শরীয়তপুরের ঐতিহ্যকে ধরে রেখে প্রতি বছরের মতো এবারও মাছ ধরা উৎসবে মেতেছেন শতাধিক জেলে। উৎসব করে মাছ ধরার এমন দৃশ্যের আনন্দ উপভোগ করতে পুকুরের চারপাশে ভিড় করেছেন হাজার হাজার দর্✅শনার্থী ও ক্রেতা। ২০০ বছরের অধিক সময় ধরে জেলার ফোড়কার পাড় নামক স্থানে এমন মাছ ধরার আয়োজন যেন আরও একবার মনে করিয়ে দেয় আমরা ‘মাছে ভাতে বাঙালি’।
শনিবার (ﷺ২০ এপ্রিল) সকাল ৮টা থেকে ডামুড্যা উপজেলার কনেশ্বর ইউনিয়নের শুতলকাঠি গ্রামের ফোরকার পাড়ের ঐতিহ্যবাহী পুকুরটিতে মাছ ধরা শুরু করেন জেলেরা। উৎসব করে মাছ ধরার এ আয়োজন চলবে সন্ধ্যা পর্য🧸ন্ত।
স্থানীয় বয়োজেষ্ঠ্য ও মাছ ধরার আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা যায়, শুতলকাঠি গ্রামের ফোরকার পাড় নামক স্থানে ঐতিহ্যবাহী পুরোনো একটি বিশাল পুকুর (দিঘি) রয়েছে। অনেকে আগে থেকেই পুকুরটিতে মাছ ধরা উৎসব করা হয়। কিন্তু কে বা কারা প্রথমে এমন আয়োজন শুরু করেছিলেন তা সঠিকভাবে বলতে পাড়ছেন না স্থানীয়রা। তবে বয়োজেষ্ঠ্যদের মত𝐆ে ২০০ বছরের অধিক সময় ধরে এভাবেই উৎসব করে এই পুকুরে মাছ ধরা হয়।
প্রত🉐ি বছরের মতো এবারও পুকুরের ৩২ জন মালিক ও মাছ ধরা আয়োজক কমিটি উৎসবের আয়োজন করেন। মাছ ধরার সময় নির্ধারণ হওয়ার পরে গত কয়েকদিন ধরে জেলার বিভিন্ন উপজেলার ১১১ জন জেলে আয়োজক কমিটির নিয়ম মেনে মাছ ধরার জন্য দুই হাজার থেকে ৫ ꩲহাজার টাকা মূল্যের টিকেট ক্রয় করেন। এরপর শনিবার সকাল থেকে একযোগে ঝাকি জালের মাধ্যমে মাছ ধরা শুরু করেন তারা।
জেলেদের মাছ ধরা দেখতে পুকুরের চারপাশে ভিড় করেছেন বিভিন্ন উপজেলার প্রায় ৩ হাজার দর্শনার্থী ও ক্রেতা। জেলেদের জালে বড় কোনো মাছ ধরা পড়লেই পুকুরের চারপাশ থেকে এসব দর্শনার্থী ও ক্রেতারা জয়ধ্বনি করে আনন্দ প্রকাশ করছেন। মাছ ধরে বিক্রির এমন উৎসবকে কেন্দ্র করে পুকুরের এক প্রান্তে বসেছে অস্থায়ী মেলা। প্রতি বছর দলবদ্ধ হয়ে মাছ শিকারের বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে পুকুর পাড়ে জড়ো হওয়ার পর একযোগে ছন্দের তালে তাল꧟ে পানিতে নেমে মাছ ধরা যেন বাঙালির ঐতিহ্যের জয়গান।
আব্বাস সরদার নামের একজন সংস༒দ প্রকাশকে বলেন, “এই দিঘিটির বয়স প্রায় ২০০ বছরের বেশি। দিঘিটি থেকে আমার বাবা ও দাদাও উৎসব করে মাছ শিকার করেছেন। বয়সের কালে আমিও উৎসব করে মাছ শিকাꦚর করতাম। আজ আমার ছেলেরা মাছ শিকার করতেছে। আমি দর্শক হয়ে আনন্দ করে মাছ শিকার দেখতেছি।”
গোসাইরহাট উপজেলা থেকে মাছ শিকারের উৎসব দেখতে আশা তন্ময় সিং সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “আমি জানতে পেরেছি পুকুরটি ২০০ বছরের পুরোনো। ২০০ বছর ধরেই উৎসব করে মাছ শিকার করা হয় পুকুরটি থেকে। এসে দেখলཧাম শতাধিক জেলে কলা গাছের ভেলা ভাসিয়ে উৎসব করে মাছ শিকার করছেন। পুকুরের চারপাশে হাজারও দর্শক উৎসবের সঙ্গে মাছ শিকারের দৃশ্য দেখছেন। তাদের সঙ্গে আমিও মাছ🌱 শিকারের এমন দৃশ্য উপভোগ করেছি। যাওয়ার সময় আমার সাধ্যমতো মাছ ক্রয় করব পরিবারের জন্য।”
সুকান্ত চন্দ্র শীল নামের একজন বলেন, “মাছে ভাতে বাঙালি কথাটা বলার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে এখন। কিন্তু🐈 এই পুকুরটি থেকে ২০০ বছর ধরে উৎসব করে মাছ শিকার, পুকুর পাড়ে মাছ বিক্রি ও বাড়ির চারপাশে মাছ ভাজার ঘ্রাণে এক অন্যর✨কম পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। আমি আমার বন্ধুর বাসায় পাঁচটি মাছ ভাজা খেয়েছি। এখন মনে হচ্ছে আমরা সত্যি সত্যি মাছে ভাতে বাঙালি।”
মাছ ধরা আয়োজক কমিটির প্রধান বিল্লাল হোসেন সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “আমরা মাছে ভাতে বাঙালি। ফোড়কার পাড়ের🃏 এই পুকুরটি থেকে মাছ শিকারের বিষয়টি ২০০ বছরের ঐতিহ্য। আমরা প্রতি বছর একই দিনে, একই সময়ে মাছ ধরার এমন আয়োজন করে থাকি। অনেক দূর-দূরান্ত থেকে জেলে ও দর্শনার্থী এখানে আসেন। বর্তমান প্রজন্ম হয়তো কিছুদিন পড়ে ভুলেই 🧔যাবে পুকুর থেকে মাছ ধরা যায়। এভাবে মাছ শিকারের বিষয়টি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে বাঙালির ঐতিহ্যকে বয়ে নিয়ে যাবে বলে আমি আশাবাদী।”
বিল্লাল হোসেন আরও বলেন, “২০𝐆০ বছরের ধারাবাহিকতা আমরা বজায় রেখেছি। জেলেরা উৎসব কꦦরে মাছ শিকার করছেন। অন্যদিকে উৎসবের সঙ্গে দর্শনার্থীরা দেখছেন, ক্রেতরা ক্রয় করছেন। আগামী বছর মাছ ধরার এই আয়োজনকে আরও সমৃদ্ধ করব ইনশাআল্লাহ।”
কনেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান বাচ্চু সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “ফোড়কার পাড়ের পুক💖ুরটি ২০০ বছরের অধিক পুরোনো। জানতে পেরেছি ২০০ বছরের অধিক সময় ধরে এভাবেই উৎসব করে মাছ ধরা হয় পুকুরটি থেকে। বাঙালির অবিচ্ছেদ্য বিষয় হলো মাছ। মাছ শিকারের এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে আয়োজক🐭 কমিটিকে আমি ধন্যবাদ জানাই।”