• ঢাকা
  • রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Songbad Prokash

ইনস্টাগ্রাম

টুইটার


লিংকডইন

পিন্টারেস্ট

গুগল নিউজ


শেখ কামালকে হারানো অপূরণীয় ক্ষতি


মানজুর মোরশেদ
প্রকাশিত: আগস্ট ১৫, ২০২২, ০৫:০৮ পিএম
শেখ কামালকে হারানো অপূরণীয় ক্ষতি

‘উই উইল টেক অন এশিয়া!’ শেখ কামাল ফুটবল নিয়ে এই কথা প্রায়ই বলতেন প্রিয় বন্ধু কাজী সালাউদ্দিনকে। আজও সালাউদ্দিন সাহেব খুব𒁏 গর্বভরে এই কথা স্মরণ করেন। এই স্মৃতিচারণার মধ্যে দুঃ💖খ, হতাশা, ক্ষোভ, না-পারা—সবই লুকিয়ে আছে দগদগে ক্ষত হিসেবে। এই ব্যর্থতার দায় এবং দায়ী খোঁজা এই লেখার উদ্দেশ্য নয়, উদ্দেশ্য বাংলাদেশ আজ থেকে ৪৭ বছর আগে কী হারিয়েছে—সেটাই খানিকটা তুলে ধরার চেষ্টা করা!

রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, ‘সেই মণিটি ক’জন দিতে পারে, হৃদয় দিয়ে দেখিতে হয় যারে!’ শেখ কামাল প্রচলিত রাজনীতি ও ক্ষমতার বলয়ের বাইরে থেকে কাজ করতেন। একটি ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ শিশু রাষ্ট্রে চারপাশের অনেক নেই’র মাঝেও রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর সন্তান হিসেবে তিনি কোনো বাড়তি সুবিধা নিয়েছেন, এ কথা তাঁর শত্রুও প্রমাণ করতে পারেননি শেষ পর্যন্ত। কাজের জন্য যেটুকু দরকার সেটুকুতেই সন্তুষ্ট থেকেছেন। ২২-২৩ বছরের এক যুবকের পরিমিতিবোধ নিয়ে আজ যদি কেউ গবেষণা করেন, নিশ্চিত অবাক হবেন। যৌবনের ধর্মকে কে আটকাতে পারে, তা সে যদি হয় রাষ্ট্রের প্রধান তা-ও আবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো একজন মহীরুহের ছেলে? তাঁর বন্ধুবর স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অন্যতম সংগঠক সাইদুর রহমান প্যাটেলের কাছে শোনা, যখনই কোনো সুন্দরী তরুণꦫী সুদর্শন এই যুবরাজের কাছে ভিড়তে চেয়েছেন, তখনই তিনি তাকে ‘বইন’ বলে সম্বোধন করতেন। খুব দূরদর্শী ছিলেন, বিতর্ক এড়িয়ে চলতে পারতেন সহসাই।

বঙ্গবন্ধুর সব গুণ যেন ভর করেছিল শেখ কামালের মধ্যে। মুগ্ধ করার মতো এক প্রতিভা। দেশ স্বাধীনের পর মাত্র সাড়ে তিন বছর বেঁচেছিলেন, কিন্তু এই🌸 সময়ে রাজনীতি নয়, তিনি বরং ব্যস্ত ছিলেন দেশের ক্রীড়াঙ্গন ও শিল্প-সংস্কৃতি নিয়ে। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য স্পন্দন, মঞ্চনাটকের জন্য ঢাকা থিয়েটার আর খেলাধুলার জন্য গড়ে তুলেছিলেন আবাহনী। নিজে সংস্কৃতি চর্চা করতেন, খেলতেন ক্রিকেট-বাস্কেটবল। আবাহনী সৃষ্টির পর তার সভাপতির দায়িত্ব কিন্তু শেখ কামাল নেননি! ভাবা যায়? নিয়েছিলেন ৭৪ সালে, যখন ক্লাবটিকে সামনে এগিয়ে নিতে আর কোনো বিকল্প ছিল না! তিনি সাংস্কৃতিক আন্দোলন ও খেলার মাঠে যে জোয়ার সৃষ্টি করেছিলেন, তাতে ভাটা আসতে সময় লাগেনি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের হাতে প্রথম শহীদ হন বঙ্গবন্ধুর বড় পুত্র শেখ কামাল। আজও তাঁর কাছের অনেককে বলতে শুনি, সেদিন যদি শেখ কামাল কোনোভাবে বেঁচে যেতেন, আজকের এই বাংলাদেশ ভিন্ন রকম হতো! বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্নের সোনার বাংলার ছবি একেঁছিলেন সাড়ে ৭ কোটি বাঙালির মনে, কামাল তার বাস্তব রূপ দেওয়ার মতো মেধাসম্পন্ন ছিলেন! স্বপ্ন দেখাতে পারা ও বিনির্মাণের এক ক্ষণজন্মা পুরুষ ছিলেন শেখ কামাল।

তাঁর বড় বোন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মৃতিচারণায় বলেছেন, তিনি যখন স্বামী ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে জার্মানি চলে যাচ্ছেন, তখন শেখ কামালের আবদার আবাহনী ক্লাবের ফুটবলারদের জন্🌸য সর্বাধুনিক বুট চাই। যেটা সেই সময় এই উপমহাদেশের কোনো ক্লাবের পক্ষে চিন্তা করাই দূরাশা ছিল! আজ যখন দেখি শেখ কামালের সেই যে স্বপ্ন বাংলাদেশের ফুটবলকে এশিয়া মানে নেওয়া, সেটি মুখ থুবড়ে পড়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায়ই ভারত যোজন-যোজন এগিয়ে গেছে, মালদ্বীপ-নেপালের সঙ্গেই পারে না এখন বাংলাদেশ! ৪৭-৪৮ দেশের এএফসি ꦚর‌্যাঙ্কিংয়ে বলতে গেলে চল্লিশের মধ্যে থাকাই দায়!

তাঁর আরেক বন্ধু বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের বর্তমান মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা দুঃখ করে বলেন, ‘কামাল বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ অলিম্পিক পদক জিতে যেত এত দিন’। এর মধ্যে আসলেই বাড়াবাড়ি নেই, তিনি শেখ কামাল সম্পর্কে ধারণা দিতে গিয়ে নিজেদের ব্যর্থতাকে স্বীকার করেছেন, কিন্তু সত্যিটাই বলেছেন হয়তো! সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের দেশ, যার বয়স ৫০ পেরিয়ে গেছে, আজ পর্যন্ত একটি অলিম্পিক পদক নেই, ভাবা যায়? বাংলাদেশের পরে জন্ম নিয়ে𒈔, ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর ছোট দেশও পদক জিতেছে অলিম্পিকে! এ বড় ব্যর্থতার কথা, এ বড় শোকের কথা! ১৫ আগস্ট শেখ কামালের চলে যাওয়ার দিনে দুই শোক মিলে হৃদয় আরও ব্যথিত করে তোলে। মাত্র ২৭ বছর বয়সে যে লোকটি ঘাতকের বুলেটে বিদীর্ণ হয়ে পৃথিবী ছেড়ে গেছেন, তাকে যথাযথ সম্মান জানানোর মতো ক্রীড়াঙ্গন এ দেশে হয়ে উঠতে পারেনি! সংস্কৃতিচর্চা ও মঞ্চনাটকের দুরবস্থা নিয়ে না হয় না-ই বললাম!

শেষ করব শেখ কামালের নির্মোহ ও সাধারণ জীবনভাবনা নিয়ে একটি স্মৃতি বলে। তিনি ক্লাব ক্রিকেটে আবাহনীর হয়ে পেস বোলিং ওপেন করতেন লিগে। সে সম𒊎য় আবাহনীর অধিনায়ক ছিলেন আলিউল ইসলাম। একবার মাঠে মিস ফিল্ডিং করেছিলেন🔯 কামাল, সঙ্গে সঙ্গে অধিনায়ক ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতাকে মাঠের বাইরে বের করে দেন, ডাকেন দ্বাদশ ফিল্ডারকে। কামালও অধিনায়কের কথামতো মাঠ থেকে বেরিয়ে যান। আজ যারা ক্ষমতার অপব্যবহার করেন, তাদের জন্য কামাল কি অনুকরণীয় আদর্শ রেখে যাননি? রাষ্ট্রপতির ছেলে হিসেবে কখনোই সীমা লঙ্ঘন করেননি। অথচ করলে কেউ তাকে আটকানোর ছিল না এ দেশে! ক্রীড়া ও শিল্পাঙ্গনে তাঁর মতো সংগঠক আর পায়নি বাংলাদেশ। তাঁর জন্মদিন আর ১৫ আগস্ট এলেই তাঁকে হারানোর হতাশা ও শোক বেড়ে যায় বহুগুণ। দুর্ভাগ্য, আমরা তাঁকে হারিয়ে ফেলেছি চিরদিনের জন্য!


লেখক : বিশেষ প্রতিনিধি, যমুনা টেলিভিশন

Link copied!