• ঢাকা
  • রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Songbad Prokash

ইনস্টাগ্রাম

টুইটার


লিংকডইন

পিন্টারেস্ট

গুগল নিউজ


মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা ছিলেন বঙ্গবন্ধু


সালেক খোকন
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৫, ২০২৩, ০৪:৩৫ পিএম
মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা ছিলেন বঙ্গবন্ধু

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সান্নিধ্য, তাঁর দেওয়া ভাষণ, তাঁর নির্দেশনা ও স্বপ্নগুলোই আমাদের কাছে আজও প্রেরণা হয়ে আছে। বঙ্গবন্ধুর সারা জীবনের লড়াই ছিল বাঙালি জাতির শোষণমুক্তির মধ্য দিয়ে সোনার বাংলা গড়ে তোলা। বাঙালি জাতিকে তিনি কেবল একটি♛ ভূখণ্ডই দেননি, দিয়েছেন সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক মুক্তি। দিয়েছেন অসাম্প্রদায়িক মানবিক চেতনায় উজ্জ্বল জীবনাদর্শ।

অন্যদিকে একাত্তরে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের𝔍 হৃদয়কে কীভাবে অনুপ্রাণিত করেছিলেন বঙ্গবন্ধু? এ নিয়ে একবার কথা হয় টাঙ্গাইলের কালীহাতি উপজেলার যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আশরাফ হুমায়ুন বাঙ্গালের সঙ্গে। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি হনুমান কোম্পানির কমান্ডার ছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে একটি স্মৃতিচারণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘১৯৭০-এর নির্বাচনের পরের ঘটনা। মিছিল-মিটিং করাও তখন কঠিন ছিল। আমি টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক, সেক্রেটারি কাদের সিদ্দিকী। আমরা চ্যালেঞ্জ নিয়েই একদিন মিটিং করলাম, কালিহাতীর চারণ এলাকায়। মিছিল বের হলে তাতে যোগ দেয় শত শত লোক। এরপর একদিন কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে যাই ঢাকায়। দেখা করি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে, ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বরের বাড়িতে। নেতার সঙ্গে ওটাই প্রথম দেখা। মিটিং-মিছিল করার ঘটনা শুনে খুব খুশি হন তিনি। বসা ছিলেন। উঠে এসে আমাদের সামনে দাঁড়ালেন। অতঃপর হাত দিয়ে বুকে আলতো ধাক্কা দিয়ে 🍨‘সাবাস বাঙ্গাল’ বলেই বুকে জড়িয়ে ধরলেন। কী যে ভালো লেগেছিল ওই দিন। নেতার সংস্পর্শে সাহস একশ গুণ বেড়ে গিয়েছিল। ওই স্মৃতিটা এখনো ভাবলে চোখ দুটো ভিজে যায়। আমার নাম ছিল কাজী আশরাফ হুমায়ুন। এরপর থেকেই নামের শেষে ‘বাঙ্গাল’ শব্দটা লাগাই। নাম হয় ‘কাজী আশরাফ হুমায়ুন বাঙ্গাল।’ এখন ‘বাঙ্গাল’ বললেই সবাই একনামে চেনে। বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করার বাসনাতেই একাত্তরে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছি। তাই আজও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আমার হৃদয়ে লেখা একটি নাম।’

কথা হয় সিরাজগঞ্জের যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা এ জেড♌ এম আমিনুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে। বঙ্গব🤡ন্ধুর সঙ্গে নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার কথা তিনি তুলে ধরেন যেভাবে, ১৯৬২ সালে সিরাজগঞ্জ মহকুমার ছাত্রলীগের সেক্রেটারি ছিলাম। ছাত্রদের সংগঠিত করে শিক্ষা কমিশন ও আইয়ুববিরোধী তুমুল আন্দোলন গড়ে তুলতে থাকি আমরা। এ অপরাধে আবুল কাশেম নুরে এলাহীসহ আমাদের আটজনকে কলেজ থেকে বহিষ্কার ও ছাত্রত্ব বাতিল করে কর্তৃপক্ষ।

তখন খুব ঘাবড়ে যাই। অনেকেই বললেন ঢাকায় গিয়ে রিট পিটিশন ক⛄রতে। কিন্তু কার কাছে যাব?  আব্দুর রাজ্জাক ভাই তখন ছাত্রলীগের নেতা। তিনিই নিয়ে যান মুজিব ভাইয়ের কাছে। আমরা তাঁকে পা ছুঁয়ে সালাম করলাম। আমাদের বিমর্ষ মুখগুলির দিকে তাকিয়ে✃ই তিনি ঘটনা আঁচ করতে পারলেন, বললেন, ‘বুঝতে পারছি তোরা কী জন্য আইছোস।’

সব শুনে🐽 উনি দু-আঙুলে আমার গালে চিমটি কেটꦗে বললেন, ‘ভয় পাইছিস? কিচ্ছু হবে না রে। আমি তো আছি। এ দেশে একদিন না একদিন তোরাই হবি রাজা।’

‘আল্লাহ-প্রদত্ত একটা শক্তি ছিল তা🔯ঁর মধ্যে। প্রথম দেখায় তাঁকে সত্যিকারের নেতাই মনে হয়েছে। যেন আমাদের কত আপন মানুষ। তাঁর কথা ও উৎসাহে নিমিষেই সব দুশ্চিন্তা দূর হয়ে অন্যরকম শক্তির সঞ্চার হয় মনে। একশ টাকার নোট হাতে দিয়ে শেখ মু๊জিব বললেন, ‘এস আর পালের (সবিতারঞ্জন পাল) কাছে যা। উনিই তোদের রিট দাখিল করে দিবেন।’

‘সেটাই হলো। ওই রিট পিটিশনের কারণেই ১৯৬৪ সালে হাইকোর্টের রায়ে আবার ছাত্রত্ব ফিরে পাই। এরপর সকল আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছি। একাত্তর🤪ে প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধার মনে গেঁথে ছিল শেখ মুজিবের নাম। দেশ স্বাধীন হলে সাধারণ মানুষ চোখের জলে মুক্তিযোদ্ধাদের বুকে জড়িয়ে ধরে। তখন নিজেকে রাজাই মনে হয়েছিল। মনে পড়েছে বঙ্গবন্ধুর ওই কথাটাও। তাঁর ওই কথাই সত্য হয়েছিল। স্বাধীন দেশে সত্যিই আমরা রাজা হয়েছিলাম।’

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কথা হয় দুই নম্বর সেক্টরের বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মো. আবুল হোসেনের সঙ্গেও। সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেওয়াসহ দুই নম্বর সেক্টরের নির্ভয়পুর সাব-সেক্টরে এফএফদের (ফ্রিডম ফাইটার)🌄 পরিচালনায় বিশেষ দায়িত্ব পালন করেছেন। সর্বশেষ তিনি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

নেতাকে প্রথম দেখার স্মৃতি আজও তাঁকে আন্দোলিত করে। তাঁর ভাষায়, ‘১৯৬৬ সালের ঘটনা। খবর পাই শেখ মুজিব চৌমুহনী হয়ে সামনের রাস্তা দিয়েই যাবেন রায়পুরে। আমরা ভাইয়েরা মিলে তখন কাগজ আর বাঁশ দিয়ে নৌকা বানাই। ওই সময়▨ সেটা টাঙাচ্ছি বাড়ির সামনের রাস্তায়। হঠাৎ গাড়ির শব্দ। দেখলাম কচ্ছপের মতো একটা গাড়ি আসছে। ওই গাড়ি থেকে নেমে এগিয়ে আসেন শেখ মুজিবুর রহমান।

ছয় ফুটের ওপর লম্বা, ফর্সা একটা মানুষ। ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি পরা, কালো একটা কোটও জড়ানো। ভাবছি, এত লম্বা 🍰একটা লোক এই কচ্ছপের মতো ছোট্ট গাড়িতে কীভাবে ছিলেন? উনি এসে বানানো নৌকাটি দেখলেন। এরপর মাথায় 🥀হাত বুলিয়ে দিয়ে কথা বললেন একান্তভাবে। ওই স্পর্শ ও দৃশ্যটা মনে গেঁথে গেছে।

গাছ থেকে ডাব পেড়ে আনা হলো। কিন্তু সেটা দেওয়ার জন্য গ্লাস খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। শেখ মুজিব ডাবটি মুখে নিয়েই পানি খেতে থাকলেন। ﷽ফোঁটা ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে তাঁর শরীরে। এখনো সে স্মৃতি দারুণভাবে মনে হয়।’

মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা ছিলেন বঙ্গবন্ধু, এমনটাই মনে করেন এই বীর যোদ্ধা। অকপটে বললেন, ‘আমরা শুরু করেছিলাম শূন্য হাতে। ৭ই মার্চের ভাষণে তিনি বললেন, ‘তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শক্রর মোকাবিলা করতে হবে।’ তাঁর ওই নির্দেশেই পিটি-প্যারেড আর বাঁশের লাঠি দিয়ে যুদ্ধ শুরু করে এ-জাতি। থ্রি নট থ্রি রাইফেল দিয়ে তো এলএমজির সামনে দাঁড়ানো যায় না। তবুও বুকভরা সাহস আর মনোবল ঠিক রেখে বাঙালি দাঁড়িয়েছিল। তাই বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা একই অর্থে বহমান।ꦐ’

এ কারণেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে জানা জরুরি। শুඣধু রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, এই মহান নেতাকে তুলে ধরতে হবে সর্বজনীনভাবে। তাঁর জীবন-𒁏ইতিহাস, শাসনামল ও দর্শন নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগই হতে পারে সবচেয়ে বড় কাজ।

Link copied!