• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Songbad Prokash

ইনস্টাগ্রাম

টুইটার


লিংকডইন

পিন্টারেস্ট

গুগল নিউজ


এক বার ধান রোপণে চিন্তা নেই ৫ বছর


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ২১, ২০২১, ০৮:০৫ পিএম
এক বার ধান রোপণে চিন্তা নেই ৫ বছর

মৌলভꦡীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের কানিহাটি গ্রামের একটি ধান গাছ এখন পাঁচবার ফলন দেবে। এমন এক নতুন ধরনের ধান গাছের উদ্ভাবন𓃲 ঘটিয়েছেন ধান গবেষক ও জিনবিজ্ঞানী কুলাউড়ার আবেদ চৌধুরী। 

দেশের কৃষিনির্ভর এ গ্রামের দিগন্তজোড়া মাঠে এখন ধানক্ষেত। শিশিরভেজা বাতাসে দুলছে সোনালি ফসল। উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের কানিহাটি গ্রামের বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের পাশে আমতলা মাঠে দুই বিঘা জমি ঘিরে এখন টান টান উত্তেজনা। কারণ এই জমির ধান সাধারণ নয়।༺ এই ধান ভিন্ন প্রকৃতির। বিস্ময় জাগানো পাকা এ ফসল কাটা শুরু হয়েছে। চারা রোপণের পর এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো একটানা ধান কাটা হলো। একবার রোপণে এ ধানের গাছে বছরজুড়ে পাꦏঁচবার ফলন আসায় নিভৃত কানিহাটি গ্রাম থেকে এখন সৃষ্টি হচ্ছে নতুন এক ইতিহাস।

নতুন এ ধানের জাত উদ্ভাবন ꦓকরেছেন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী ধান গবেষক ও জিনবিজ্ঞানী আবেদ চৌধুরী।

আবেদ চৌধুরী জানান, বোরো হিসেবে গত বছরের প𒁃্রথমে লাগানো এ ধান ১১০ দিন পর পেকেছে। ওই গাছেই পর্যায়ক্রমে ৪৫-৫০ দিন পরপর🦂 একবার বোরো, দুইবার আউশ এবং দুইবার আমন ধান পেকেছে। ইতোমধ্যে কৃষকরা পাঁচবার ধান কেটেছেন।

এক গাছে পাঁচবার ফলনের এমন ঘটনা পৃথিবীতে বিরল বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তবে আবেদ চৌধুরী আছেন তার উদ্ভাবন আরও এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টায়। তিনি ওই গাছেই ছয়বার ফসল আনার জন্য গবেষণা চালিয়ে যাবে꧋ন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। পাশাপাশি নতুন জাতের ধানটি সারাদেশে চাষাবাদ সম্ভব কি না তা যাচাই করবেন। এজন্য বিভিন্ন জেলায় এ ধানের পরীক্ষামূলক চাষ করবেন।

আবেদ চৌধুরীর মতে, কম স𒅌ময়ে পাকা এই ধানের উৎপা⛦দন বেশি, খরচ কম। তবে প্রথম ফলনের চেয়ে পরের ফলনগুলোতে উৎপাদন কিছুটা কম হয়। কিন্তু পাঁচবারের ফলন মিলিয়ে উৎপাদন প্রায় পাঁচগুণ বেশি।

কুলাউড়ার কানিহাটি গ্রামের সন্তান আবেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ🎃ি বিষয়ে উচ্চশিক্ষা শেষে চাকরি নিয়ে চলে যান অস্ট্রেলিয়ায়। সেখানকার জাতীয় গবেষণা সংস্থার প্রধান ধানবি🍌জ্ঞানী হিসেবে ধানের জিন নিয়ে গবেষণা করে কাটিয়ে দিয়েছেন ২০ বছর। এ পর্যন্ত তিনি প্রায় ৩০০ রকমের নতুন ধান উদ্ভাবন করেছেন। পেশাগত কারণে বিদেশের মাটিতে গবেষণা করলেও দেশে তার গ্রাম কানিহাটিতে গড়ে তুলেছেন খামার।

আবেদ চৌধুরী বলেন, আম-কাঁঠালের মতো বছরের পর বছর টিকে থাকার সৌভাগ্য ধান গাছের হয় না- এটা কোনোভাবেই মানতে পারছিলাম🅺 না। তাই নেমে পড়ি গবেষণায়।

ধান গাছের দ্বিতীয় জন্ম নিয়ে ১৪ বছর ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান আবেদ চৌধুরী। ২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসে কানিহাটি গ্রামে ২৫ বর্গমিটারের একটি ক্ষেতে ২০টি ধানের জাত নিয়ে গবেষণা শুরু করেন তিনি। এর মধ্যে চী𒈔ন, ফিলিপাইনসহ বিভিন্ন দেশের ও স্থানীয় ধানের জাত ছিল। যে জাতগুলোর ধান পাকার পর কেটে নিয়ে গেলে আবার ধানের শীষ বের হয়, সেগুলো তিনি আলাদা করেন। এভাবে ১২টি জাত বের করেন তিনি। তিন বছর ধরে জাতগুলো চাষ করে দেখেন, নিয়মিত এগুলো দ্বিতীয়বার ফলন দিচ্ছে। তারপর তিনি শুরু করেন একই গাছে তৃতীয়বার ফ🌄লনের গবেষণা। তাতেও সফল হন। কিন্তু এর মধ্যে চারটি জাত ছাড়া বাকিগুলো চতুর্থবার ফলন দিয়ে ধ্বংস হয়ে যায়।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, দেশে হেক্টরপ্রতি ধান উৎপাদন হয়ে থাকে তিন থেকে চার টন। আবেদ চৌধুরী বলেন, এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, সারা পৃথিবীর জন্য ঐতিহাসিক। আমার নিজ গ্রাম কানিহাটির কৃষকদের সমন্বয়ে ♎আমি এটি করতে পেরেছি। সারা বছর যেহেতু ধান দিচ্ছে, সেহেতু বর্ষজীবী বলা যেতে পারে। কারণ একটি ঋতুর পরই সাধারণত ধানের জীবনের অবসান ঘটে।

নতুন ধানের নামকরণ বিষয়ে আবেদ চৌধুরী বলেন, একই গাছের শরীর থেকে পাঁচবা👍র ♛ধান বেরিয়ে আসে। ফলে এই ধানের নাম দিতে চাই ‘পঞ্চব্রীহি’। নামকরণের ব্যাখ্যা তুলে ধরে তিনি বলেন, ধানকে ব্রীহি বলা হয়। এটা যেহেতু পাঁচবার ফলন দিয়েছে, সেহেতু ‘পঞ্চব্রীহি’ নাম দিতে চাই। পরবর্তীতে ষষ্ঠবার ফল দিলে ষষ্ঠব্রীহি নামকরণ করা যেতে পারে। তবে এই ধানের নাম এখনও চূড়ান্ত করেনি।

পঞ্চমবার ফলন দেওয়া ধান উদ্ভাবন সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরে আবেদ চৌধুরী বলেন, এর আগে আমি অন্য ধানের জাত উদ্ভাবন করেছি। দুইবার ফসল হয়, এমন ধানও উদ্ভাবন করেছিলাম; যাকে আন্তর্জাতিক মিডিয়া ‘রাইস টু আইস’ বলেছে। আবার অনেকে ‘জীবন বর্ধিত ধান’ বলেছে। এই প্রথম সারা বছর ধরে আমার অন্য আরেকটি ধানের জাত মাঠে থাক🅠ল। এ ধানের চারা ৫ সেন্টিমিটার দূরত্বে রোপণ করতে হয়। ফলে গাছটি মাটি থেকে ভালোভাবে শক্তি নিয়ে বেড়ে উঠতে পারে এবং একটি ধান গাছ থেকে আরও বেশ কয়েকটি ধান গাছ গজাতে থাকে।

আবেদ চৌধুরীর উদ্ভাবনী নতুন এ ধানের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বরত কান💙িহাটি গ্রামের কৃষক রাসেল মিয়া জানান, পরীক্ষামূলকভাবে দুই বিঘা জমিতে এ ধান রোপণ করা হয়। সফলভাবে পাঁচবার গাছ থেকে ধান কাটা হয়েছে। গাছ থেকে একবার ধান কাটা হলে ধান গাছের গুড়ি যত্ন করে রেখে দিলে সেই গাছে আবার ফলন চলে আ𝓡সে। তাই আগামী বোরো মৌসুমে এ অঞ্চলে প্রায় ২০ কিয়ার জমিতে আবার উদ্ভাবনকৃত নতুন ধান রোপণ করা হবে।

Link copied!