সাতক্ষীরা শহরে যানজট এখন নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাঝেমধ্যে যানজট এতটাই তীব্র থাকে, পাঁচ মিনিটের রাস্তা অ💧তিক্রম করতে ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যায়। শহরের ব্যস্ততম নিউমার্কেট ও পাকাপোল মোড়ে প্রতিদিনই লেগে থাকে যানজট। পাকাপোলের দুই পাড়ের দীর্ঘ যানজটের কারণে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী মানুষ সঠিক সময় গস্তব্যে পৌঁছাতে পারেন না। এতে লক্ষাধিক মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। ব্যাটারিচালিত অবৈধ ভ্যান ও ইজিবাইকের নৈরাজ্য যার মুখ্য কারণ।
এসব নিরসনের উদ্যোগ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সাতক্ষীরা পৌরসভা ও ট্রাফিক বিভাগ কাজ করছে। কিন্তু আজ অবধি দৃশ্যমান কোন🌞ো অগ্রগতি দেখেনি পৌরবাসী।
পথচারী ও যাত্রীদের অভিযোগ, ইচ্ছে হলেই যেখানে সেখানে ‘অঘোষি♕ত স্ট্যান্ড’ বানিয়ে ব্যাটারিচালিত অবৈধ ভ্যান, ইজিবাইক ও বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানামা করার ফলে এলাকার মূল সড়কগুলোতে প্রতিদিন যানজট লেগেই থাকে। এ ছাড়া অবৈধ যানবাহনের বেপরোয়া গতির কারণে দুর্ঘট𝓀না লেগেই আছে।
সাতক্ষীরা পৌরসভা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৮৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত সাতক্ষী💛রা পৌরসভার আয়তন ৩১ দশমিক ১০ বর্গকিলোমিটার। লোকসংখ্যা প্রায় দুই লাখ। পৌরসভায় ২০১ কিলোমিটার পাকা সড়ক রয়েছে। শহরের মধ্যে পড়েছে ৩০ কিলোমিটার সড়ক। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে সাতক্ষীরা পৌরসভা ৬৯৫টি ইজিবাইক🧔ের লাইসেন্স অনুমোদন করে। এরপরে আর কোনো লাইসেন্স অনুমোদন দেয়নি পৌরসভা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পৌর এলাকায় সড়কের প্রস্থ অনেক কম, সড়কের পাশে নেই ফুটপাতও। এখন সাতক্ষীরা পৌরসভার মধ্যে প্রতিদিনই ৩ থেকে ৪ হাজার ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত অবৈধ ভ্যান চলাচল করছে। বেশি আয়ের জন্য বিভিন্ন ইউনিয়ন এবং উপজেলা থেকে এসব যানবাহন সরাসরি শহরে প্রবেশ করছে। যেকারণে শহরবাসী সী❀মাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এখন জনসাধারণের ভোগান্তির মুখ্য কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে অবৈধ ভ্যান ও ইজিবাইক।
রোববার (১০ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত শহরে অবস্থান করে দেখা গেছে, শহরের শহীদ নাজমুল সরণি, শহীদ কাজল সরণি, শহীদ সিরাজ সরণি, সাতক্ষীরা-কালীগঞ্জ সড়কের শহীদ আলাউদ্দিন চত্বর থেকে ইটেগাছা পর্যন্ত, সাতক্ষীরা-যশোর সড়কের নিউ মার্কেট থেকে সার্কিট হাউস মোড় পর্যন্ত, নারিকেলতলা-টাউন বাজার ব্রিজ হয়ে পাকাপোল, তুফান মোড়, সুলতানপুরের কেষ্টময়রার মোড়, বড়বাজার মোড় এবং পুরাতন সাতক্ষীরা সড়কে প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, ট্রাক এবং যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে বেপরোয়া গতিতে ব্যাটারিচালিত অবৈধ ভ্যান-ইজিবাইক অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলাচল করছে। প♏্রধান এই সড়কগুলোতে শুক্র ও শনিবার ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিনই তীব্র যানজট লেগে থাকে।
শহরের সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাফান্নুন নুসরাত বলে, “ভ্যান-ইজিবাইকের কারণে আমাদের চলাচলে চরম অꦯসুবিধা হচ্ছে। ছুটির পরে স্কুলের সামনে ভ্যান ও ইজিবাইক দাঁড়িয়ে থাকে, আর এক পাশে গাড়ি চলে। যে কারণে ⛄চলাচল করতে পারি না, রাস্তা পার হওয়া খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। যানযটে আটকে প্রতিদিনই প্রায় আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা সময় নষ্ট হয়। আমাদের চলাফেরা করা খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে।”
স্থানীয় পরিবেশ কর্মী অর্পণ বসু বলেন, “সাতক্ষীরার সড়কগুলোতে অবৈধ ভ্যান-ইজিবাইকের চলাচল একটি গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর সমাধানে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। স্থানীয় প্🗹রশাসন, ট্রাফিক পুলিশ এবং জনগণের যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসা প্রয়োজন, যাতে শহরে🎐র পরিবহন ব্যবস্থা নিরাপদ ও সুষ্ঠু রাখা সম্ভব হয়।”
🍰সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, “আশির দশক পর্যন্ত সাতক্ষীরার যোগাযোগ ব্যবস্থা ও ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল নদী কেন্দ্রিক। কিন্তু নৌপথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন যোগাযোগের একমাত্র পথ সড়ক। কিন্তু গত পঞ্চাশ বছরে সাতক্ষীরা শহর বাইপাস সড়ক ছাড়া আর কোনো নতুন সড়ক তৈরি হয়নি। এমন কি পুরাতন সড়কগুলো আগের মতই রয়েছে, সেগুলো প্রস্থ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এই সময়ে শহরে জনসংখ্যা বেড়েছে কমপক্ষে দশগুণ। প্রতিদিন ব্যবসা বাণিজ্য অফিস আদালতে হাজার হাজার মানুষ শহরে আসছে। ফলে যানবাহন বেড়েছে শতগুণেরও বেশি।”
আবুল কালাম আজাদ আরও বলেন, শহরের মধ্যে প্রচুর অবৈধ যান চলাচল করে; যার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। ফুটপাতগুলো নানাভাবে দখল করে রেখেছে দোকানদাররা। এছাড়া শহরের বাইরে দিয়ে একটি বাইপাস সড়ক থাকলেও অনিয়ন্ত্রিতভাবে প্রচুর যানবাহন শহরের মধ্য দিয়ে চলাচল করছে। প্রশাসন ও পৌরকর্তৃপক্ষে য😼ৌথভাবে কাজ করলে শহরের যানজট নিরসন করা সম্ভব হবে।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম মুনীর জানান, সড়কে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সাতক্ষীর💎া ট্রফিক পুলিশ অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। শহরের যানজট নিরসনে জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে সাতক্ষীরা পৌরসভা থেকে অনু🐈মোদিত ৬৯৫টি ইজিবাইক ছাড়া অন্য কোনো ইজিবাইক চলতে পারবে না। যানজট নিরসনে অবৈধ যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণে আনতে দ্রুত কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এ ব্যাপারে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।