টিপ পরলে মৌলবাদের গা রি রি করে। কেন করে? কারণ, টিপ ওদের কাছে হিন্দুদের চিহ্ন। আর হিন্দু মানেই পরিত্যাজ্য। হিন্দু মানে সে মুসলমান নয়। মুসলমান ছাড়া ওরা আর কাউকে বাংলাদেশে থাকতে দেবে না। কারণ, বাংলাদেশ ওরা ‘কিনে’ নিয়েছে। কী দিয়ে কিনল? কিনেছে ওই রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, এই বিধান 🐽দিয়ে। ওরা আরও কিনে নিয়েছে একদল মিথ্যাবাদী ক্ষমতালোভী রাজনীতি করা লোককে, যারা লোভ আর স্বার্থের প্রয়োজনে বিকিয়ে দিয়েছে আমাদের চেতনা, আমাদের বিবেককে।
মৌলবাদ এখন ঢুকে পড়েছে ফাঁকফোকরে। ওরা হিন্দুদের তাড়াবে। খ্রিষ্টান, বৌদ্ধসহ সব ধর্মের লোককে তাড়াবে। সব আদিবাসীকে বিনাশ করবে। সেই সাথে তাড়াবে মুক্তচিন্তা, সংস্কৃতিমনা মান🥃ুষগুলোকে। সংস্কৃতি মানে তো বাংলার সংস্কৃতি, কৃষ্টি। ওগুলো ওরা শেষ করে দেবে। ওরা আরবের সংস্কৃতি চায়। সেখানকার আইন চায়। ওরা চায় যেকোনোভাবে হোক দেশ হবে মৌলবাদের আস্তানা। মৌলবাদী ক্ষমতালোভী একটি চক্র এর পেছনে বহুদিন ধরে কলকাঠি নাড়ছে। নানা কাঠখড় পোড়াচ্ছে। কিন্তু গেড়ে বসতে সমস্যা হচ্ছে ওদের। তাই ওরা এভাবে খুঁচিয়ে চলেছে আমাদের। ওদের ছোট-বড় দল ছড়িয়ে পড়ছে গ্রামে মফস্বলে শহরে। ওদের প্রধান টার্গেট নারী ও শিশু। ঠিক যুদ্ধে যা হয়। যুদ্ধে সবার আগে নির্যাতনের শিকার হয় নারী ও শিশু। ঠিক তেমনি।
ধর্মান্ধরা একটা যুদ্ধে 🦋নেমেছে। যুদ্ধটা চালাচ্ছে নানা কৌশলে। শুরু করেছে ধীরে। এখন সাড়ম্বরে জেঁকে বসেছে। ওরা প্রায় সর্বত্র ঘাঁটি গেড়েছে। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আইন আদালত, সবখানে ওরা আছে। এমনকি ক্ষমতাসীন সরকারও একপর্যায়ে দাবি করেছে যে তাদের রাজনৈতিক দলের ছাত্র ও যুব সংগঠনগুলোতে মৌলবাদীরা চুপিচুপি ঢুকে বসে আছে। তো এই হলো অবস্থা। সরকারও জানে ওরা আছে এবং এভাবে বিস্তার লাভ করছে। তাহলে সরকার কী করছে? ওদের দমন করছে?
যদি স্পষ্ট ভাষায় বলতে পারি, তবে বলতে চাই, না, আমরা সরকারকে মৌলবাদী নয়, বরং দমন করতে দেখছি মুক্তচিন্তার মানুষকে। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট দিয়ে নানাভাবে মৌলবাদবিরোধী মানুষকে চুপ করিয়ে রাখা হয়েছে। মৌলবাদীদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া হয়েছে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের নামে মানুষ মারা হয়েছে। গত দুই দশকে লাখ লাখ মানুষ ঘরছাড়া, দেশছাড়া হয়েছে।ꩵ প্রতিবছর পূজা ও অন্যান্য সময় মূর্তি ভাঙার উৎসব শুরু হয়। সরকার বলে, মৌলবাদীদের দমন করা হচ্ছে। তাই যদি হয়, তবে প্রতিবছর মূ⛦র্তি ভাঙে কারা? ওরা কোত্থেকে আসে? কোত্থেকে জন্মায়? নাকি ওরা জ্যামিতিক হারে বাড়ছে?
টিপ বাঙালিত্বের প্রতীক। বাঙালি মেয়েরা টিপ পরে। উপমহাদেশের বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কার মেয়েরা টিপ পরে। হাজার বছর ধরে এই সাজগোজের ধারাটা চালু আছে। মেয়েরা শাড়ি পরে, টিপ, চুড়ি পরে। এতে কাউকে জোর করার সুযোগ নেই। যার ভালো লাগে, সে পরে। এটাই ব্যক্তিস্বাধীনতা। ব্যক্তিস্বাধীনতার চিহ্ন ওই রক্তলাল টিপ। হতে পারে তার𝓰 উৎস ধর্মীয়। হতে পারে তা সধবার চিহ্ন ছিল এককালে। কিন্তু এখন টিপ আর তা নয়। বরং টিপ এখন রুদ্রতার প্রতীক। বিপ্লব বিদ্রোহের চিহ্ন। সাহস আর আত্মবিশ্বাসের ছবি আঁকা থাকে নার𓆉ীর কপালে টিপ হয়ে। তাই কি টিপকে এত ভয় ওদের? নারীকে দমন করতে না পেরেই কি ওরা টিপের ওপর চটে গেছে? সবাইকে ‘সাইজ’ করে ফেলতে পারলেও শিক্ষিত, মননশীল, রুচিশীল, প্রগতিশীল প্রজ্ঞাবান নারীদের একটি শ্রেণিকে ওরা কিছুতেই কবজা করতে পারছে না! তাতেই কি ওদের এত রাগ?
হ্যাঁ, ঠিক তাই। টিপকে♏ ওরা নারীব♊াদের প্রতীক বলে এ জন্যই। মিলেছে হিসাবটা?
দমন করতে চাইলে টিপ পরা বন্ধ তো হবেই না, বরং জোরসে চলবে এই লড়াই। নারীর সাহস, শক্তি, আত্মবিশ্বাস আর লড়াইয়ের তেজ অন্য জিনিস। নারীরা সহজে কাবু হয় না। হবেও না। নারীর রুদ্রমূর্তি তার ওই টিপের মতোই জ্বলে ওঠে। সূর্যের মতো জ্বালায় পোড়🦹ায়। সব বিকৃত চিন্তার আস্তানা ও মৌলবাদের অশুভ শক্তিকে তাই দম🦄ন করবে নারীরাই।
লেখক: সম্পাদক, ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টর