• ঢাকা
  • বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Songbad Prokash

ইনস্টাগ্রাম

টুইটার


লিংকডইন

পিন্টারেস্ট

গুগল নিউজ


হাওরে মানুষের সংগ্রামী জীবন


মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়া, সুনামগঞ্জ
প্রকাশিত: আগস্ট ৫, ২০২১, ০৮:৪৪ এএম
হাওরে মানুষের সংগ্রামী জীবন

বাংলাদেশের হাওর এলাকা হিসেবে পরিচিতি সুনামগঞ্জ জেলা। এই জেলার বেশি ভাগ গ্রাম হাওরের মাঝে অবস্থিত। তাই বর্ষাকাল এলেই জেলার লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। এ সময় ঝড় ও হাওরের বিশাল আকৃতির ঢেউয়ের আঘাতে ভেঙে যায় বসতবাড়ি ও গাছপালা। বাঁশ, খড়, মাটি, কচুরিপানা, ঘাস দিয়েও বসতবাড়ি রক্ষা করা সম্ভব হয় না। তখন গবাদিপশু, পাখি নিয়ে পড়তে হয় চরম বিপদে। সে জন্য বাধ্য হয়ে কম মূল্যে বিক্রি করতে হয়। তখন দেখা দেয় খাওয়ার পানির তীব্র সংকট। হাওর এলা😼কার যোগাযোগের কাঁচা ও পাকা বেশির ভাগ নিচু সড়কগুলো থাকে পানির নিচে। এ জন্য কাঠের তৈরি ছোট-বড় ইঞ্জিনচালিত নৌকা দিয়ে হাওরের মানুষকে যাতায়াত করতে হয়। তখন নৌকা ডুবে প্রায়ই ঘটে প্রাণহানির ঘটনা। বছরের ছয় থেকে সাত মাস পানিবন্দি থাকতে হয় হাওরবাসীকে। তাই বিভিন্ন সমস্যার সঙ্গে লড়াই করতে হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুনামগঞ্জ জেলার অবহেলিত তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জ, ধরমপাশা-মধ্যনগর ও দিরাই-শাল্লা উপজেলার বেশির ভাগ মানুষ হাওরে কৃষিকাজ ও মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। বর্তমানে জেলার চারদিকে পানি থইথই করছে। হাওরের মাঝে অবস্থিত গ্রামগুলোকে দূর থেকে দেখলে দ্বীপের মতো মনে হয়। ভাঙাচোরা পাকা সড়ক দিয়ে উপজেলা সদর থেকে জেলা শহরে কোনোরকম যাতায়াত করা যাচ্ছে। কিন্তু উপজেলা সদরের সঙ্গে বেশির ভাগ গ্রামের সড়ক যোগাযোগ বিছিন্ন রয়েছে। তাই ছোট-বড় ইঞ্জিনের নৌকা দিয়ে জী🌊বনের ঝুঁকি নিয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করছে হাওরের মানুষগুলো। হাওর এলাকাগুলোর প্রধান সমস্যা হচ্ছে অকাল বন্যা ও ফসলহানি। এ ছাড়া রয়েছে সমুদ্রাকৃতির বিশাল ঢেউ। আর বন্যা দেখা দিলে হাওর এলাকার মানুষের দুর্ভোগের কোনো শেষ থাকে না। এ সময় তারা ঘরের ভেতর বাঁশ দিয়ে মাচা তৈরি করে বসবাস করে। আর পানির পরিমাণ বেশি বাড়লে কেউ কলার ভেলায় আবার অনেকেই নৌকার মাঝে আশ্রয় নেয়। তবে বন্যার সময় হাওর এলাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিণত হয় অসহ𓃲ায় মানুষের আশ্রয়কেন্দ্রে। এ সময় কেউ মারা গেলে মৃতদেহ দাফন-কাফন কিংবা সৎকারের ব্যবস্থা থাকে না। গো-খাদ্য, জ্বালানি কাঠ, শুকনা খাবারসহ বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি তীব্র সংকট দেখা দেয়। পল্লী বিদ্যুতের মাধ্যমে হাওরের গ্রামগুলো বিদ্যুতায়িত হলেও বেশির ভাগ গ্রাম থাকে অন্ধকারে। কারণ, সঠিকভাবে বিদ্যুৎ দেওয়া হয় না। বর্ষাকালে হাওরাঞ্চলে বেড়ে যায় চোর-ডাকাতের উপদ্রব। নৌকাযোগে ডাকাতরা এসে বিছিন্ন গ্রামগুলোতে হানা দেয়। এলাকার মানুষ সারা রাত জেগে পাহারা দিয়েও রক্ষা করতে পারে না তাদের মূল্যবান সম্পদ।

এ ছাড়া সুনামগঞ্জ জেলার হাওর এলাকা দেশের অন্যান্য স্থানের তুলনায় শিক্ষার দিক দিয়ে রয়েছে অনেক পিছিয়ে। বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। কিন্তু তার আগে থেকেই হাওরাঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্বে থাকা শিক্ষকদের অবহেলার কারণে প্রতিবছরই ঝরে পড়েছে হাজার হাজার শিশু শিক্ষার্থী। কারণ, শিক্ষা কর্মকর্তারা নিয়মিত স্কুল পরিদর্শন ও তদারকি না করার কারণে শিক্ষকরা নিয়মিত স্কুলে না যান না। বেশির ভাগ শিক্ষক রাজনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা কাজে ব্যস্ত। ফলে নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে হাওরাঞ্চলের বেশির ভাগ স্কুল। তা ছাড়া হাওর এলাকাগুলোতে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট সারা বছরই লেগে থাকে। তাই হ🍌াওর ও পুকুরের পানি পান করতে হয় হাওরবাসীকে। এ 🅠ছাড়া বেশির ভাগ মানুষ খোলা ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। এ কারণে ডায়রিয়া, আমাশয়, কলেরাসহ নানা পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয় তারা। কিন্তু উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত ডাক্তার-নার্স ও ওষুধ না থাকার কারণে চিকিৎসাসেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে হাওরবাসী। এসব সমস্যার সঙ্গে লড়াই করে প্রতিনিয়ত বেঁচে আছে সুনামগঞ্জ জেলার হাওর এলাকার লাখ লাখ অসহায় মানুষ। কিন্তু তাদের এসব সমস্যা দেখার কেউ নেই।

এ ব্যাপারে তাহিরপুর জয়নাল আবেদী🦋ন মহাবিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক আলী মর্তুজা বলেন, বর্তমান সরকার সারা দেশের📖 উন্নয়নের জন্য যে ভূমিকা নিয়েছে, তা খুবই প্রশংসনীয়। কিন্তু হাওরের বেড়িবাঁধ নির্মাণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবহেলার কারণে কৃষকদের ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়। উপজেলার বেশির ভাগ রাস্তাঘাট ভাঙাচোরা। সেগুলো দ্রুত মেরামত করাসহ স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন করা জরুরি।

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বাসিন্দা ব্যবসায়ী কামাল হোসেন, লোকমান হোসেন, হুমায়ুন কবি😼রসহ আরও অনেকে বলেন, বর্ষাকা🌊ল এলেই শক্তিয়ারখলা-বিশ্বম্ভরপুর সড়কটি ডুবে যায়। বন্যা হয়ে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এ ছাড়া নানান দুর্ভোগে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে। কিন্তু এসব সমস্যা দেখার কেউ নেই।

জামালগঞ্জ উপজেলার প্রবীণ সাংবাদিক ও কৃষক তৌহিদ চৌধুরী প্রদীপ বলেন, হাওরের বেড়িবাঁধগুলো কখনোই সঠিকভাবে নির্মা🎃ণ করা হয় না। প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকরা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেন না। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তাররা এসে বেশি দিন থাকে না। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা থেকে সব সময় আমরা বঞ্চিত। এ ছাড়া জামালগঞ্জ থেকে সুনামগঞ্জ যাতায়াতের প্রধান সড়কসহ হাওর এলাকার বেশির ভাগ সড়কই যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী। এসব সমস্যা দীর্ঘদিনের হলেও আজ পর্যন্ত সমাধান হয়নি। আমরা হাওর এলাকার মানুষཧ সব সময় সব দিক থেকেই চরম অবহেলিত।

Link copied!