বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো শুরু হচ্ছে জাতিসংঘ জলবায়ু অভিযোজন সম্মেলন ন্যাশনাল অ্যাডাপটেশন🐼 প্লান (ন্যাপ) এক্সপো ২০২৪. আগামী সোমবার (২২ এপ্রিল) থেকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) শুরু হয়ে চলবে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত। এই আন্তর্জাতিক ফোরামে বিভিন্ন দেশ, সংস্থা এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডাররা পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যোগাযোগসহ অভিজ্ঞতা বিনিময় করবে। বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা, সর্বোত্তম অনুশীলন, বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ, চাহিদা ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কিত আলোচনার জন্য বিশেষজ্ঞদের বৈঠক হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ন্যাপসমুহের বাস্তবায়ন অগ্রগতির মূল্যায়ন করার সুযোগ তৈরি হবে।
বুধবার (১৭ এপ্রিল) সচিবালয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী। তিনি বলেন, ইউনাইটেড নেশনস ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনসন্স অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (ইউএনএফসিসিসি)-এর ব্যবস্থাপনায় জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনাসমূহের ওপর ভিত্তি ক🅷রে সংশ্লিষ্ট দেশের সব উন্নয়ন পরিকল্পনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ২০১৩ সাল হতে আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ন্যাপ এক্সপোর আয়োজন করা হয়।
এ সম্মেলনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশের অভিযোজন কার্যক্রম সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় থেকে সবাই পারস্পরিকভাবে উপকৃত হতে পারবে বলেও মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছেন। তিনি আরও বলেন, ন্যাপ এক্সপোতে অংশগ্রহণের জন্য ১০৪টি দেশের ৩৮৩ জন ইউএনএফসিসিতে রেজিস্ট্রেশন করেছে, যার মধ্যে ১১৪ জন বাংলাদেশি। এছাড়া দেশ🧔ের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ, জলবায়ু বিশেষজ্ঞবৃন্দ, এনজিওর প্রতিনিধিবৃন্দ, শিক্ষার্থীসহ ৫৫০জন অংশগ্রহণ করবেন। ইউএনএফসিসিসিতে এ পর্যন্ত 𒈔৫৩টি দেশ জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (ন্যাপ) দাখিল করেছে।
মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে জলবায়ু পরিবর্তন অভিযো﷽জনে বাংলাদেশ বিশ্বে অন্যতম সফল দেশ হিসেবে তথা রিজিলিয়েন্ট কান্ট্রি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। সেই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় আগামী ২২ থেকে ২৫ এপ্রিল বাংলাদেশে নবম ন্যাপ এক্সপো আয়োজিত হতে যাচ্ছে। ইউএনএফসিসিসির তত্ত্বাবধানে স্বল্পোন্নত দেশগুলির বিশেষজ্ঞ গ্রুপ এবং বিভিন্ন সংౠস্থার সহযোগিতায় এ এক্সপোর আয়োজন করা হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সম্মেলনের শুভ উদ্বোধন করবেন। ইউএনএফসিসিসির এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি সাইমন স্টিফেল উক্ত ন্যাপ এক্সপোতে উপস্থিত থাকবেন।
সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, সম্মেলনে মোট ২০ টি স্টল থাকবে যেখানে বিভিন্ন দেশের অভিযোজনমূলক কর্মকান্ড প্রদর্শিত হবে। এছাড়াও, ৪ দিনে ১৬টি সেশনে বিশেষজ্ঞগণ ট্রান্সফরমেশনাল এডাপটেশন, ফিনান্সিয়াল মেকানিজম, এডাপ্টেশন একটিভিটি মনিটরিং এন্ড ইভালুয়েশন টুলস, রেস্পন্সিভ এডাপটেশন প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা করবেন। বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দকৃত ১০টি স্থালে রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং, পাহাড়ি অঞ্চলে সোলার এনার্জির মাধ্যমে পানি উত্তোলনের ব্যবস্থা, জলবায়ু সহিষ্ণু বীজ, প্রাণিসম্পদ সংরক্ষণ এবং অন্যান্য কৃষি কার্যক্রম সংক্রান্ত বিষয়, অভিযোজন কর্মকাণ্ডের সমর্থনে ডেল্টা প্লানের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড, জলবায়ু অভিযোজনের জন্য সাইক্লোন সেল্টার, মুজিব কিꦆল্লা, রাস্তাঘাট, কালভার্ট নির্মাণ, জলবায়ু সহিষ্ণু নগর ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু উচ্চায়ু, ইত্যাদি জলবায়ু অভিযোজনের বিষয়সমূহ প্রদর্শন করা হবে।
বিদেশি স্টলে প্রদর্শিত অভিযোজন কর্মকাণ্ড থেকেও আমরা অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারবো জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এক্সপোতে দেশের জলবায়ু অভিযোজন প্রদর্শনের জন্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ; স্থানীয় সরকার, বিভাগ, পার্বত্য চট্ꦕটগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয় অংশগ্রহণ করবে। মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া অভিযোজন কর্মকাণ্ড সফল করা কষ্টসাধ্য। এ জন্য জনগণের অবগতির জন্য বাংলাদেশসহ বিশ্বের অভিযোজন মূলক কর্মকাণ্ড এবং ন্যাপ এক্সপোর বিষয়ে খবর, টেলিভিশনে 🌳স্ক্রল ও টিভিসি আকারে প্রচারের অনুরোধ জানায়।
পরিবেশমন্ত্রী বলেন, ‘এডভান্সমেন্ট অব ন্যাশনাল ক্লাইমেট প্ল্যানস অব বাংলাদেশ` সেশনে বাংলাদেশের জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা বিষয়ে সামগ্রিক আলোচনা করা হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় বাংলাদেশ𝓀 বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা ২০২২-২০৫০ প্রণয়ন করেছে এবং তা ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে ইউএনএফসিসিসি -তে দাখিল করেছে। জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনায় ১১ টি ক্লাইমেট স্ট্রেসড এরিয়াতে ৮ টি ঝুঁকিপূর্ণ সেক্টরের জন্য ১১৩ টি অগ্রাধিকারমূলক কার্যক্রম চিহ্নিত করা হয়েছে। আগামী ২৭ বছরে অর্থাৎ ২০৫০ সাল পর্যন্ত সময়ে ন্যাপ-এ গৃহিত কর্মপরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নে প্রায় ২৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রয়োজন হবে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী বলেন, ন্যাপ এক্সপোতে বাংলাদেশ বিভিন্ন সেশন আয়োজন করবে। ‘মোবিলাইজিং ডোমেস্টিক ক্লাইমেট ফাইন্যান্স: এক্সপেরিএন্স অব বাংলাদেশ` সেশনে নিজস্ব জলবায়ু ফান্ড বা ট্রাস্ট ফান্ড নিয়ে আলোচনা করা হবে। জলবায়ু পরিবর্তন জনিত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা থেকে জলবায়ু সহিষ্ণু অবস্থার দিকে উত্তরণের জন্য ২০০৯ সালে নিজস্ব অর্থায়নে ‘বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড` প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, যা বিশ্বে বিরল একটি উদ্যোগ। আমাদের নিজস্ব সম্পদ থেকে এই তহবিলে এই পর্যন্ত ৪৯০♏ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া সরকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় প্রতি বছর জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন মাধ্যমে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও অধিক পরিমাণ অর্থ ব্যয় করছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন, অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মো. মোশাররফ হোসেন, অতিরিক্ত সচিব (পদূনি) তপন কুমার বিশ্বাস, অতিরিক্ত সচিব (পরিবেশ) ড. ফাহমি🍌দা খানম, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড আবদুল হামিদ এবং বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী-সহ মন্ত্রণালয় ♊ও অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ।