একুশে পদকপ্রাপ্ত অভিনেতা মাসুদ আলী খান মারা গেছেন বৃহম্পতিবার (৩১ অক্টোবর)। মৃত্যুর আগে তিনিই ছিলেন দেশের সবচেয়ে প্রবীণ অভিনেতা। প্রয়াত এই অভিনেতাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন দেশে🌊র তিন বরেণ্য অভিনেতা আবুল হায়াত, মামুনুর রশীদ, এবং তারিক আনাম খান।
বরেণ্য অভিনেতা আবুল হায়াত বলেন, ‘মাসুদ আ𝓡লী খান আমাদের নাটকের পথপ্রদর্শক। একজন সুশীল, সজ্জন ভদ্রলোক ছিলেন। ভালো মানুষ তো বটেই। ন্যাচারাল অভিনয়ের স্কুল যদি থাকে, সেই স্কুলের একজন তিনি। খবরটি শোনার পর থেকে খারাপ লাগছে। এক এক করে আমাদের সিনিয়ররা চলে যাচ্ছেন। কষ্ট লাগছে। আমরাও থাকব না। আমাদেরও চলে যেতে হবে। এটাই প্ᩚᩚᩚᩚᩚᩚᩚᩚᩚ𒀱ᩚᩚᩚরকৃতির নিয়ম।’
স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘মাসুদ আলী খানের সঙ্গে আমার পরিচয় অনেক অনেক বছর আগে। দেখা হলেই বলতেন, হায়াত কেমন আছ? এখন আর কেউ বলবেন না। তার মুখ থেকে এই ড🍌াকটি মিস করব। আমার বইয়ে তার কথা লেখা আছে। বইটি আগামী সপ্তাহে প্রকাশ হবে। কিন্তু তিনি দেখে যেতে পারলেন না। তার প্রতি শ্রদ্ধা।’
অভিনেতা, নাট্যকার ও নির্মাতা মামুনুর রশীদ বলেন, ‘মাসুদ আলী খানকে শেষবার দেখে এলাম। তিনি বেঁচে নেই, কিন্তু আমি বলব তিনি একটা জীবন্ত ইতি♛হাস। কারণ তার সৃষ্টিশীলতা, মেধা আরও অনেক বছর অভিনয়প্রেমী মানুষের মনে জীবন্তই থাকবে।’
স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘খুবই মজার মানুষ ছিলেন মাসুদ ভাই। হাসতে ভালোবাসতেন, হাসাতেও ভালোবাসতেন। একইসঙ্গে আজীবন কঠোর নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে কাটিয়েছেন।ও তার এই গুণ সবারই শেখার আছে। তাইতো তিনি চারটি প্রজন্মের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ তৈরি করতে পেরেছিলেন। তিনি আমাদের আগের প্রজন্মের সঙ্গে কাজ করেছেন, আমাদের প্রজন্মের সঙ্গে কাজ করেছেন, আমাদের পরের প্রজন্ম ও একেবারে তরুণ প্রজন্মের সঙ্গ🃏েও তিনি কাজ করেছেন।’
মামুনুর রশীদ বলেন, ‘মাসুদ ভাই আমাদের অগ্রজ অভিনেতা ও থিয়েটাꦛর অ্যাকটিভিস্ট। দেশের প্রথম মঞ্চ নাটকের দল𒉰 `ড্রামা সার্কেল`র সদস্য ছিলেন এই গুণী অভিনয়শিল্পী। তাই তাকে সম্মান না করার কোন কারণ নেই। কিন্তু তার অভিনয় আমাকে আলাদা করে টানতো বলেই আমার লেখা নাটক ও নির্দেশিত নাটকেও আমি তাকে অনেকবার কাস্টিং করেছি।’
বরেণ্য এ অভিনেতা বলেন, ‘তার সঙ্গে আমার সর্বশেষ দেখা হয়েছিলো কয়েক বছর আগে নাগরিক নাট্য সম্পদায় থেকে আয়োজিত আলী যাকেꩲর সম্মাননা প্রদাণ অনুষ্ঠানে। সেদিন আমরা দুজনই পুরস্কার পেয়েছিলাম। অনেক আগে দেখা হয়েছে বলে আজ যখন তাকে শেষবার দেখতে গেলাম, তখন শুধু মনে হচ্ছিলো আরেকটু যদি আমাদের দেখা হতো, আরেকটু খোঁজ-খবর যদি নিতে পারতাম! আমি মাসুদ ভাইয়ের আত্মার চিরশান্তি কামনা করি। দেশবাসীকে বলবো তার জন্য সবাই প্রার্থণা করবেন।’
মাসুদ আলী খানকে নিয়ে অভিনেতা তারিক আনাম খান বলেন, ‘অসম্ভব গুণী একজন অভিনেতাকে হারালাম। তার প্রতি আমার শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও সম্মান। খুব ভালো মানুষ ছিলেন। তার কাছ থেকে সারাজীবন শিখেছি। মানুষকে সম্মান করতেন। অভিনয় ভালোবাসতেন। সারাজীবন অভিনয় করে গেছেন। সবাইকে আপন♋ করে নেওয়ার মতো বড় মন ছিল তার। তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। অভিনয়ে তার 🔯অবদান আমরা ভুলব না। অনেক সাড়া জাগানো নাটকের শিল্পী ছিলেন তিনি। সৃষ্টিকর্তা তাকে জান্নাত নসিব করুন। যেখানে আছেন শান্তিতে থাকুন।’
দেশের প্রথম মঞ্চ নাটকের দল ‘ড্রাম𓂃া সার্কেল’-এর সদস্য ছিলেন সদ্য প্রয়াত ꦏঅভিনেতা মাসুদ আলী খান। একাধারে থিয়েটার, টেলিভিশন নাটক, চলচ্চিত্র ও বেতার নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। অনেক কালজয়ী নাটকে অভিনয় করে পেয়েছেন দর্শকদের ভালোবাসা।
স্কুলজীবনে মাত্র ১০ বছর বয়সে তিনি প্রথম মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেন। নাটকটির নাম ছিল ‘রানা প্রতাপ সিংহ’। তরুণ বয়সে যোগ দেন দেশের প্রথম মঞ্চ নাটকের দল ‘ড্রামা সার্কেল’-এ। এই দলের হয়ে অনেকগুলো নাটকে অভিনয় করেছেন। তার মধ্যে রয়েছে ‘👍রক্ত করবী’, ‘রাজা-রানি’, ‘বহিপীর’, ‘ইডিপাস’ ইত্যাদি।
মাসুদ আলী খান অভিনীত বিটিভির ‘কূল নাই কিনার নাই’ আলোচিত একটি নাটক। এই নাটকে তার সহশিল্পী ছিলেন আসাদুজ্জামান নূর, আফজাল হোসেন ও সুবর্ণা মুস্তাফা। তিনি প্রথম অভিনয় করেন ‘নদী ও নারী’ সিনেমায়। এই সি⭕নেমায় অভিনয় করে সেই সময়ে বেশ পরিচিতি পান। ‘আসগর’ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। সিনেমাটির পরিচালক সাদেক খান।
এ ছাড়া ‘জোনাকীর আলো’, ‘দীপু নাম্বার টু’, ‘মাটির ময়না’, ‘দুই দুয়ারি’, ‘মোল্লাবাড়ির বউ’, ‘শঙ্খনীল কারাগার’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন। ‘দীপু নাম্বার টু’ সিনেমায় শিক্ষকের চরিত্রে অভিনয় করে শিশু-কিশোরদের মাঝে খুব জ♉নপ্রিয়তা পেয়েছিলেন।
কালজয়ী ধারাবাহিক নাটক ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘এইসব দিনরাত্রি’-তে অভিনয় করে💙 ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছেন মাসুদ আলী খান। তাছাড়া ‘একান্নবর্তী’, ‘৬৯’, ‘পৌষ ফাগুনের পালা’র মতো সাড়া জাগানো ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন।