• ঢাকা
  • সোমবার, ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২৫ ভাদ্র ১৪৩১, ৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Songbad Prokash

ইনস্টাগ্রাম

টুইটার


লিংকডইন

পিন্টারেস্ট

গুগল নিউজ


নগরীর গরম বাড়াচ্ছে ‘কাচভবন’


মো. মির হোসেন সরকার
প্রকাশিত: এপ্রিল ৩০, ২০২৪, ০৯:৩৪ পিএম
নগরীর গরম বাড়াচ্ছে ‘কাচভবন’
কাচের ভবন।

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের মহানগরীগুলোতে একের পর এক ন𒉰ির্মিত হচ্ছে বহুতল ভবন। আর এসব ভবনের সৌন্দর্য বাড়াতে দেয়ালে লাগানো হচ্ছে কাচ। দেশের আবহাওয়া ও পরিবেশের উপযোগী না হলেও কাচঘেরা ভবনের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। শুধু নতুন ভবনই নয়, পুরোনো ভবনের সৌন্দর্য বাড়াতেও দেয়ালে কাচ লাগানো হচ্ছে। যা চারপাশের পরিবেশকে গরম করে তুলছে। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালের অসহনীয় তাপপ্রবাহে বিপজ্জনক হয়ে উঠছে এসব কাচের ভবন।

তথ্যমতে, পশ্চিমের শীতপ্রধান দেশের গ্রিনহাউজের আদলে বাংলাদেশে কাচের দেয়াল বিশিষ্ট ভবন তৈরির প্রবণতা ღদেখা দেয় বিগত শতকের আশির দশকে। ১৯৮৫ সালে রাজধানীর মতিঝিলে সেনাকল্যাণ ভবন নির্মাণে প্রথম কাচের দেয়াল ব্যবহার করা হয়। এরপর থেকে গুলশান, বনানী, বারিধারা, ধানমন্ডি, মতিঝিলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভবনের দেয়াল হিসেবে কাচের বেড়ে যায। বর্তমানে অভিজাত এলাকার বেশিরভাগ ভবনেই দেখা যাচ্ছে কাচের দেয়াল। য♉েখানে প্রতিফলিত হয়ে সূর্যের তাপ আশপাশের পরিবেশকে অতি গরম করে তুলছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পশ্চিমা দেশগুলোতে কাচের ভবন আবহাওয়া ও পরিবেশ উপযোগী হলেও বাংলাদেশে তা কোনোভাবেই উপযোগী নয়। শুধু সৌন🧸্দর্য বাড়াতে গিয়েই পরিবেশ ও জীবনের ক্ষতি করছে এসব কাচের দেয়াল। নগরবিদরা বলছেন, বাণিজ্যিক ভবনগুলোর বহিরাবরণে কাচের ব্যবহারে নান্দনিক সৌন্দর্য নিয়ে এলেও পরিবেশগত ঝুঁকি বেশি। কারণ কাচে (গ্লাস) সূর্যের আলো প্রতিফলিত হওয়ায় ভবনের চারপাশে বেশিমাত্রায় তাপ ছড়িয়ে পড়ে। আবার এসব ভবন ঠাণ্ডা রাখতে সারাবছর শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে বড় ধরনের ব্যয় হচ্ছে।

পরিবেশ বাঁচাও 𒉰আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “পশ্চিমা বিশ্বের উপযোগী কাচের দেয়াল আমাদের দেশের জন্য মোটেই উপযোগী নয়। কারণ এখানকার আবহাওয়া এমনিতেই নাতিশীতোষ্ণ। এসব দেয়ালে প্রতিফলিত ♍সূর্যরশ্মি ভূ-পৃষ্ঠের উপরিভাগকে উত্তপ্ত করে তুলছে।”

স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) গবেষণা বলছে, সূর্যরশ্মি থেকে ভবনের কাচের দেয়ালে যে প্রতিফলিত হয় সেটা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ায় তাপমাত্রা বেড়ে যায়। তাছাড়া কাচের ভবনের কক্ষ শীতল রাখতে🥂 স্বাভাবিক ভবনের চেয়ে শীতলীকরণ য𝕴ন্ত্রের তাপমাত্রা কমানো হয়। দ্রুত কক্ষ ঠাণ্ডা করতে গিয়ে গরম বাতাস ভবনের চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। এতে বাইরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়।

কাচের ভবনের সংখ্যা বেশি রাজধানীর এমন এলাকায় তাই অন্য এলাকার চেয়ে তাপমাত্রা বেশি থাকে꧟🐬। গুলশান, বনানী, উত্তরা, পল্টনের মতো বাণিজ্যিক এলাকায় সে কারণেই স্বাভাবিকের চেয়ে তাপমাত্রা বেশি বলে উঠে এসেছে গবেষণায়।

পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, “শুধু নান্দনিকতার জন্য ভবনে কাচের খেয়াল খুশিমতো ব্যবহারে বড় ধরনের মাশুল গুনতে হবে। শীতলীকারণ যন্ত্র লাগাতে গিয়ে বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়বে। বেশি বিল গুণতে হবে। এসি যে ফসিল ফুয়েল ব্যবহার করে আর সিএফসি বা এইচএফসি গ্যাস নিঃসরণ করে তা ওজোনস্তরের ক্ষয়ের জন্য দায়ী। আর এসির নিঃসরণ করা গ্যাস নগরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা আর আগামীর কথা চিন্তা করে ভবনে কাচের ব্যব🅠হার বন্ধ করতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে๊ হবে সরকারকে।”

বাংলাদেশে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার কার্টিনℱ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালিত গবেষণা বলছে, ২০০০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত গত দুই দশকে ঢাকার তাপমাত্রা ২ দশমিক ৭৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে। এছাড়া চট্টগ্রামে বেড়েছে ১ দশমিক ৯২ ডিগ্রি, খুলনায় ১ দশমিক ২৭ ডিগ্রি, সিলেটে ১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সবচেয়ে কম শূন্য দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেড়েছে সবুজনগরীখ্যাত রাজশাহীতে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বড় নগরগুলোতে তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য অনেকাংশে দায়ী ভবনের উপকরণ। যার মধ্যে অন্যতম কাচের দেয়াল।

রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানে গত কয়েক বছরে যেসব ভবন নির্মাণ হয়েছে সেসবের বেশিরভাগের দেয়ালেই ব্যবহার করা হয়েছে কাচ। এসব ভবনের পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে রোদের ঝলক লাগে। কখনও কখনও তীব্র রোদ ঠিকরে পড়ে পথচারীদের চোখে মুখে। অন্যান্য ভবনের চেয়ে এসব ভবনের আশেপাশে তাপমাত্রা অনেক বেশি। তাপমাত্রা পরিমাপক যন্ত্র ব্যবহা🍎র করে দেখা গেছে, অন্য অংশের চেয়ে এসব ভবনের পাশে তাপমাত্রা অন্তত ২ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়া💝স বেশি।

কথা হয় গুলশানে দীর্ঘদিন ধরে ফেরি করে চা বিক্রি করা আরিফুলের সঙ্গে। তিনি তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, “যে গলিতে কাচের ভবন বেশি, সেখানে গাছ থাকলেও গরম বেশি। মনে হয় শরীর পুড়ে যাচ্ছে। বেশি বেশি পানি খেলেও গলা শুকিয়ে যায়। অথচ অন্য ভবনের পাশে গর𝔍ম অনেক কম।”

নগর পরিকল্পনাবিদরা মনে করছেন, কাচের দেয়ালের ব্যবহার এখনো সীমিত পর্যায়ে আছে। যদি এখনই এসব দেয়াল নির্মাণের নীতিমালা তৈরি করা না হয় তাহলে ভবিষ্যতে রাজধানীসহ সমগ্র দেশের পরিবেশ ꦿমারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। আর তাই নীতিনির্ধারণী মহলের জরুরি ভিত্তিতে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।

নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি ইকবাল হাবꦬিব সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “প্রকৃতিনির্ভর সমস্যা সমাধানের বাইরে গিয়ে বিদেশের অনুকরণে দেশে ভবন তৈরির যে কার্যক্রম চলছে তাতে শীতাতপ যন্ত্রনির্ভরতা বাড়ছে। কাচের দেয়াল বা কাচের বহিরাবরণ পরিবেশে তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাছাড়া এসব ভবনে অগ্নিদুর্ঘটনায় হতাহতের শঙ্কাও বেশি থাকে। বাতাসের আদান-প্রদান না হওয়ায় এসব ভবনে গ্যাসীয় বিষাক্ততা তৈরি হয়। 🐻যা পরিবেশের জন্য ভালো নয়।”

Link copied!