• ঢাকা
  • সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩১,

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Songbad Prokash

ইনস্টাগ্রাম

টুইটার


লিংকডইন

পিন্টারেস্ট

গুগল নিউজ


মৌসুমি পেশা, তাতেও মিশে আছে দেশপ্রেম


সুব্রত চন্দ
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৬, ২০২১, ০১:২৪ পিএম
মৌসুমি পেশা, তাতেও মিশে আছে দেশপ্রেম

পেশায় ভ্যানচালক মো. খোকন (৫২)। পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকেন মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার বড়াইতলা গ্রামে। কিন্তু প্রতিবছর ফ্রেব্রুয়ারি, মার্চ ও ডিসেম্বর মাস এলেই ছুটে আসেন রাজধ🌊ানী ঢাকায়। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবস উপলক্ষে নগরীর পথে পথে ঘুরে বিক্রি করেন জাতীয় পতাকা। পতাকা বিক্রি খোকনের মৌসুমি পেশা হলেও এর সঙ্গে মিশে꧃ আছে তার দেশপ্রেম ও শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। তাই তো প্রতিবছর ইট-কাঠের নগরীতে তার এই ছুটে আসা।

খোকনের মতোই এভাবে জাতীয় দিবসগুলোর আগে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাজধানীতে পতাকা বিক্রি করতে ছুটে আসেন বিক্রেতারা। লম্বা বাঁশের সঙ্গে পতাকা বেঁধে নগরীর পথে পথে ঘুরে চলে বিক্রি। এ সময় পতাকা কেনারও হিড়িক পড়ে মানুষের মাঝে। এতে মৌসুমি পতাকা বিক্রেতাদের কিছুটা বাড়তি আয়ও হয়, আবার ভালোবাসার🥀 কাজটিও করতে পারেন মনের আনন্দে।

flag

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মূল রাস্তায় এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে মো. খোকন জানান, প্রায় ২৭ বছর🅺 আগে পরিচিত একজনকে লাল-সবুজের পতাকা বিক্রি করতে দেখে ভালো লেগে যায় তার। এর পর থেকে প্রতিবছর তিনিও পতাকা♐ বিক্রি করছেন। গ্রাম থেকে দর্জির মাধ্যমে পতাকা বানিয়ে আনেন। সেগুলো বিক্রি শেষ হয়ে গেলে আবার চকবাজার বা সদরঘাট গিয়ে কিনে আনেন। কখনো এতে লাভ হয়, কখনো হয় না। তারপরও অন্য রকম টান থেকেই প্রতিবছর ফিরে আসেন পতাকা ফেরি করতে।

মো. খোকন বলেন, “আমার জন্ম মুক্তিযুদ্ধের আগে। কিন্তু তখন একেবারেই শিশু থাকায় কোনো স্মৃতি মনে নেই। বাবা-মায়ের কাছে যুদ্ধের গল্প শ🥂ুনেছি। কীভাবে আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা দেশের জন্য আত্মত্যাগ করেছে। তাই পতাকা বিক্রি করতে অন্যরকম এক ভালো লাগা কাজ করে। মানুষের কাছে যখন লাল-সবুজের পতাকাটা তুলে দিই, তখন মনটা আত্মতৃপ্তিতে ভরে ওঠে। দেশের জন্য একটা আলাদা টান অনুভব করি।”

flag

দশ টাকা থেকে শুরু করে আড়াইশ টাকার পর্যন্ত বিভিন্ন সাইজের পতাকা আছে খোকনের কাছে। কোনো দিন দুই হাজার টাকা বিক্রি হয় তো, কোনো দিন বিক্রি হয় এক হাজার টাকা। তারপরও কোনো অভিযোগ নেই খোকনের। তবে যখন ক♌েউ জাতীয় পতাকাকে সম্মান দেখায় না, তখন মনের মধ্যে ব্যথা অনুভব হয় বলে জানান খোকন।

খোকনের মতোই মৌসুমি পতাকা বিক্রেতা আনোয়ারা বেগম (৬৩)। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে জাতীয় পতাকা বিক্রি করতে করতে সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের আগেই বাবা মারা গেছেন। যুদ্ধের সময় দাদা-দাদি, নানা-নানি মিলিটারিদের হাতে জীবন দিয়েছেন। আমার অসহায় মা যুদ্ধের সময় আমাদের ছয় বোন ও এক ভাইকে বাঁচাতে জঙ্গলে লুকিয়ে ছিল। এমনও 🐲বহু দিন গেছে শুধু পুকুরের পানি খেয়ে জীবন ধারণ করেছিলাম তখন আমরা।”

flag

আনোয়ারা বেগম আরও বলেন, “অনেক আত্মত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে আমাদের এই স্বাধীনতা। তাই তো পথে পথে লাল-সবুজের পত💛াকা বিক্রি করতে অন্য রকম একটা গর্ব হয়। দেশটা স্বাধীন হয়েছে বলেই তো আজ কর্ম করে খেতে পারছি। স্বাধীন দেশের পতাকা ওড়াতে পারছি।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসি এলাকায় পতাকা বিক্রি করতে দেখা যায় মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার আড়াইল খাঁ গ্রামের আব্দুল কাইয়ুমকে (৩৮)। তিনিও পেশায় একজন ভ্যা💃নচালক। বিজয় দিবস, স্বাধীন🧸তা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এলেই ছুটে আসেন রাজধানীতে।

flag

আব্দুল কাইয়ুম জানান, তিনি সাত-আট বছর ধরে এভাবে ঘুরে ঘুরে পতাকা বিক্রি করছেন। দেশের প্রতি টান থেকেই এই মৌসুমি পেশায় এস♛েছেন।

পতাকা বিক্রি করে লাভ হয় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কখনো লাভ হয়, কখনো হয় না। এবার বিজয় দিবস উপলক্ষে ১২ হাজার টাক൩ার পতাকা কিনেছেন। বেশিরভাগই বিক্রি হয়ে গেছে। যেগুলো আছে সেগুলোও আশা করি ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।”

আব্দুল কাইয়ুম আরও বলেন, “আমি মাঝে মা⛦ঝে রাইদা বাসের চালকের সহকারী হিসেবে কাজ করি। দিনে এক দেড় হাজার ট꧂াকা আয় হয়। পতাকা বিক্রি করলে বেশির ভাগ সময়ই এতটা আয় হয় না। তারপরও দেশের প্রতি টান, ভালো লাগা ও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা থেকেই প্রতিবছর পতাকা বিক্রি করি। এতে মনের মধ্যে একধরনের শান্তি লাগে।”

flag

এই বিক্রেতার কাছ থেকে মেয়ে ফাইজা আফরোজ মজুমদারকে পতাকা কিনে দেন বেসরক🍸ারি চাকরিজীবী শফিউল্লা মজুমদার। বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে দুই মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় ঘুরতে এসেছেন চট্টগ্রামের এই বাসিন্দা।

শফিউল্লা বলেন, “স꧃্বাধীনতা বাঙালিদের জন্য একটি বড় অর্জন। এটি অর্জন করতে আমাদের অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। এই বিজয় আমাদের জন্য অনেক বড় গৌরবের। এক সময় আমরা পরাধীন ছিলাম, এখন আমরা স্বাধীন দেশে বসবাস করতে পারছি। অনেক বৈষম্যের স্বীকার আমরা ছিলাম। তাইতো প্রতি বছর আমরা উল্লাস করে বিজয় দিবস পালন করি। এবার যেহেতু বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তি তাই মেয়েদের নিয়ে ঢাকায় ঘুরতে এলাম। তার যেন নিজের দেশ সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পারে, ভালোবাসে, শহীদদের ত্যাগ অনুভব করতে পারে। তাই তাদের হাতে পতাকা তুলে দিলাম।”

Link copied!