• ঢাকা
  • সোমবার, ০২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Songbad Prokash

ইনস্টাগ্রাম

টুইটার


লিংকডইন

পিন্টারেস্ট

গুগল নিউজ


স্বপ্ন দেখি, মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেয়েছি : মাস্টার রনি


বিজন কুমার
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৬, ২০২৩, ০২:০০ পিএম
স্বপ্ন দেখি, মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেয়েছি : মাস্টার রনি

১৯৭১-এর ২৬ মার্চ গণহত্যা শুরুর পর ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জন করে বাংলাদেশ। য൩ে রক্ত𓄧ক্ষয়ী সংগ্রামে অংশ নিয়েছিলেন লাখো বাঙালি। রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের বিনিময়ে ছিনিয়ে আনা সেই বিজয়ের পাঁচ দশক পেরিয়েছে।

আজ শনিবার, ১৬ ডিসেম্বর। বছর ঘুরে আবার এসেছে সেই বিজয়ের আনন্দ। এবারের বিজয় দিবসে সংবাদ প্রকাশের আয়োজন তৃতীয় লিঙ্গের মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর হালিমকে ঘিরে। যিনি ‘মাস্🦩টার রনি’ নামে পরিচিত। স্বাধীনতার ৫২ বছর পূর্ণ হলেও, যিনি আজও পাননি মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি।

মুক্তিযুদ্ধকালীন মাস্টার রনির সঙ্গে ঘটে যাওয়া নানান বিষয়ে কথা হয় সংবাদ প্রকাশের। তার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি জানিয়েছেন সেদিনের কথা। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ নিয়েছেন সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক বিজন কুমার

সংবাদ প্রকাশ : মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন কীভাবে?

মাস্টার রনি : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন ৭ই মার্চের ভাষণ দিলেন। তখন থেকেই আমাদের গ্রামের যুবকরা দেশের জন্য কিছু করার চিন্তা করতে শুরু করলেন। এরপর দেশে যুদ্ধ শুরু হলো, আমাদের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম হানাদার বাহিনীর কবজা✤য় চলে গেল। সেসময় আমরা সপরিবারে ভারতꦆের রাধানগরে আশ্রয় নিলাম।

কিছুদিন পর রাধানগর বাজারে দেখতে পেলাম যুবকরা একত্রিত হচ্ছে। তাদের কাছে একত্রিত হওয়া♚র কারণ জানতে চাইলাম। শুরুতে কেউ কারণ বলতে না চাইলেও, একপর্যায়ে তারা বলে, “বাংলাদেশের জন্য মুক্তিবাহিনী গঠন করা হচ্ছে, তোর কী অভিমত?” বললাম, “আমাদের দেশ আজকে শত্রুর কবলে। আমরা এগিয়ে না আসলে আসবে কে? দেশের♏ শক্তি তো যুবকরাই” এই বলে আমি খাতায় নাম লিখলাম।

সংবাদ প্রকাশ : মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে বাবা-মার প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল?

মাস্টার রনি : মুক্তিবাহিনীতে যোগ দে♒ওয়ার ব্যাপা🍸রে আমার মা-বাবা কিছুতেই রাজি হচ্ছিলেন না। পরে মা রাজি হলেও, বাবা বেঁকে বসলেন। তিনি কাঁদতে শুরু করলেন।

বাবাকে তখন আমি সান্ত্বনা দিয়ে বললাম, ‘দেখ বাব꧙া, একদিন না একদিন মৃত্যু হবেই। বাধা দিয়েন না। দোয়া রাখেন। যেন আপনার বুকে ফিরে আসতে পারি।’ এরপর অনেক বুঝিয়ে অনুমতি পেলাম। তিনি তার♛ (বাবা) হাতে আমাকে ভাত খাইয়ে বিদায় দিয়েছিলেন।

সংবাদ প্রকাশ : মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণের আগে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন কোথায়?  

মাস্টার রনি : মুক্তিবাহিনীতে আমরা যারা নাম লিখিয়েছিলাম, তাদের প্রথমে নেওয়া হয়েছিল ভারতের রাজনগর ক্যাম্পে। সেখানে কিছুদিন প্রশিক্ষণের পর নেওয়া হলো আগরতলার কাছাকাছি চরিলাম এলাকার একটি ক্যাম্পে। সেখানেও কিছুদ🎀িন ট্রেনিং নিয়ে আমাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় আসামের লায়লাপুরে। লায়লাপুরে ৪৫ দিনের প্রশিক্ষণ শেষে আমরা চলে আসি মেলাঘর ক্যাম্পের হেডকোয়ার্টারে। সেই ক্যাম্পের নেতৃত্বেই যুদ্ধ করেছিলাম।

সংবাদ প্রকাশ : প্রশিক্ষণ শেষ, এবার যুদ্ধে যাওয়ার পালা। প্রথম মিশন কেমন ছিল?

মাস্টার রনি : শুরুর দিকে যাকে যেখানে যুদ্ধের নির্দেশ দেওয়া হতো, সেখানেই তাকে যুদ্ধ করতে হতো। কুমিল্লার নির্ভয়পুরে ছিল প্রথম মিশন। এলাকাটি পরিচিত না হওয়ায় যুদ্ধ করতে অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। একটা সংঘর্ষে একদিন অনেক ক্ষয়-ক্ষতিও হয়েছিল। সেদিন যুদ্ধ শেষে মেলাঘর হেডকোয়ার্টারে চলে আ🐽সার পর সিদ্ধান্ত, সকলকে তার পরিচিত এলাকায় পাঠানো ♓হবে। এরপর থেকে কুমিল্লা চৌদ্দগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধ করেছি।

সংবাদ প্রকাশ : যুদ্ধকালীন একটি স্মরণীয় ঘটনা শুনতে চাই।

মাস্টার রনি : একদিন যুদ্ধ করতে গিয়ে আমরা এক বাড়িতে আশ্রয় নিলাম। সেই ꦡবাড়ির মুরুব্বি বললেন, ‘তোমাদের যত ধরনের সহযোগিতা দরকার করবো। তোমরা চিন্তা করো না।’ সেদিন দুপুর থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত বেশ করে খাওয়ালেন তিনি। সেদিন তার বাড়িতে একরাত থাকলাম।

পরদিনে সকালে মুরুব্বি এসে বিড়ি সিগারেটের ব্যবস্থা করার কথা বলে বেড়িয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ বাদে তার মেয়ে এসে বললেন, ‘আপনার আরও খাবার খাবেন। নাকি প্রাণ 🅷বাঁচাবেন। আমার বাবা শান্তি কমিটির মেম্বার।’

তার কথা শুনে আমরা সকলেই অ🐼বাক। তাড়াহুড়ো করে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে খানিক দূরে তার বাবার কর্মকাণ্ড দেখার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। কিছুক্ষণ বাদে দেখলাম ত𓂃িনি পাকিস্তানি বাহিনী নিয়ে তার বাড়ির দিকেই আসছেন। যথারীতি তাদের আক্রমণ করে ছত্রভঙ্গ করে দিলাম আমরা।

সংবাদ প্রকাশ : সেদিন ওই রাজাকারকে কি মেরেছিলেন?

মাস্টার রনি : তার মেয়ে আমাদের প্রাণ রক্ষা করেছিল। একটি মেয়ের সামনে তার বাব🌃াকে হত্যা করবো? এই কষ্ট সেই মেয়েটিকে দিতে চাইনি। ক্যাম্পে ফিরে বিষয়টি সকলকে জಌানালে অন্য একটি গ্রুপ পাঠিয়ে ওই রাজাকারকে হত্যা করা হয়েছিল।

সংবাদ প্রকাশ : যুদ্ধের সময় পর্যাপ্ত খাওয়ার ব্যবস্থা ছিল না। পেটে ক্ষুধা নিয়ে যুদ্ধ করার অভিজ্ঞতা জানতে চাই।

মাস্টার রনি : যুদ্ধকালীন পেটের ক্ষুধাকে, ক্ষুধা মনে হয়নি। শুধু পানির ওপরে বেঁচে ছিলাম। আমাদের মনে একটღাই চিন্তা, দেশ কীভাবে শত্রুমুক্ত হবে। সেই চিন্তা করতে গিয়ে, পরনের কাপড় আর খাওয়ার চিন্তা কিছুই মাথায় আসতো না🀅।

সংবাদ প্রকাশ : যুদ্ধ শেষে বাড়ি ফিরে গেলেন। বাবা-মা কীভাবে বরণ করলেন?

মাস্টার রনি : ১৯৭১ এর ১৮ ডিসেম্বর বাড়ি ফিরলাম। আমার বাবা-মা সকলেই জড়িয়ে ধরে অনেক কাঁদলেন। তাদের সন্তান ফিরেဣ এসেছে। কী যে তাদের আন෴ন্দ। গ্রামবাসী দেখতে এসেছিলেন সেদিন।

সংবাদ প্রকাশ : আজ বিজয় দিবস। ১৯৭১ এর বিজয়ের দিনটির অনুভূতি কেমন ছিল?

মাস্টার রনি : যেদিন পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করল, সেদিনের অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। আজও সেদিনের উল্লাসের কথা 🌌ম😼নে আছে।

সংবাদ প্রকাশ : স্বাধীনতার অনেক বছর পেরিয়ে গেল। কেমন আছেন?

মাস্টার রনি : মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট হারিয়ে ফেলেছি। তাই আজও স্বীকৃতি মেলেনি। স্বাধীনতার এত বছর পেরিয়ে গেল। এখনো স্বপ্ন দেখি, ‘আমি মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেয়েছি।’ জানি না স্💫বপ্ন সত্যি হবে কি না।

সংবাদ প্রকাশ : কাগজপত্র যখন কাছে ছিল তখন যোগাযোগ করেননি কেন?

মাস্টার রনি : বিগত সরকারগুলোর আমলে মুক্তিযোদ্ধাদের গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। যতদূর জানি, সেই সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ফাঁসি দিয়ে মারা হয়েছে। এতে অনেক মুক্তিযোদ্ধা ভয়ে সার্টিফিকেট ছিঁড়ে ফেলেছিলেন। তাই আর যোগাযোগ করিনি। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে। বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের মূল্যায়ন করছেন। যুদ্ধ𝓀াপরাধীদের বিচারও করছেন। সরকারের কাছে শুধু একটাই আবেদন, আমার স্বীকৃতি। 

 

কথাপ্রকাশ বিভাগের আরো খবর

Link copied!