এবারের বইমেলায় এসেছে আপনার নতুন বই ‘স্যাডনেস উইল লাস্ট ফরএভার’। বিষয়বস্তুর বিচারে এটাকে মেটাফিকশন বলা হচ্ছে। আপনি কী বলবেন?
হাসনাত শোয়েব : আমি অবশ্য কবিতা হিসেবেই লেখাগুলো লিখতে শুরু করেছিলাম। এখন কেউ কেউ এগুলোকে মেটাফিকশন হিসেবে চিহ্নিত করছেন। আওমার তাতেও কোনো আপত্তি নেই। আমি আমার কোনো লেখাকে নির্দিষ্ট জনরায় বেঁধে দিতে চাই না। আর এটা গুরুত্বপূর্ণ কিছুও না। কবিতা, মেটাফিকশন বা অন্য যেকোনো কিছু হোক, লেখাগুলোর নিজের জায়গা তৈরি করে নেওয়াটাই আসলে মূল ব্যাপার। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আমি যা বলতে চেয়েছি তা বলতে পেরেছি কিনা! যদি আমি নিজের কথা বলতে পারি এবং পাঠক যদি এই লেখার সঙ্গে নিজেকে রিলেট করতে পারে সেটাই আমার তৃপ্তির।
ধর্ম, ইতিহাস, সাহিত্য, মিথ মিলিয়ে যে জগত আপনি নির্মাণ করেছেন, যেখানে কেয়ামতের নিদর্শনও আছে, সেই সঙ্গে শোনাচ্ছেন সংগীতের জন্ম কথাও। এরকম বৈচিত্রময় পরিভ্রমণের পূর্বপ্রস্তুতি কী ছিল?
হাসনাত শোয়েব : প্রস্তুত▨ি বলতে তেমন কিছু না। প্রথমত, আমার নিয়মিত পাঠ অভিজ্ঞতার ছাপ এই বইতে পাওয়া যাবে। আমি চেয়েছিলাম মূলত মিথের সঙ্গে বাস্তবতার একটা কোলাজ তৈরি করতে। সে সঙ্গে খানিকটা প্রিচিংয়ের চেষ্টাও ছিল। অ্যাকাডেমিকভাবে দর্শনের ছাত্র হওয়ার কিছু প্রভাব যে এই বইয়ে পড়েনি তা বলার সুযোগ নেই। আবার অনেক ক্ষেত্রে কল্পনার ওপরও আস্থা রেখেছি। এখানে এমন কিছু বই, মিথ বা জাতিগোষ্ঠী কিংবা টুলস ব্যবহার করা হয়েছে যার আসলে কোন🦩ো অস্তিত্ব নেই। নিজেই বানিয়ে লিখেছি।
আপনার এর আগের বই ‘শেফালি কি জানে’ দারুণ সাড়া জাগিয়েছে। যার একাধিক মুদ্রণও হয়েছে। সবমিলিয়ে এই বইটি আপনার লেখালেখির যে জার্নি, তার একটা মাইলফলক বলা যায়। এ ধরনের ঘটনা অনেকসময় লেখকের পরবর্তী লেখালেখির ওপর প্রভাব বিস্তার করে। আপনার ক্ষেত্রে সেরকম হয়েছিল কি?
হাসনাত শোয়েব : ‘শেফালি কি জানে’র পর আমি যে মেটাফিকশনের বইটি প্রকাশ করেছি সেটির দিকে তাকালেই উত্তরটা পাওয়া যাবে বোধহয়। বইটি ছিল ‘বিষাদের মা কান্তারা’। ভাষা এবং বিষয়ের দিকে একেবারে আলাদা বই♍। অন্তত আমার তাই মনে হয়। এই কাজটি বেশ নীরিক্ষামূলক ছিল, যে কারণে বইটি পঠিত হয়েছে কম এবং এটি কথাও তেমন হয়নি। আমি কখনোই নিজেকে শেফালিতে আটকে ফেলতে চাইনি। কখনো চাইনি আরেকটি শেফালি লিখ♛তে। মানে সহজাতভাবে এই অনুভূতি বা তাড়নাটা আমি এখন পর্যন্ত বোধ করিনি। মূলত এই লুপে আটকে পড়তে চাইনি। তবে এটা ঠিক যে, শেফালি তুলনামূলকভাবে বেশি পঠিত হওয়ায় আমার কিছুটা ক্ষতিও হয়েছে। পাঠকদের অনেকেই চেয়েছে আমি শেফালির মতো করে লিখি। কিন্তু আমার মনে হয়েছে সেটা একটা ফাঁদের মতো, যেখানে ধরা পড়লে আমি নিজেকে চ্যালেঞ্জ করার জায়গাটা হারিয়ে ফেলতে পারতাম। ফলে আমি সে পথে আর হাঁটতে চাইনি।
‘শেফালি কি জানে’র পর্ব থেকে বের হয়ে ‘স্যাডনেস উইল লাস্ট ফরএভার’-এ আসার জার্নিটা সম্পর্কে জানতে চাই।
হাসনাত শোয়েব : শেফালির পর তো আসলে আরও চার–পাঁচটা বই হয়েছে। আমি চেষ্টা করি, আলাদা কিছু সৃষ্টি করতে। যদিও নিশ্চিত না যে, সেটা আমি আসলে করতে পেরেছি কিনা। এই বইগুলো নিয়ে আলোচনাও হয়েছে কম। শেফালির কারণে পরের বইগুলো খানিকটা প্রান্তে নির্বাসিত হয়েছে। তবে এটাও ঠিক যে, প্রতিটি বইয়ের নিজস্ব একটা পথচলা আছে। যদি টেক্সটে সেই শক্তি থাকে তবে কখনো না কখনো সেগুলোও সামনে আসবে। রিয়েল টাইমে বসে প্রেডিক্ট করা আসলে কঠিন। তবে এটাও হতে পারে যে, শেফা❀লিই আমার সেই বইগুলোর কাছে পাঠককে টেনে আসবে। এগুলো সবই আসলে সম্ভাবনার কথা বলছি। শেষ পর্যন্ত সব শূন্যও হয়ে যেতে পারে।