বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নেতা মহিবুল্লাহর হত্যা একটি উদ্বেগজনক ঘটনা। য🦹দিও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সহিংসতার ঘটন🅺া আগেও ঘটেছে, কিন্তু শরণার্থীদের উচ্চপর্যায়ের নেতৃত্বে আসীন কোনো ব্যক্তিকে হত্যার ঘটনা খুব স্বাভাবিক ঘটনা নয়। ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে মোহাম্মদ ইউসুফের হত্যাকাণ্ডের পরে এই ধরনের বড় ঘটনা ঘটেছে বলে মনে হয় না। হেড মাঝি আরিফ উল্লাহকে হত্যা করা হয়েছিল ওই বছরের জুলাই মাসে। ২০১৯ সালে যুবলীগ নেতা ওমর ফারুককে হত্যার ঘটনার পরে যেসব রোহিঙ্গা তরুণ পুলিশের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন, তাঁদের মধ্যে রোহিঙ্গাদের একজন নেতা নূর মোহাম্মদ ছিলেন। শরণার্থী রোহিঙ্গাদের মধ্যে মহিবুল্লাহর প্রভাব ছিল ব্যাপক, তিনি বহুল আলোচিতও বটে। ২০১৯ সালে হোয়াইট হাউসে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গেও সাক্ষাতের কারণে তিনি আলোচনায় এসেছিলেন, অনেকে তাঁর সমালোচনাও করেছেন।
মহিবুল্লাহ আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। ২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিশাল সমাবেশের সংগঠক হিসেবে মহিবুল্লাহ বিশেষভাবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। অত্যন্ত স্বল্প সময়ে কয়েক লাখ শরণার্থীর উপস্থিতি নিয়ে কোনো কোনো মহলের পক্ষ থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। সেই সময়ে এই ধরনের সমাবেশের ব্যাপার সরকারের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। উখিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধﷺুরী বলেছিলেন, রোহিঙ্গারা আমাদের ‘রেড সিগন্যাল’ দেখিয়েছে (কালের কণ্ঠ, ২৯ আগস্ট ২০১৯)। কোনো কোনো মহল থেকে সাম্প্রতিককালে বলা হচ্ছিল যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) উপস্থিতি আছে। সম্প্রতি ক্যাম্পে আরসার সদস্যদের উপস্থিতি বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল (সালিম সামাদ, ঢাকা ট্রিবিউন, ১৭ আগস্ট ২০২১)। এই কারণে পুলিশের অভিযান চালানো হয়েছিল। যদিও ২০২০ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশের সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে ক্যাম্পে আরসার উপস্থিতি নেই (ঢাকা ট্রিবিউন, ১৮ আগস্ট ২০২০)। এখন মহিবুল্লাহর হত্যাকাণ্ডের পর কেউ কেউ পরোক্ষভাবে আরসার দিকে ইঙ্গিত করছেন। কিন্তু এই ইঙ্গিত অন্য কিছুর ইঙ্গিত কি না, সেটা বিবেচনায় রাখা দরকার।
এই হত্যাকাণ্ড কেবল ক্যাম্পের নিরাপত্তার প্রশ্নের সঙ্গে জড়িত নয়, এর রাজনৈতিক তাৎপর্য অনেক বেশি। এর প্রতিক্রিয়া হবে বিভিন্ন ধ𒁏রনের। এতে করে রোহিঙ্গাদের স্বার্থ কতটা ক্ষুণ্ন হবে, রোহিঙ্গাদের ভেতরকার শক্তিগুলোর কী ধরনের বিন্যাস ঘটবে, এটা যেমন বিবেচ্য, তেমনি বিবেচ্য হচ্ছে এই ঘটনার আগে-পরে রোহিঙ্গাদের বাইরের কোন শক্তি কী ধরনের আচরণ করছে। মহিবুল্লাহর হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ীদের খুঁজে বের করা জরুরি। অপরাধীদের শাস্তি প্রাপ্য। তাদের খুঁজে বের করা দরকার এই কারণেও যে এই হত্যাকাণ্ডের কারণ বোঝা দরকার, এর ব্যাপ্তিও বোঝা জরুরি। হত্যাকারীদের উদ্দেশ্য কী, সেটা আগামীতে কী ঘটতে পারে তার ইঙ্গিত দেবে। কিন্তু এই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে, যা ক্যাম্পগুলোতে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।