রানা প্লাজার ধংসস্তূপে যারা দিনরাত স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছেন, পরবর্তী সময়েꦰ তাদের অনেকেই এক ধরনের ট্রমাতে ভুগেছেন। এত লাশ, এত আহত মানুষের আহাজারি, এত কাছে থেকে নিজ চোখে দেখে সহ্য করার মতো শক্তি খুব 🌟কম মানুষেরই রয়েছে। একপর্যায়ে একজন স্বেচ্ছাসেবক তো আত্মহননই করে ফেললেন!
মুক্তিযুদ্ধের পর পর অনেক স্বজনহারা মানুষ মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। আসলে এত অত্যাচার, এত নির্যাতন, এত রক্তপাত দেখে সুস্থ থাকাটাও অস্বাভাবিক। একইভাবে বলা যায়, শেখ হাসিনা একজন ট্রমাটাইজ মানুষ ছিলেন। খালেদা জিয়াও স্বামীকে হারিয়ে ট্রমাটাইজ ছিলেন। শেখ মুজিবকে হত্যা করে যারা ক্ষমতার মসনদে বসেছিলেন, ত𝓡াদের অপরাধ ও বিবেকহীনতা, কতটা মানসিক সুস্থতায় রেখেছিলো, তা ইতিহাসবিদেরাই ভালো বলতে পারবেন। এরপর চলে আসে এরশাদের নাম, একজন সামরিক শাসক। সামরিক ব্যক্তিদের দেহের রক্ত মাংস, মন প্রাণ আত্মা দীর্ঘদিনের প্রশিক্ষণে এমনভাবে পরিবর্তন করে ফেলা হয় যে তারা আর সাধারণ মানুষের মতো হাসতে পারেন না, কাঁদতে পারেন না, সাধারণ মানুষের সাথে মিশতে পারেন না। তাই স্বাভাবিকভাবে ভালোও বাসতে পারেন না। তারা হয়ে ওঠেন এক ধরনের পাথরের মানুষ।
বাংলাদেশের কোনো শাসনামলে জনগণ কখনোই মানসিকভাবে সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের সরকার পায়নি। এমন কি প্রতিটি নাগরিকও কোনো না কোনোভাবে ট্রমাটাইজ। স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি যেখানে নেই, সেখানে মানুষের আচরণে স্বাভাবিকতা প্রত্যাশা করা, তাদের ওপর আরও মানসিক চাপের সৃষ্টি করা হবে। শিশু থেকে বৃদ্ধ প্রত্যেকের জীবনেই কোনো না কোনো ট্রমা রয়েছে। অসুস্থ পরিবেশে থাকতে থাকতে সুস্থ মানুষও এক সময় অসুস্থ হতে শুরু করেন। ফলে একটা ট্রমাটাইজ জাতির আচরণে সবসময় স্বাভাবিকতা আশা করাই উচিত নয়। একটা আনন্দ উল্লাসেও জান্তব আচরণ আপাতত তাই মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। আশার কথা এই যে, আমাদের সামনে উদাহরণ রয়েছে জাপানের। পারমাণবিক বোমায় বিধ্বস্ত ট্রমামাইজ জাপান কিন্তু ঠিকই সু♏স্থতা, স্বাভাবিকতা জীবনের সব ক্ষেত্রে ফিরিয়ে এনেছে।
এখন ব্যক্তিগতভাবে আমার শুধু একটাই চাওয়া, পরবর্তী সরকারে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ, স্বাভাবিক, সুখী মানুষ দ🐭েখতে চাই। কোথায় সেই সুখী মানুষ, তোমার জামাটা আমাদের দিও।
লেখক : শিক্ষক ও লেখক