“ইম্যাজিন দেয়ার ইজ নো হ্যাভেন, ইটস ইজি ইফ ইউ ট্রাই; নো হেল𒀰 বিলো আস, অ্যাভব আস, অনলি স্কাই; ইম্যাজিন অল দ্য পিপল, লিভিং ফর টুডে; আহ!” এই কথাগুলো ইংলিশ সং⛦গীত শিল্পী জন লেননের ‘ইম্যাজিন’ গানের প্রথম অংশ। যে গান দিয়ে শান্তির বার্তা দিয়েছিলেন লেনন। জাত, ধর্ম, বর্ণ ভুলে মানবতায় বিশ্বাসী হতে আহ্বান ছিল তার। এই গানের শেষ কথাগুলো হলো, “ইউ মে সে আই এম এ ড্রিমার, বাট আই এম নট দ্য অনলি ওয়ান; আই হোপ সাম ডে ইউ উইল জয়েন আস, অ্যান্ড দ্য ওয়ার্ল্ড উইল লিভ অ্যাজ ওয়ান।”
জন লেনন মানবিক পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই স্বপ্নের বাণী মানুষের কাছে পৌঁছে দেন গানের মাধ্যমে। তার এই বার্তা ঠিক পৌঁছ๊েছে বিশ্বের আনাচে-কানাচে। লেননের স্বপ্নের মতো বাস্তবেও ঘটেছে এমন। গড়ে উঠেছে মানবিক সমাজ, যেখানে নেই ধর্মের বিভেদ, অর্থের দম্ভ কিংবা রাজনীতির আধিপত্য। শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্যিই রয়েছে এমন এক জায়গা।
বলছি, ভারতের ভূখণ্ডে ছোট্ট এক জনপদ অরোভিলের কথা। এই শহর তামিলনাডুর ভিলুপ্পুরম জেলার মধ্যে অবস্থিতᩚᩚᩚᩚᩚᩚᩚᩚᩚ𒀱ᩚᩚᩚ। তবে কিছুটা অংশ কেন্দ্রশাসিত পুদুচেরিরে পড়েছে। অরোভিলের ভিত্তি গড়ে ওঠে গত শতকের ছয়ের দশকে। লেনন কি জানতে পেরেছিলেন গোটা পৃথিবী না হোক, অন্তত এই গ্রহের এক টুকরো অংশে কিছু মানুষ একত্রিত হয়েছেন, যারা তারই মতো ‘ড্রিমার’।
অরোভিলের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের তথ্য মতে, এখানে এসে বাস করতে পারেন বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের মানুষ। এই শান্তির শহরে বর্তমানে ৬০টিরও বেশি দেশের প্রায় ৩ হাজার মানুষের বসবাস। এখানে নেই কোনো ধর্ম, গোত্র, বর্ণ, রাজনীতি, দেশ ও জাতীয়তার বিভেদ। অপরাধের পরিমাণ শূন্য। এই শহরের একমাত্র আদর্শ মানবতা। এখানকার সব কর্মজীবীর বেতন গড়ে ১২ হাজার রুপি, তিনি যেই হোন না কেন। মানুষের বিলাসিতার জন্য অর্থ উপার্জনের প্রতিযোগিতা নেই। শান্তি ও সুরক্ষার এক আদর্শ জনপদ এই অরোভিল। এখানে নেই কোনো ধর্মীয় উপাসনালয়, আছে কেবল একটি মন্দির। সেখানে শুধু নিরবতা পালনে জন্য মানু🅺ষ যায়। এই জনপদের শিক্ষা-চিকিৎসা-বাসস্থান সবই কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে।
অরোভিলের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক বঙ্গসন্তানের নাম। তাকে চেনে না এমন বাঙালি খুব পাওয়া যাবে, তিনি ঋষি অরবিন্দ ঘোষ। ১৯২৬ সা𒀰লে পণ্ডিচেরিতে (বর্তমানে পুদুচেরি) স্থাপিত হয়েছিল ‘শ্রীঅরবিন্দ আশ্রম’। তবে রাজনৈতিক নেতা থেকে অধ্যাত্ম-সাধনা ও দর্শনের পথে এগিয়ে চলা অরবিন্দ বেশিদিন আশ্রমের সঙ্গে জড়িয়ে থাকেননি। শিষ্য মীরা আলফাসাকে সব দায়িত্ব দিয়ে তিনি চলে যান অন্তরালে। আলফাসা পরে অরোভিলের ‘মাদার’ নামে প্রসিদ্ধ হন। সেই থেকে অরবিন্দের স্বপ্নকে সত্যি করার দায়ভার পড়ে ‘মাদারের’ উপরে। তার মনে হয়েছিল অরবিন্দের নির্দেশিত পথে চলতে গেলে এমন জনপদꩲ প্রয়োজন, যেখানে সমমনস্ক মানুষরা একত্রিত হতে পারবেন। এই চিন্তা থেকেই জন্ম নেয় অরোভিল। ব্রিটিশ স্থপতি রজার অ্যাঙ্গারের পরিকল্পনায় ১৯৬৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ভিত্তি গড়ে ওঠে এই জনপদের।
সে সময় চারটি মূল নীতির ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠা করা হয় অরোভিল, যা ‘মাদার’ মীরা আলফাসা নিজ হাতে লিখে গেছেন। প্রথম নীতি হলো, অরোভিল কারো অন্তর্গত নয়; সমগ্র মানবতার অন্তর্গত। দ্বিতীয়ত এখানে 𝔉বাস করতে হলে ঐশ্বরিক চেতনার স্বেচ্ছাসেবক হতে হবে। তৃতীয়ত অরোভিল হবে এক অন্তহীন শিক্ষা ও নিরন্তর অগ্রগতির জায়গা; অতীত ও ভবিষ্যতের মধ্যে সেতু সৃষ💞্টি করতে চায় অরোভিল। চতুর্থত অরোভিল হবে বস্তুগত ও আধ্যাত্মিক গবেষণার স্থান; যা প্রকৃত মানবিক ঐক্যের জীবন্ত মূর্ত প্রতীক।
অরোভিল ধর্মীয় বিশ্বাসের ঊর্ধ্বে সত্যের সেবায় বিশ্ব꧒াস করে। শহরের একেবারে কেন্দ্রে রয়েছে এক মন্দির, যার নাম ‘মাতৃমন্দির’। সব মানুষই এখানে একত্রিত হয়ে ধ্যানে অংশ নেন। আলাদা করে কোনো নির্দিষ্ট ধর্মীয় আচরণের চিহ্ন এখানে নেই। একইভাবে এখানে নেই কোনো রাজনৈতিক কাঠামো। কোনো রাজনৈতিক দল এখানকার প্রশাসন চালায় না। শহরের সমস্ত প্রাপ্তবয়স্ক বাসিন্দা প্রশাসনের অংশ। তারাই একত্রিত হয়ে সমস্ত সিদ্ধান্ত নেন।
এখানকার অর্থনীতিও বিস্ময়কর। ‘সেবার বদলে সেবা’ নীতি অনুসরণ করে চলে এখানকার নগদবিহীন অর্থনীতি। প্রাগৈতিহাসিক আমলে আদিম মানুষরা যখন একটু একটু করে গড়ে তুলছেন সভ্যতা ও সমাজ, তখন প্রচলিত ছিল বিনিময় প্রথা। সেই প্রথারই এক আধুনিক রূপ গড়ে তুলেছে অরোভিল। প্রত্যেক বাসিন্দার একটি ক﷽রে অ্যাকাউন্ট নম্বর রয়েছে। সেটি আবার শহরের কেন্দ্রীয় অ্যাকাউন্টের সঙ্গে যুক্ত। প্র🦹তি মাসেই অনুদান দিতে হয় বাসিন্দাদের। তবে কেবল অর্থ নয়, শ্রমের বিনিময়ও অনুদান হিসেবে গণ্য হয়।
এই জনপদের ভিত্তির শুরুতেই ‘মাদার’ জানিয়ে দিয়েছিলেন, এখানে অর্থের কোনো বিনিময় হবে না। কেবল বাইর🏅ের পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে অর্থ ব্যবহৃত হবে। তার স্বপ্ন ছিল, অর্থ এখানকার ‘সার্বভৌম ঈশ্বর’ হয়ে উঠবে না। বস্তুগত সম্পদ আর সামাজিক অবস্থানের চোখ রাঙানি বন্ধ করাই তার প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল। তবে বাইরে থেকে এখানে এলে অতিথিদের💖 একটি অরোকার্ড দেওয়া হয়, যা কার্যত এখানকার ডেবিট কার্ডের সমতুল্য।
প্রথম দিকে শহরের🐠 সব নিয়ন্ত্রণ ছিল ‘শ্রী অরবিন্দ সোসাইটি’র হাতে। কিন্তু ১৯৮০ সাল থেকে শহরটির প্রশাসন ভারত সরকারের নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে দেশের সরকার ‘অরোভিল ফাউন্ডেশন’-এর ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকলেও গোটা বাজেটের অল্প পরিমাণই সরকার দেয়। অরোভিলের বাণি☂জ্যিক ইউনিটগুলো থেকেই আসে বাজেটের মূল অর্থ। মুনাফার ৩৩ শতাংশ অরোভিলের কেন্দ্রীয় তহবিলে অনুদান হিসেবে জমা পড়ে। শহরজুড়ে রয়েছে ৪০ রকমের শিল্পের সংস্থান। পুদুচেরিসহ দেশের বিভিন্ন অংশ, এমনকি বিদেশেও বিক্রি হয় এখানে তৈরি নানা পণ্য। রয়েছে রেস্তোরাঁ, অতিথি নিবাস; নিজস্ব ইমেইল নেটওয়ার্ক।
এইভাবেই গত কয়েক দশক ধরে ধীরে ধীরে বেড়𝔉েছে এখানকার জনসংখ্যা। গোটা পৃথিবীকেই যেন এক যৌথ স্বপ্ন দেখায় অরোভিল। আবার মনে পড়ে যায় জন লেননের গানের কিছু অংশ, “ইম্যাজিন নো পজেশন্স, আই ওন্ডার ইফ ইউ ক্যান; নো নিড ফর গ্রিড অর হাঙ্গার, অ্য ব্রাদারহুড অফ ম্যান।” ঠিক এমন স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে আজও আশা জাগায় অরোভিল।