এবার আপনার নতুন বই বেরিয়েছে—ইচ্ছেশ্রাবণ। বইটি সম্পর্কে ছোট্ট করে কিছু বলুন।
বিধান সাহা: বইয়ের কিছু লেখা বিচ্ছিন্নভাবে আগে লিখিত হলেও অধিকাংশ লেখাই ২০২০ সালে, করোনা♍কালে যখন প্রায় সবকিছু স্থবির হয়ে আছে, তখন নিয়মিত লিখতে শুরু করেছিলাম। সিলেট থেকে প্রকাশিত কবি জাহেদ আহমদ তাদের গানপার-এ ‘ইচ্ছেশ্রাবণ’ শিরোনা🔯মেই ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করেছিলেন। সেই লেখাগুলোর সঙ্গে পরবর্তী সময়ে আরও কিছু লেখা যুক্ত করে এই ইচ্ছেশ্রাবণ।
১১টি গদ্য নিয়ে ইচ্ছেশ্রাবণ-এর এই সংকলন। হঠাৎ একপশলা হাওয়া এসে ছুঁয়ে দিয়ে যাওয়ার পর স্পর্শের যে অনুভূতিটুকু অবশিষ্ট থাকে, এই লেখাগুলোও তেমন। জীবনের নানান অভিঘাতের ভেতর দিয়ে যেতে যেতে যে অনুভূ🗹তিটুকু শেষতক আবিষ্ট করে রাখে সেই নির্যাসটুকুই হয়তো এই লেখাগুলোর প্রাণ। মূলত আমার বিষণ্ণতাকে কাটিয়ে উঠতে যে ট্রমাগুলো রিলিজ করতে হয়, সেগুলোই ইচ্ছেশ্রাবণ। স্মৃতির-চাবুক থেকে পালাতে গিয়ে আত্মরচিত যে বৃত্ত মানুষ নিজেই এঁকে নেয়, আমি হয়তো সেই বৃত্তের ভেতর আত্মভোলা এক দর্শক। যে নিজের খেয়ালে একটু একটু করে টুকে রাখতে চায় আত্মরচিত মানচিত্রের দশদিক।
লেখালেখির পাশাপাশি আপনি সম্পাদনার সঙ্গেও যুক্ত। সেই জায়গা থেকে জানতে চাই, বাংলাদেশে যে ওয়েবম্যাগগুলো আছে, সেগুলো কতটা সুসম্পাদিত? আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
বিধান সাহা: নিয়মিত না হওয়ায় বাংলাদেশে সেই অর্থে দু-একটি সুসম্পাদিত ওয়েবম্যাগাজিন ছাড়া তেমন কোনো ওয়েব তো চোখে পড়ে না। হয়তো কেউ কেউ খুব ভালো কাজ করে চলেছেন কিন্♕তু অনিয়মিত হওয়ায় সেসব নিয়মিত লক্ষ রাখার সুযোগ হয় না। দিনকে দিন ওয়েবম্যাগাজিনগুলো হয়তো লিটলম্যাগাজিনেরই ডিজিটাল ভার্সন হয়ে উঠ🦹ছে। তবে অর্থনৈতিক সমর্থন পেলে ওয়েবে অসাধারণ কিছু কাজ করা সম্ভব।
বাংলাদেশের কবিতার সাম্প্রতিক প্রবণতা নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ জানতে চাই।
বিধান সাহা: একটা ট্রানজিশনাল পিরিয়ড অতিক্রম করছে বলে মনে হচ্ছে। অ্যানালগ থেকে ডি🍬জিটালি আমাদের যে বিবর্তন, চিন্তায়, অভিব্যক্তিতে, প্রকাশে তার প্রতিফলন পড়ছে। এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় নৈরাজ্য, বৈশ্বিক অস্থিরতা, যুদ্ধ—আমরা সম্ভ🧸বত এতকিছুর সঙ্গে তাল মিলিয়ে উঠতে পারছি না। ফলে একটা নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কবিতায়ও এগুলোয় ছাপ পড়ছে। এগুলো একটা শেপে আসতে সময় লাগবে বলে মনে হচ্ছে।
সহজ-সস্তা বিনোদন যখন আপনার হাতের মুঠোয়,🤡 তখন কে আর কবিতার মতো ‘নিরস’ জিনিসের কাছে যাꦫয়!
বইমেলার গুরুত্বপূর্ণ অংশ লিটলম্যাগ চত্বর। এটাকে ঘিরে একসময় তরুণ লেখকদের আড্ডা জমত। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্থানান্তরিত হওয়ার পর কি এই আড্ডা হারিয়ে গেল?
বিধান সাহা: শুধু স্থানান্তরকে আমি এককভাবে দায় দিতে চাই না। স্থানান্তর অনেকগুলো কারণের মধ্যে হয়তো একটা কারণ। খেয়াল করলে দেখবেন, একই সঙ্গে আড্ডারত বন্ধুরাও এখন নিজেদের মধ্যে গল্প করা বাদ দিয়ে ডুবে থাকে মোবাইলের স্ক্রিনে। মানুষ বಞিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে মানুষ থেকে। আমাদের এখন দেখা হয় ফেসবুকে, কথা হয় ফেসবুকে। আমরা দিনকে দিন ফেসবুক-মানুষ হয়ে যাচ্ছি। ফলে আগের বহেরাতলায় লিটলম্যাগ চত্বর থাকলেও তা আগের মতোই প্রাণময় থাকত—এটা নিশ্চিত করে বলা কঠিন।
বইমেলায় দেখা যাচ্ছে পাঠকরা কোনো না কোনোভাবে চেনাজানা মানুষদেরই বই কিনছেন। এর বাইরে পাঠকদের আগ্রহ খুব একটা বেশি নয়। বিশেষ করে তরুণ লেখকদের ক্ষেত্রে। এটাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
বিধান সাহা: এই চেনাজানা মানুষ কিন্তু লেখকের আত্মীয় নন সবাই। অর্থাৎ আমি দেখছি যে ভার্চুয়ালি হয়তো তারা পরিচিতি। সেই পরিচয় সূত্রে ক্রেতা হচ্ছেন। সামনের দিনে আমি তো দেখতে পাচ্ছি লেখকেরা নিজেরাই নিজেদের বই প্রকাশ করবেন। এই ‘পরিচিত’ পাঠকেরাই সেসবের ক্রেতা হবেন। এটাতে দোষের কিছু নেই। আগে মানুষꩵ পত্রিকায় বা টিভিতে হয়তো লেখকের নাম জানতেন, সেই সূত্রে তার বইটি সংগ্রহ করতেন। এখন পাঠক নিজেই তার পছন্দের লেখক⛄কে খুঁজে নিচ্ছেন। রুচি অনুযায়ী পাঠক এখন ভাগ হয়ে যাচ্ছে।
বইমেলা পাঠক-লেখকদের সম্মিলন। বর্তমানে মেলার যে আঙ্গিক তাতে সেরকম সুযোগ আছে কি? নাকি অন্যসব মেলার মতো বইমেলাও শ্রেফ ‘বেচাকেনা’র একটি মেলায় পরিণত হয়েছে?
বিধান সাহা: পাঠক-লেখকদের সম্মিলন একটা উদ্দেশ্য বটে, কিন্তু মূল উদ্দেশ্য ব্যবসা। অন্তত প্রকাশকের তরফে চিন্তা করলে। শুধুই লেখক-পাঠকের সম্মিলন উদ্দেশ্য হলে তা অন্য আরও অনেক রকমভাবেই করা সম্ভব। যেমন: সেমিনার, সাহিত্য সম্মেলন ইত্যাদি। ব্যাবসা না হলে মেলার গুরুত্বও দেখা যাবে হারিয়ে যাচ্ছে। প্রকাশকরা নতুন বই প্রকাশে আগ্রহ হারাচ্ছেন, লেখকও তার নতুন লেখাটি গ্রন্থাকারে প্রকাশ করতে আগ্রহ পাচ্ছেন না। ফলে বইমেলা যদি ‘স্রেফ বেচাকেনার’ মেলাতেও পরিণত হয় তাতে আমি দোষের কিছু দেখছি না। তবে প্রকাশকদের এ ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। মানুষের মনন তৈরিতে ভূমিকা রাখবে, জাতিগঠনে ভূমিকা রাখবে সর্বপরি মানুষের উপকার হবে এমন বই প্রকাশ করলে প্রকাশকদের যে ভূমিকা তা তাদের পালন করা হয়। কেবল ‘বিক্রি হবে’ এমন যেকোনো কনটেন্টই বই আকারে যেন না আসে সেদিকে লক্ষ রাখা তাদের নৈতি💮ক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
আপনাকে ধন্যবাদ। সংবাদ প্রকাশকে ধন্যবাদ। সবাইকে ভালোবাসা।