• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Songbad Prokash

ইনস্টাগ্রাম

টুইটার


লিংকডইন

পিন্টারেস্ট

গুগল নিউজ


‘মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমার মনে কিছু দুঃখ আছে’


রফিক মোল্লা, সিরাজগঞ্জ
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৩, ২০২২, ০২:৫৬ পিএম
‘মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমার মনে কিছু দুঃখ আছে’

সিরাজগঞ্জের বেলকুচির বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট সাংবাদিক আলহাজ গাজী সাইদুর রহমান।𝄹 বঙ্গবন্ধুর ডাকে বাংলার মুক্তিসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। যুদ্ধ করেন ৬ নম্বর সেক্টরে। ❀বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী সাইদুর রহমান মুক্তিযুদ্ধে যোগদান ও যুদ্ধ জয় নিয়ে কথা বলেন সংবাদ প্রকাশ-এর সঙ্গে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সংবাদ প্রকাশের সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি রফিক মোল্লা।

রাষ্ট্রভাষার আন্দোলন

বিজয়ের মাস মানেই ডিসেম্বর মাস। বাঙালি জাতির ইতিহাসে কিছু দিনক্ষণ আছে, যে দিনক্ষণౠগুলো স্মরণীয় ও বরণীয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এক দিনের নয়। এটি একটি দীর্ঘ ইতিহাস। আ🅺মাদের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিল মূলত বাঙালি জাতীয়তাবাদী ও ভাষা আন্দোলন থেকে। ১৯৪৭ সালে আমরা পাকিস্তান রাষ্ট্র পেয়েছিলাম দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে। স্বাধীনতার এক বছর না পেরোতেই পাকিস্তানের জাতির জনক কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকায় এসে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা করেছিলেন।

১৯৪৮ সাল থেকে আমরা তার ঘোষণার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে শুরু করি। এরপর ১৯৫২ সালে এসে সেটি ভাষা আন্দোলনে রূপ নেয়। তিনটি স্লোগান নিয়ে এ ভাষা আন্দোলন শুরু হয়েছিল ‘তুমি🌺 কে আমি কে বাঙালি বাঙালি, তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা-মেঘনা-যমুনা, রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই।’ এ আন্দোলন ধাপে ধাপে এগিয়ে যায়।

বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা থেকে গণ-অভ্যুত্থান

এরপর ১৯৫২ থেকে ১৯৬২ শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬২ থেকে ১৯৬৬ ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৬ থেকে ১৯৬৯-এ ১১ দফা আন্দোলনের পর পাকিস্তানি দোসররা বাধ্য হয়ে ১৯৭০-এ নিবার্চন দেয়꧋। ১৯৭০-এর নির্বাচন হয়েছিল মূলত ছয় দফার ভিত্তিতে।  

অবিস্মরণীয়ভাবে ১৯৭০-এর নির্বাচনে বিপুল ভোটে সেদিন আওয়ামী লীগের জয় হয়েছিল। আমরা বাঙালি জাতি আশা করেছিলাম সেদিন 🎶আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে এবং ব✅াঙালি জাতির ছয় দফাভিত্তিক স্বাধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু যখন স্বাধিকার প্রতিষ্ঠা হলো না, তখন স্বাধিকার থেকে বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা আন্দোলনের দিকে যেতে হলো।

ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ, স্বাধীনতার ডাক

পরে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা দিলেন, “রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দেব, এ দেশের🅠 মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইন শাল্লাহ, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্𓃲বাধীনতার সংগ্রাম।” স্বাধীনতার ডাক দেওয়ার পরেই শুরু হয় বাঙালি জাতির আন্দোলন।

বঙ্গবন্ধুর গ্রেপ্তার ও স্বাধীনতার ঘোষণা

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে নিয়ে যাওয়ার আগেই তিনি বাংলাদেশ স্বাಞধীনতার একটি ঘোষণা ইপিআর (ইস্ট পাকিস্তান রাইফেল) ওয়্যারলেসের মাধ্যমে♔ দিয়ে যান। সেই ঘোষণাটি পান চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল হান্নান এবং ফটিকছড়ি কলেজের আবুল কাসেম। সে সময় চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর সেই স্বাধীনতার ঘোষণাটি ২৬ মার্চ আব্দুল হান্নান ও আবুল কাসেম বারবার প্রচার করতে থাকেন। এ সময় এয়ার রেডের ফলে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রটি বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং প্রচারে বিঘ্ন ঘটে।

যুদ্ধে যাওয়ার গল্প

সে সময় ৯২ হাজার সশস্ত্র সৈন্য পূর্ব পাকিস্তানে ছিল। বিনা প্রশিক্ষণে ও বিনা অস্ত্রে তাদের সঙ্গে মোকাবিলা করা সম্ভব ছিল না। তখন বাধ্য হয়ে আমরা আমাদের পার্শ্ববর💃্তী দেশ ভারতের বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিই। সেখানে যাওয়ার পর সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমরা বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি ও বিভিন্ন দেশ থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করা হয়। এরপর শুরু হয় 🐽সশস্ত্র যুদ্ধ।

বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তার সেই স্লোগান ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধুকে’ বুকে ধারণ করে🎃 আমরা অস্ত্র হাতে নিয়ে সেদিন যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ি। এরপর ৯ মাস যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ৩০ লাখ মানুষকে শহীদ হতে হয়েছিল। দুই লাখ মা-বোনকে ইজ্জত দিতে হয়েছিল এবং বাড়িঘর, কলকারখানা সবকিছু ধ্বংসের মধ্যে দিয়ে আমাদের দেশ স্বাধীন করতে হয়েছিল। কাজেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস অত সহজ নয়।

মুক্তিযুদ্ধে সিরাজগঞ্জ শহরের যখন পতন হয়, তখন আমরা বাধ্য হই সিরাজগঞ্জ জেলা ছেড়ে যাওয়ার জন্য। নদীপথে আমরা মুক্তিযোদ্ধারা নৌকাযোগে কুড়িগ্রামে যাই। সেখানে একটি স্কুলে মাত্র ২০ থেকে ৩০ জন ছেলে নিয়ে প্রথম মুক্তিয𒀰োদ্ধাদের একটি ক্যাম্প চালু করি। সেখানে ধীরে ধীরে লোকজন বেশি হওয়ায় আমাদের বড় জায়গার প্রয়োজন হয়। পরে আমরা রৌমারী থানায় আশ্রয় গ্রহণ করি এবং সেখানে বৃহৎ আকারে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প গড়ে তুলি।

ওই সময় ভারতের মেঘালয়ে ও তুরাতে ক্যাম্প তৈরি করা হয়। সেখানে আওয়ামী লীগের বেশ কিছু নেতা ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের যখন প্রশিক্ষণ হয়, তখন আমি হার্ড ট্রেনিংয়ের জন্য ১০১ জনকে নিয়ে দার্জিলিং চলে যাই। দার্জিলিংয়ে ভারতীয় সেনাদের একটি প্রশিক্ষণ একাডেমি ছিল, যেটি পরবর্তী সময়ে মুজিব ক্যাম্প হিসেবে নাম দেওয়া হয়। সেখানে বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে শেখ কামালও আমাদের সঙ্গে প্রশিক্ষণ নেন। সেই ক্যাম্পে আমরা ৬০ দিনের মতো প্রশিক্ষণ নিয়েছি। এরপর ডিফেন্সে আমরা ইন্ডিয়ান আর্মির সঙ্গে কাজ করতে থাকি। ওখানে কিছুদিন ডিফেন্সে কাজ করার পর আমাদের ভ🐼াগ করে বর্তমান নীলফামারীর বিভিন্ন এলাকায় গেরিলাযুদ্ধের জন্য দিয়ে দেওয়া হয়। আমরা সে এলাকায় গিয়ে ‘হিট অ্যান্ড রান’ নিয়মে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত গেরিলাযুদ্ধ করি।

অবশেষে বিজয়

১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ মুক্ত হলেও সৈয়দপুরের পাকিস্তানি বাহিনী সেদিন আমাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেনি। সৈয়দপুরকে সেদিন নিউ পাকিস্তান আখ্যায়িত করে সেখানকার বিহারিরা প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করে। তখন আমরা মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে যাওয়ার চেষ্টা করি। 𝓰কিন্ত𒊎ু ইন্ডিয়ান আর্মি আমাদের সেখানে যেতে দেয় না। আমাদের সেদিন ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। পরে আমরা ছুটি নিয়ে কিশোরগঞ্জ থানায় অস্ত্র জমা দিই, এরপর আমরা বাড়ির দিকে রওনা হই। পরে সৈয়দপুরে থাকা বিহারিদের ইন্ডিয়ান আর্মিরা কৌশলে আত্মসমর্পণ করায়।

আমার মনে কিছু দুঃখ আছে

মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পরে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমার মনে কিছু দুঃখ আছে। সেটা হলো, দেশ থাকলে দল থাকবে, রাজনীতি থাকবে। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছি, তাদের অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে মূল কিছু বিষয় আমাদের মধ্যে ছিল, যেমন ‘জয় বাংলা’ স্লোগান। এটি আমাদের রণধ্বনি ছিল। ‘জয় বাংলা’ স্লোগান বাদ দিয়ে যারা বাংলাদেশ জিন্দাবাদ বলতে চায়, 🥀আমি তাদের সঙ্গে এ🐼কমত নই। আমি তাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকার করি না।

কথাপ্রকাশ বিভাগের আরো খবর

Link copied!