• ঢাকা
  • রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Songbad Prokash

ইনস্টাগ্রাম

টুইটার


লিংকডইন

পিন্টারেস্ট

গুগল নিউজ


পাঠাগারের খোঁজে—৫

৮৬ বছর ধরে জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে যে পাঠাগার


রাজীব রাসেল, সিলেট
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২২, ০৯:৩০ এএম
৮৬ বছর ধরে জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে যে পাঠাগার

ভবনের তৃতীয় তলাজুড়ে সারি সারি বইয়ের তাক। সেখানে রয়েছে হাজার হাজার বই। বইয়ের পাশাপাশি ইতিহাসের নিদর্শন হিসেবে ꧂আছে মোগল সম্রাট আওরꦛঙ্গজেবের হাতে লেখা কোরআন শরীফ, স্বামী বিবেকানন্দের পত্রাবলী। সেখানে আছে নাগরী লিপিতে লেখা দুর্লভ অনেক বই। আছে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা বইয়ের সম্ভার।

বইপ্রেমীরা এখানে আসেন প্রতিদিন। শুধু আগমন-প্রস্থানের🍸 খাতায় একটি স্বাক্ষর করে নিশ্চিন্তে চোখ রাখেন পছন্দের বইটিতে।

এভাবেই প্রতিদিন জ্ঞানে🥀র 🐭আলো ছড়াচ্ছে সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ বা কেমুসাসর পাঠাগার। সিলেট নগরীর প্রাণকেন্দ্র দরগাহ গেটে অবস্থিত উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন সাহিত্য সংগঠন হিসেবে পরিচিত এই কেমুসাস।

প্রতিদিন অন্তত শতাধিক পাঠকের আগমন ঘটে এই পাঠাগারে। দুর্লভ বই, ম্যাগাজিন, শিলালিপির সবচেয়ে বড় বেসরকারি সংগ্রহশালাও এটি, যার 𓂃অনেক কিছুই ত্রয়োদশ শতাব্দীর। সিলেটে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিও উঠেছিল এই 🍌সাহিত্য সংসদ থেকে।

১৯৩৬ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ আবদুল মজিদ (কাপ্তান 💯মিয়া), প্রখ্যাত সাহিত্য গবেষক মুহাম্মদ নুরুল হক, হজরত শাহজালাল (রহ.) মাজারের তৎকালীন মোতাওয়াল্লি আবু ছাদ মো. আবদুল হাফিজের (ভূমিদাতা) প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠে কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ ও শহীদ সোলেমান হল।

তৎকালীন মুসলিম সমাজে সাহিত্যচর্চার ব্যাপক প্রচলন, বৃহত্তর সিলেটের বাংলা ভাষাভাষী অজ্ঞাতনামা কবি ও সাহিত্যিকদের রচিত পুঁথি সংগ্রহ এবং মুসলিম সাহিত্যসেবীদের সাহিত্য চর্চার সুযোগ করে দিতেই এ সংগঠনের জন্ম হয়। আর সংসদের ভেতরেই গড়ে তোলা হয় পাঠাগ💝ার। এখানে চতুর্থ তলায় রয়েছে ভাষাসৈনিক মতিন উদ্‌দীন আহমদ জাদুঘর। প্রতিদিন রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকে এই পাঠাগার।

সৈয়দ মুজতবা আলী, দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ, দিলওয়ার খান, চৌধুরী গোলাম আকবর (লোকসাহিত্য গবেষকꦗ), দেওয়ান ফরিদ গাজীসহ অন🥃েকেই এ প্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।

ভবনের তৃতীয় তলায় আছে বড় পাঠাগার। সেখানে রয়েছে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ধরনের বই। দ্বি✨তীয় তলায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কক্ষ। পা💮ঠাগারে রক্ষিত আছে অনেক দুর্লভ বই। ৫৫ হাজার বইয়ের মধ্যে প্রায় চার হাজারের মতো দুর্লভ বই আছে সেখানে।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, বিভূ💧তিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, কবি জসীমউদ্‌দীন, শেরেবাংলা এ কে ফজুলল হক, কবি শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, সঙ্গীতজ্ঞ আব্বাস উদ্দিন, কবি সুলতানা কামাল, কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ, বাউল শাহ আবদুল করিমসহ অনেক বরেণ্য কবি, সাহিত্যিক ও শিল্পীদের পদচারণে ধন্য হয়েছে এই সাহিত্য সংসদ।

সাহিত্যচর্চায় নিবেদিত ব্যক্তিত্বদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাꦍতে ২০০১ সাল🍸 থেকে ‘কেমুসাস সাহিত্য পুরস্কার’ দিয়ে আসছে এই সংগঠন। জ্ঞানচর্চায় ও সমাজসেবায় অবদানের জন্যে প্রতিবছর একজন বা দুইজনকে সাহিত্য সংসদের ‘সম্মানসূচক সদস্য পদ’ দেয়া হয়।

নতুন প্রজন্মকে প্রকৃতি, কবি-সাহিত্যিকদের🌠 সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে প্রতি বছর এই সংগঠন তাদের নিয়ে ঘুরে বেড়ায় দেশের বিভিন্ন এলাকায়। এই কর্মসূচির নাম দেয়া হয়েছে ‘শেকড়ের সন্ধানে অভিযাত্রা’।

এই পাঠাগারে নিয়মিত আসা পাঠক ও ‘চৈতন্য’ প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী রাজীব চৌধুরী বলেন, “আমার বাড়ি ক꧙াছেই। সেই সুযোগে এই পাঠাগারে আমি নিয়মিত আসি। এখানে প্রচুর দুর্লভ বইয়ের সমাহার। প্রয়োজনীয় অনেক বই সহজেই পড়তে পারি।”

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “ন🌸ানা কারণে বর্তমান সময়ে এখানে পাঠকের আনাগোনা কমে গেছে। আমার মনে হয় নতুন প্রজন্মকে পাঠাগারে আসতে উদ্বুদ্ধ করার জন্য ব্যাপক প্রচার প্রয়োজন, যেটা এখানে হচ্ছে 𝓰না।”

কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সহ-পাঠাগার সম্পাদক ইছমত হানিফা চ✅ৌধুরী বলেন, “আমি স্কুলে পড়ার সময় থেকেই এই পাঠাগারে আসছি। এখন আমি নিজে𝓀ই একটি স্কুলের শিক্ষক। এই দীর্ঘ সময়ে এখানে প্রচুর বই পড়েছি, যা আমাকে সাহিত্যচর্চায় উদ্বুদ্ধ করেছে। আমি মনে করি আমার পাঠক ও লেখক হয়ে ওঠার পেছনে কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ ও এর পাঠাগারের ভূমিকা অনেক।”

ইছমত হানিফা চৌধুরী আরও বলেন, “কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ যে শুধু পাঠাগারের ব্যবস্থা কর🌟েছে তা-ই নয়, এখানে প্রায় প্রতি সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হয় সাহিত্য আসর। এতে লেখক-পাঠকেরা অংশ নেন। এই চর্চাটা জরুরি মনে করি। এ পর্যন্ত ১ হাজার ১২১টি সাহিত্য আসর হয়েছে, যার অনেকগুলোয় বরেণ্য লেখকেরা অংশ নিয়েছেন।”

চলতি বছর কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সাবেক সভাপতি আবুল মাল আব্দুল মুহিতের (সাবেক অর্থমন্ত্রী) মৃত্যুর🌳 পর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান চৌধুরী।

তিনি বলেন, “ঐতিহ্যব🔴াহী এই পাঠাগারটিকে আমরা আরও সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করছি। আমরা চাই পাঠকের পদচারণা আরও বাড়ুক। সেজন্য আমাদের নানা উদ্যোগ অব্যꦍাহত আছে।”

Link copied!