সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন গণআন্দোলনে রূপ নেওয়ার 🙈পর গত ১৬ আগস্ট অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যায় স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। এরপর নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে গঠিত 🐻হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনায় দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম রোববার (১৮ আগস্ট) থেকে শুরু হচ্ছে। এক মাসের বেশি সময় ধরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের🔯 ভয়াবহ অভিজ্ঞতা শেষে ক্লাসে ফিরছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকরা বলছেন, আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীদের শারীরিক আঘাতের ক্ষতি দেখা গেলেও কয়েকটি সপ্তাহ ধরে তারা যে ট্রমার মধ্য দিয়ে গেছে তার দীর্ঘমেয়াদি মানসিক প্রভাব পড়বে তাদের ওপর।
শিক্ষকরা বলছেন, আন্দোলন চলাকালে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর নির্দয়, নিষ্ঠুর আচরণ শিক্ষার্থীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তবে তারা যে শুধু ক্যাম্পাস বা রাজপথেই হত্যা, হামলার শিকার হয়েছে তাই নয়, বরং শুধু শিক্ষার্থী হওয়ার কা♒রণে নিজ বাসায় বাবা-মাসহ পরিবারের অন্য সদস্যের সামনেই নিষ্ঠুরতার শিকার হতে হয়েছে। এসব ঘটনা শিক্ষার্থীদের মনোজগত বদলে দিয়েছে। অনেকেই মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতজন শিক্ষক মিলে গত ৯ আগস্ট জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোতে ‘বদলে যাওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য আমরা কি প্রস্তুত’ শিরোনামে নিবন্ধ লিখেছেন। নিবন্ধে শিক্ষকরা বিভিন্ন বাসায় জোর করে ঢুকে পড়ে, যাকেই ജশিক্ষার্থী মনে হয়েছে তাকেই মারধর করা, ঘর থেকে বের করে নেওয়ার ঘটনা উল্লেখ করেছেন।
শিক্ষকদের ভাষ্য, কেবল ‘ছাত্র’ হওয়ার কারণে এত বিপুলসংখ্যক কিশোর-তরুণকে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করার রেকর্🎉ড বাংলাদেশের ইতিহাসে ২০২৪–এর আগে কখনো সৃষ্টি হয়নি। তারা বলেছেন, শিক্ষক হিসেবে এত বেশি অসহায়ত্বও সম্ভবত কোনো কা❀লে শিক্ষকেরা বোধ করেননি।
নিবন্ধে ইউটিউবে আপলোড করা এক ভিডিওতে নির্দোষ এক তরুণের ওপর পুলিশের নির্দয় আচরণের কথা বলা হয়েছে। শিক্ষকরা লিখেছেন, “পুলিশ ওই তরুণকে ‘তোমাদের ব্রেইন ওয়াশ হইছে তো, কাউন্সেলিং দরকার’- এমন কথা বলে প্রায় টেনে টেনে মাঝেমধ্যে চড়–থাপ্পড় দিয়ে ধরে নিয়ে যাচ্ছিলেন। পেছনে দেখা যাচ্ছিল আদালতের ছবি। তরুণের ♏আকুল আবেদন, তাকে ছেড়ে দেওয়ার মিনতি, কোনো কিছুই টলাতে পারছিল না পুলিশ।”
এমন ভীতিকর পরিস্থিতিতে শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর আকুতি নিয়ে ছটফট করেছেন তারা। ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পাশে দাঁড়িয়েছেনও। শিক্ষকরা লিখেছেন, শিক্ষার্থীদের বি🏅না দোষে প্রিজন ভ্যানে ঢোকানোর দৃশ্য শিক্ষকের অসহায়ত্ব বাড়িয়েছে𝔉। শুধু মুঠোফোনে কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছবি–ভিডিও থাকার কারণে একজন শিক্ষার্থীকে আসামি হিসেবে চিহ্নিত করা ও আটক করার ঘটনা শিক্ষককে এ প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে যে দেশ সম্পর্কে, রাষ্ট্র সম্পর্কে আমরা এত দিন কি ওদের ভুল শিখিয়েছি?
নিবন্ধে শিক্ষকরা আরও বলেছেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ক্ষতি আমরা দেখতে পারওছি। কিন্তু এর মানসিক ক্ষতির প্রভাব হতে পারে সুদূরপ্রসারী। আমাদের দেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কি বুঝতে পারছে, কয়েকটি সপ্তাহ ধরে যে ট্রমার ভেতর♍ দিয়ে তরুণ শিক্ষার্থীরা গেছেন, তা থেকে তাঁদের দীর্ঘমেয়াদি মানসিক সমস্যা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা আছে।
শিক্ষকরা বলছেন, এ ক্ষেত্রে শিক💖্ষার্থীর ট্রমাটিক ঘটনাটি বারবার মনে পড়বে বা এটা নিয়ে ঘন ঘন দুঃস্বপ্ন দেখবে। ফ্ল্যাশব্যাক হবে (পুরোনো ঘটনা মনে পড়ে), যে স্থানে ঘটনাটি ঘটেছিল সে স্থান, এমনকি যা কিছু এই ঘটনাটি মনে করিয়ে দেবে সেগুলো এড়িয়ে চ💧লবে। কাজে মনোযোগ দিতে পারবে না। ঘুমাতে পারবে না। আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে।
আরও আশঙ্কাজনক হলো নির্বিচার আঘাত, গুলি, কাঁদানে গ্যাসের শেল, রাবার বুলে𓄧ট আর নির্যাতনের ফলাফল হিসেবে শারীরিক জখম ও অঙ্গহানির মতো ঘটনা ঘটেছে। অনেক ছাত্রছাত্রীর হাত–পা, আঙুল কেটে ফেলতে হয়েছে। সংখ্যা এখনো অজানা, তবে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেটের আঘাতে বহু শ🐬িক্ষার্থীর চোখ নষ্ট হওয়া, আংশিক দৃষ্টি হারানো কিংবা সারা জীবনের জন্য দৃষ্টিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এমন বহু ঘটনা ঘটেছে।
যেসব শিক্ষার্থী এখনও সুস্থ এবং স্বাভাবিক আছে তাদের মধ্যেও পার🍌িপার্শ্বিক প্রভাব পড়বে। রাজপথের আন্দোলনে পাশে থাকা সহযোদ্ধাদের অনেকেই নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে, আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে, নিষ্ঠুরতার শিকার হয়েছে, যা প্রত্যক্ষ করেছে তারা। সেসব ঘটনায় স্বাভাবিক শিক্ষার্থীরাও মানসিকভাবে অনেক বিপর্যস্ত রয়ে গেছেন। যদিও আন্দোলনের বিজয় তাদের মধ্যে নতুন প্রাণ সঞ্চার করলেও ক্লাসে ফিরে তারা কতটা মনোযোগী হতে পার🎶বে সে প্রশ্ন থেকেই যায়।
শিক্ষকরা বলছেন, কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কতজন শিক্ষার্থী নিহত, আহত বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার রেকর্ড রাখা দরকার। একইসঙ্গে তাদের মধ্যে অন্যান্য মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন বিষণ্নতা (ডিপ্রেশন), উদ্বেগ, মানসিক চাপ, শোকগ্রস্ত হওয়ার প্রবণতা দেখা দিতে পারে সেসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। খুব দ্রুতই তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা কঠিন হয়ে পড়বে। তবে সামগ্রিকভাবে তাদের শিক্ষাজীবন যে🐓মন ব্যাহত না হয় সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে।
আহত, নিহত, গ্রেপ্তারকৃত শিক্ষার্থীর সংখ্যার তথ্য সংরক্ষণ বা ডাটাবেজ তৈরি, অভিভাবকদের সঙ্গে💟 প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে যোগাযোগের উদ্যোগ, শিক্ষার্থীদের ওপর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলা কীভাবে করা যায় সে ব্যাপারে কতটুকু প্রস্তুতি এসব নিয়ে এখনই ভাবতে হবে বলে মনে করছেন শিক্꧅ষকরা। তবে এর মধ্যেই ক্লাসে ফিরতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
শিক্ষকরা বলছেন, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বছরগুলো একজন শিক্ষার্থীর জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গঠনমূলক সময়। এ সময়ের অভিজ্ঞতা একজন শিক্ষার্থীর সারা জীবনের চিন্তাভাবনার ওপর গভীর প্রভাব রাখে। অথচ দেশে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে✃র শিক্ষার্থীদের অন্য রকম এক অভিজ্ঞতা নিতে দেখলাম। এটা তাদের পরবর্তী জীবনে রাষ্ট্র, রাজনীতি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, আইনি ও নাগরিক অধিকার সম্পর্কে প্রচণ্ড নেতিবাচক ও ভয়ংকর সব ধারণা পাওয়ার সুযোগ করে দিল।
এ রকম অবস্থায় এই তরুণদের মধ্যে জন্মানো ক্ষোভ–হতাশা এবং পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতি তাদের অনাস্থার প্রতিকার খুঁজতে হবে। এখন যদি শিক্ষার্থীদের কথা না শোনা হয়, তবে সেটি আবারও চিৎকারে পরিণত হবে। মনে রাখতে হবে, শিক্ষার্থীরা সব সমꦍয় আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার। কেননা তꦛারাই আগামী দিনের বাংলাদেশের চালিকাশক্তি।