দেশ, জাতি, সভ্যতার বিনির্মাণের জন্য একটা মোচড় খুব জরুরি। একটা অভিঘাত। ভেতরে ভেতরে একটা ভাঙচুর। এ দেশের ফুট💖বলের জন্য নারীদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রফি🍒টা কি সেই মোচড়! সেই অভিঘাত!
যে দেশটার ফুটবল সভ্যতা বলে তেমন কিছু নেই। ঐতিহ্যের লকারে জমা বলতে কিছু আবেগ। আর রোমান্সের সবুজ মাঠ! কিন্তু সেই লকার ভেঙে হৃদয়ের সব আবেগ নিয়ে বাঙালি বুধবার রাজপথে🎉 নেমে এলো। বরণ করল সাফজয়ী নারী ফুটবলারদের। যারা ছাদখোলা বাসে ট্রফি নি✅য়ে ঘুরতে চেয়েছিলেন। ছাদখোলা বাসে চেপে তারা খোলা আকাশ দেখলেন। মনে মনে হয়তো গাইলেন: “আমার মুক্তি ফুটবলে ফুটবলে…।” সেই বাসের চারপাশে তখন ফুটবলীয় রোমান্সের বন্যা! চিৎকারে-সমর্থনে-মাদকতায় সেখানে অন্য এক বাংলাদেশের চিত্র। সেটা দেখে মনে হলো কিছুটা কল্পনা। কিছুটা সত্যি। বাকিটা ফুটবলীয় আবেগের লাভা!
একটা দিনে꧋র জন্য, কয়েকটা ঘণ্টার জন্য মনে হলো: যে ছাদখোলা বাসে চড়ে আকাশ দেখতে চেয়েছিলেন সাবিনা-সানজিদা-ঋতুপর্ণা-কৃষ্ণারা, সেই আকাশে শরতের মেঘের মাঝে হাওয়া হয়ে গেছে সাম্প্রদায়িকতা, উগ্রতা, নারীᩚᩚᩚᩚᩚᩚᩚᩚᩚ𒀱ᩚᩚᩚ-পুরুষের বৈষম্য, বিদ্বেষ সবকিছু! তা না হলে যানজট, গাড়ির হর্ন, কালো ধোঁয়ার মাঝে যে শহরের মানুষের জীবন অতিষ্ঠ, তারা কেন রাজপথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকবেন, মুখে স্লোগান দেবেন, ‘বাঘিনীদের গর্জন, বাংলাদেশের অর্জন!’, সাফ ফুটবলের একটা ট্রফি জয়েই কি মানুষের মধ্যে এই উচ্ছ্বাস তৈরি হলো?
হয়তো তাই। কিন্তু দেড় যুগ আগে নারীদের এই ফুটবল খেলা নিয়েই উগ্রতার পারদ বেড়ে গিয়েছিল ঢাকার রাজপথে। মেয়েরা মাঠে নেমে ফুটবল খেলবে! তা হতে দেওয়া যায় না! দেওয়া হবে না। নারী ফুটবল বন্ধের জন্য ব্যানার নিয়ে রাজপথে নেমে পড়েছিলেন বিভ্রান্তিতে ভোগা কিছু মানুষ! বন্ধ করা হয়েছিল ফুটবল! তারপর বুড়িগঙ্গায় অনেক পানি গড়িয়ে গেছে। নারী ফুটবল মাঠে ফেরানোর চেষ্টা হলো। অনেক আপসরফা হলো প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে। ট্রাউজার-ফুলস্লিপ শার্ট পরে মাঠে নামতে শুরু করꦰলেন মেয়েরা। তাদের উত্তরাধিকারী হিসেবে আজকের সাবিনা-সানজিদা-রূপা-কৃষ🍬্ণারা হিমালয়ের কোল থেকে ট্রফি এনে দিল দেশকে! সেটা হাফ প্যান্ট পরে। বাংলাদেশের জার্সি গায়ে জড়িয়ে।
এটাই হচ্ছে দেশজ নারী ফুটবলের বিবর্তন। কিন্তু বিপ্লব নয়। এই বিবর্তনেও কত মর্মভেদী চিত্র। আজ যা দৃষ্টির আড়ালে। তবে নারী ফুটবলারদের এই সাফল্য দেখে রবি ঠাকুরের একটা গানের কথাই মনে পড়ে। ‘ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলে, আগুন জ্বালো, আগুন জ্বালো’। সাবি𝓡না-সানজিদারা সেই আগুন জ্বালাতে পেরেছেন। আর সেদিন যাদের ফুটবল খেলার জন্য কটূক্তি করা হয়েছিল, মাঠ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, তারাও হয়তো সাবিন🃏াদের সাফল্যে মানুষের উচ্ছ্বাস দেখে আনন্দ অশ্রু ফেলছেন।
নারী ফুটবলারদের সাফল্যের আনন্দ জোয়ারে দেশের দুকূল ভেসে গেছে বুধবার। এমন দৃশ্য যে এ দেশের মানুষ খুব কম দেখেছেন। ছাদখোলা বাসে ট্রফি হাতে বাংলার নারীরা! বছর কয়েক আগেও কি কেউ ভেবেছিলেন! বছর কয়েক কেন; শিরোপা জয়ের আগের দিনও কি আমাদের ফুটবল কর্তা, ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কর্তারা ভাবতে পেরেছিলেন! না পারেননি। হয়তো ট্রফি জিততে পারে বাংলাদেশ, ভাবনাটা ওই পর্যন্তই ছিল। কিন্তু ছাদখোলা বাসে তাদের সংবর্ধনা! সানজিদার অভিমানজাত স্ট্যাটাস না পড়লে হয়তো আমাদের ক্রীড়া কর্তাদের মাথ🌜ায় সেটা আসতই না।
সানজিদা-সাবিনা আপনাদ🧸ের কাছে কৃতজ্ঞ গোটা জাতি। আগামী দিনে যত বড় সাফল্য এ দেশের ক্রীড়াঙ্গনে আসবে, সানজিদার ওই স্ট্যাটাসের কথাই মনে পড়বে। ছাদখোলা বাসে চড়ে আপনারা খোলা আকাশ দেখতে চাননি! আপনারা জাতিকে দেখাতে চেয়েছেন আরও অনেক কিছু। সাফল্যের জন্য দুর্মর আকাঙ্ক্ষা আর উদগ্র বাসনা নিয়েই মাঠে নেমে ট্রফি জিতেছেন।
ট্রফি জয়ের অদ্যম ইচ্ছার পাশাপাশি এই দেশ আর সমাজের কাছ থেকে একটু সম্মান পাওয়ার আকুলতাও কি ছিল না আপনাদের? যে কারণে পেশাদারত্বের মোড়ক খুলে অভিমান আর আবে๊গ🃏ের মিশেলে সানজিদাকে লিখতে হয়েছিল, ‘ছাদখোলা বাসে ট্রফি নিয়ে ওঠা না-ই বা হলো…!’
দেশে এবং দেশের বাইরে কোটি কোটি মানুষ দেখলেন ছাদখোলা বাসে ট্রফি নিয়ে বাংলাদেশের নারী ফুটবলাররা শহর ঘুরলেন। সব♏াই জানালেন নেপাল থেকে তারা সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে এসেছেন। কিন্তু অজানা থেকে গেল তাদের আরও অনেক কিছু জয়ের কথা। সেই জয় উগ্রতা আর কূপমণ্ডূকতার বিরুদ্ধে। সেই জয় ক্ষুধার বিরুদ্ধে। দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে। সেই জয় নারী-পুরুষের বৈষ্যমের বিরুদ্ধে। সেই জয় সামাজিক অনাচারের বিরুদ্ধে। আপনাদের অন্তরে এই সব অনাচারের বিরুদ্ধে গনগনে আগুন জ্বলতে না থাকলে এভাবে জেতা যায় না। সেটা যারা বোঝার তারা বোঝেন। তারপরও যা দেখলাম, তাতে মনে হয় কিছুটা সত্যি। কিছুটা কল্পনা!
লেখক: সিনিয়র জার্নালিস্ট ও কলাম লেখক