ হাসিনার পতনের ঘটনা আঁচ করতে পেরে ৫ আগস্টের আগেই দেশ ছেড়েছেন অন্তত ১৩🥂 জন নেতা। তারা আর দেশে ফেরেননি। তারা কে, কোন দেশে আছেন সে বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। কারণ, বিদেশে গিয়ে তারা অনেকটা আত্মগোপন করেছেন। দেশে নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ রেখেছেন। এসব ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ 🌠করেছে দৈনিক প্রথম আলো।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের অন্তত ১৫ কেন্দ্রীয় নেতা, সাবেক মন্ত্রী ও এমপি ৫ আগস্টের পর দেশ ছেড়েছেন। তারা অবৈধ পꦿথꦦে দেশ ছাড়ায় ইমিগ্রেশনে কোনো তথ্য নেই। এর বাইরে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ অন্যান্য সংগঠনের বর্তমান ও সাবেক মিলে দেশ ছেড়েছেন কয়েকশ নেতা।
আগেভাগেই যারা দেশ ছাড়েন
ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালেই সপরিবারে দেশ ছেড়ে সিঙ্গাপুর চলে গেছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গণ-অভ্যুত্থানের কয়েকদিন আগেই দেশ ছেড়ে ভারতে চলে গেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আত্মীয় আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের ꧃মাত্র দুইদিন আগে ৩ আগস্ট রাতে পরিবারসহ পৃথক ফ্লাইটে দেশ ছাড়েন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। তিনি চলে যান সিঙ্গাপুরে আর তার পরিবার গেছে লন্ডনে। এর বাইরে আরও ১০ জনের বেশিℱ নেতা দেশ ছাড়েন।
সরকার পতনের পর যারা দেশ ছাড়েন
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সবচেয়ে বেশি 🧸কৌতুহল তৈরি হয়েছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে। দলীয় নেতাদের অনেকেই জানাচ্ছেন, সরকার 💟পতনের পর পরই ওবায়দুল কাদের সীমান্তবর্তী এলাকায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। পরে সীমান্ত পার হয়ে ভারতে চলে গেছেন। বিশেষ একটি সূত্র বলছে, ওবায়দুল কাদের এখন দুবাইয়ে আছেন।
একাধিক সূত্রমতে, শেখ হাসিনা সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রীদের বেশিরভাগই ৫ আগস্টের পর দেশ ছেড়েছেন। সরকার পতনের পর পরই গোপনে দেশ ছেড়েছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম🐬, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ নাসিম ও আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা নারায়ণগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানসহ অনেকে।
প্রভাবশালী এসব নেতা ও মন্ত্রীদের দেশ ত্যাগের সময় আত্মগোপনে থাকা সাবেক স্বরাষ্ট্রমন🍷্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম গত সপ্তায় &nbsꦇp;সীমান্ত পাড়ি দিয়ে দেশ ছেড়েছেন বলে জানা যাচ্ছে।
দেশ ছাড়ার তালিকায় প্রভাবশালীরা
আওয়ামী লীগের স💦ভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন (রাজশাহী সিট🐟ির সাবেক মেয়র), সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ (সাবেক হুইপ) ও শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, দপ্তর সম্পাদক ও শেখ হাসিনার সাবেক বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়া, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ও কার্যনির্বাহী সদস্য নির্মল কুমার চ্যাটার্জি গোপনে দেশ ত্যাগ করেছেন।
এ ছাড়া সাবেক নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, কুমিল্লা সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস🐓্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার ও তারᩚᩚᩚᩚᩚᩚᩚᩚᩚ𒀱ᩚᩚᩚ মেয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র তাহসিন বাহার এবং ফেনীর সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম হাজারীও দেশ ছেড়েছেন।
যারা দেশ ত্যাগ করেছেন তাদের তালিকায় আরও আছেন- যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সꦍাবেক সংসদ সদস্য মাইনুল হোসেন নিখিল, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত শিকদার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম সারোয়ার কবির (ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক), ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজ মাহমুদ, যুবলীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জয়দেব নন্দীসহ অনেকে।
শুধু আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাই নয়, সরকার পতনের পর থেকে মধ্যম ও নিম্ন সারির অনেক নেতাও দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। এ ছাড়া গত ১০ স𓆉েপ্টেম্বর লালমনিরহাটের পাটগ্রামের দহগ্রাম সীমান্ত দিয়ে দেশ ত্যাগ করেছেন বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তা ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বিপ্লব কুমার সরকার। এভাবে দেশ ত্যাগের চেষ্টায় আছেন অনেকে।
দেশত্যাগের গুঞ্জন
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমসহ কেন্দ্রীয় বেশ কিছু নেতা෴র বর্তমান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারছেন না কেউ। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগে ৩১ জুলাই শেখ ফজলে নূর তাপসে🥂র ভাই যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরেছিলেন। তবে তিনি দেশ ছেড়েছেন নাকি দেশেই আছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। একইভাবে সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু দেশে না বিদেশে তা জানা যায়নি।
শেখ হাসিনার নিকটাত্মীয় ও সাবেক সংসদ সদস্যদের মধ্যে শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ হেলাল উদ্দিন ও তার ছেলে শেখ সারহান নাসের তন্ময়, হꦉেলালের ভাই সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল এবং আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ছেলে ও বরিশালের সাবেক মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ এখনো দেশ ছাড়ার সুযোগ পাননি। তারা দেশের ভেতরেই আত্মগোপনে আছেন বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে।
সেনানিবাসে আশ্রয়
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাজনীতিক, বিচারক, প্রশাসন ও পুলিশের কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যসহ ৬২৬ জন দেশের বিভিন্ন সেনানিবাসে আশ্রয় নিয়েছিলেন। 🐎তাদের মধ্যে কয়েকজন গ্রেপ্তার হলেও বাকিরা সেনানিবাস থেকে বের হয়ে কোথায় অবস্থান করছেন, সে ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু জানা যায়নি। তবে তাদের মধ্যে কেউ কেউ দেশ ছেড়েছেন বলে প্রচার আছে। এ ছাড়া আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান, মোহাম্মদ হারুন অর রশীদসহ আরও কয়েকজন কর্মকর্তা আত্মগোপনে আছেন।
নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগে পর🍸ে দেশত্যাগ করা নেতারা প্রতিবেশী দেশসহ বিভিন্ন দেশে গিয়ে আত্মগোপন করেছেন। তারা দেশে থাকা নেতাকর্মীদের কারো খোঁজ খবর নিচ্ছেন না। অনেকে আগের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরসহ ফেসবুক ও মেসেঞ্জার বন্ধ রেখেছেন। ফলে বিপদে থাকা তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
পালাতে গিয়ে গ্রেপ্তার, নিহত
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগে পরে যারা দেশ ছেড়েছেন কিংবা দেশ ছাড়ার চেষ্টায় আছেন তাদের প্রায় সবাই হত্যাসহ বিভিন্ন মামলার আসামি। তাদের মধ্যে দেশ ছাড়ার সময় গ্রেপ্তার হয়েছেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। একইভাবে বিদেশ যাওয়ার চেষ্টাকালে গ্রেপ্ত♉ার হয়েছেন সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকও। তথ্যমত𒁏ে, সরকার পতনের পর থেকে গত ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও নেতা মিলে গ্রেপ্তার হয়েছেন মোট ৩০ জন।
গত ১২ সেপ্টেম্বর আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে পালানোর সময় আটক হন চট্টগ্রামের রাউজানের সাবেক সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী। এর আগে ২৪ আগস্ট রাতে কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত দিয়ে ভ🌌ারতে পালানোর সময় মারা যান ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান (পান্না)। গলা টিপে শ্বাসরোধের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।
যেসব সীমান্ত দিয়ে দেশত্যাগ
সরকার পতনের আগে যারা দেশ ছেড়েছেন তারা বিমানে বৈধ পথেই চলে গেছেন। তবে ৫ আগস্টের পর যারা দেশ ত্যাগ করেছেন তাদের সবাই ✤অবৈধ পথে গেছেন। যারা দেশত্যাগ করেছেন তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিলেট, আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহ (🐻হালুয়াঘাট), যশোর অঞ্চল, লালমনিরহাটসহ উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্ত এলাকাগুলো দিয়ে দেশ ছাড়ার প্রবণতা বেশি।
চুক্তিতে দেশত্যাগ
ভারতে পালানোর সময় গত ২৩ আগস্ট সিলেটের কানাইঘাট সীমান্তে স্থানীয় লোকজনের হাতে ধরা পড়েন আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী (মানিক)। একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, তিনি ১৫ হাজার টাকা চুক্তিতে পালিয়ে যাচ্ছিলেন। তবে যাদের সহায়তায় পালাচ্ছিলেন, তারা তার 🉐কাছে থাকা ৬০-৭০ লাখ টাকা নিয়ে মারধর করেছেন। তথ্য পাওয়া গেছে, অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করতে জনপ্রতি ৫০ হাজার থেকে ২৫-৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত দিতে হয় সীমান্তের দুই পাশের দালালদের।