ক্রিকেট, ফুটবল কিংবা যেকোনো খেলার মাঠ, ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্বে থাকা মানুষটি ভুল করবেন সেটা স্বাভাবিক। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভুল মেনে নেওয়াটা বেশ কঠিন! এই যেমন বৃটিশ রেফ𝓀ারি গ্রাহাম পোল ক্রোয়েশিয়ান ফুটবলার জোসিপ সিমুনিককে একই ম্যাচে দেখিয়েছিলেন তিন হলুদ কার্ড। তাও কিনা বিশ্বকাপ ফুটবলের মতো বড় মঞ্চে। অথচ ফুটবল মাঠে একই ম্যাচে এক ফুটবলারের তিনটি হলুদ কার্ড দেখার কোনো সুযোগই নেই।
ঘটনাটা খুব বেশি পুরাতন না। ২০০৬ জার্মানি বিশ্বকাপের গ্রুপ ‘এফ’-র শেষ ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার প্রতিপক্ষ ছিল অস্ট্রেলিয়া। জিতলেই দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত এমন সমীকরণে মাঠে নেমেছিল দু’দল। ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্𒈔ব পড়েছিল বৃটিশ রেফারি গ্রাহাম পোলের উপর। আগের দুই ম্যাচে দারুণভাবে পরিচালনা করা পোল ভুল করবেন না এমন ভরসাতেই এই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের দায়িত্ব পেয়েছিলেন।
প্রথম দুই ম🐲্যাচের পারফর্মেন্স অবশ্য ধরে রাখতে পারেননি পোল। তৃতীয় 💟ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ান ডিফেন্ডার জোসিপ সিমুনিককে দেখান তিন হলুদ কার্ড। অথচ দুই হলুদ কার্ডের পরই সিমুনিকের মাঠের বাইরে যাওয়ার কথা ছিল!
ম্যাচের সপ্তম মিনিটে অস্ট্রেলিয়ার এক ফুটবলারকে বাজেভা𒁃বে ফাউল করেন সিমুনিক। ওই ফাউলের কারণে লাল কার্ড ꧒দেখার কথা থাকলেও ম্যাচের গুরুত্ব বিবেচনায় হলুদ কার্ড দিয়ে সিমুনিককে সতর্ক করেছিলেন পোল।
সিমুনিকের ফাউলের পর এগিয়ে থাকা ক্র༒োয়েশিয়াকে স্তব্ধ করে ৩৮তম ♏মিনিটে সমতায় ফিরে সকারুজরা। বিরতি থেকে ফিরে ৫৬তম মিনিটে আবারও এগিয়ে যায় ক্রোয়াটরা।
এই গোলের পাঁচ মিনিট পর ৬১তম মিনিটে সকারুজ ফুটবলার হ🔴্যারি কেউয়েলকে ফাউল করেন সিমুনিক। দেখেন ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় হলুদ কার্ড। তবে অবাক করার বিষয়, দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখানোর পর সিমুনিককে লাল কার্ড দেখাতে বেমালুম ভুলে গিয়েছিলেন পোল। রেফারি ভুল কর✱লেও সিমুনিক অবশ্য ড্রেসিং রুমে ফেরার পথ ধরেছিলেন।
কিন্তু হঠাৎই সিমুনিক বুঝতে পারেন পোল তাকে লাল কার্ড দেখাননি। বিষয়টি বুঝতে পেরে ড্রেসিং রুমের প🎶থ ধরলেও বাইরে যাননি সিমুনিক। আশেপাশে না দেখেই তিনি মাঠ ছাড়তে উদ্যত হয়েছিলেন, কিন্তু মাঠের বাইরে যাওয়ার আগেই অন্য ক্রোয়াট ফুটবলাররা তাকে আটকে দেন।
মূলত ক্রোয়েশিয়ান ফুটবলাররা রেফারির ভুল বুঝতে ✤পারলেও সংশোধনের কোনো চেষ্টা করেননি। কারণ দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করার গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচের শেষ ২৯ মিনিট কোনোভাবেই একজন খেলোয়াড় কম নিয়ে খেলতে রাজি ছিল না তারা। ক্রোয়াট খেলোয়াড়োরা বুঝতে পারলেও অস্ট্রেলিয়ান ফুটবলাররা বিষয়টি ভুলবশত খেয়াল করেননি। চোখে পড়েনি সহকারী রেফারি, লাইন্সম্যান কিংবা চতুর্থ রেফ🍨ারিরও।
এই ঘটনার পর ম্যাচের ৭৫তম মিনিটে আবারও ভুল করে বসেন গ্রাহাম পোল। ক্রোয়েশিয়ার ডি বক্সে স্টেপান টমাসের হাতে বল লাগলেও অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে পেনাল্টির বাঁশি ব💛াঁজাননি। পেনাল্টি না পেলেও মিনিট চারেক🥀 পর অবশ্য সমতায় ফেরে অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু হ্যারি কেউয়েলের গোলটি শেষমেষ অফসাইডের কারণে বাতিলের খাতায় যায়।
পরে বহু চেষ্টা করেও কোনো দল প্রতিপক্ষেরꦿ জালে বল ঢুকাতে পারেনি। ম্যাচের অন্তিম মুহূর্তে যখন ম্যাচের ফল নিশ্চিতভাবেই ক্রোয়াটদের পক্ষে যাচ্ছে তখনই আবার অস্ট্রেলিয়ান ফুটবলারকে ফাউল করেন জোসিপ সিমুনিক। এবꦐারও পোল তাকে হলুদ কার্ড দেখান। ম্যাচে এটি সিমুনিকের ছিল তৃতীয় হলুদ কার্ড। অবশ্য রেফারি পোলের হিসেবে সেটি ছিল দ্বিতীয় হলুদ কার্ড। এবার আর লাল কার্ড থেকে বাঁচতে পারেননি সিমুনিক, অন্তিম মুহূর্তে মাঠ ছাড়েন। সিমুনিকের বিদায়ের আগেই জয় নিশ্চিত করে দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত হয় ক্রোয়েশিয়ার।
এই ঘটনার পর বিশ্বজুড়ে উঠে সমালোচনার ঝড়। পোলকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি 🍎দিয়ে দেশে ফেরত পাঠানো হয়ꦓ। সুযোগ হারিয়ে নিজের আন্তর্জাতিক রেফারিং ক্যারিয়ারকেও বিদায় দেন পোল।
আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারকে বিদায় বললেও ঘরোয়া লিগে আরও বেশ কিছুদিন নিয়মিত রেফারিং করꦰেছিলেন। মানুষ মাত্রই ভুল হয় তবুও ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্বে ফেরার দিনে গ্যালারি থেকে ফুটবল সমর্থকদের দুয়োর শিকার হয়েছিলেন। এমনকি দর্শকরা হলুদ প্ল💮্যাকার্ডে ‘তিন’ লিখে তা মাঠে প্রদর্শনও করে।
মারাত্মক এই ভুলের পরও গ্রাহাম ♔পোলকে ইংল্যান্ডের ইতিহাসের অন্যতম সেরা রেফারি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মানুষ মাত্রই ভুল করে, তবে পোলের ওই ভুলটা মেনে নেওয়া কঠিন, অন্তত বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে।