• ঢাকা
  • রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Songbad Prokash

ইনস্টাগ্রাম

টুইটার


লিংকডইন

পিন্টারেস্ট

গুগল নিউজ


‘মানত’ রক্ষায় সাইফুলের ব্যতিক্রমী বিয়ে


আরিফ আহমেদ সিদ্দিকী, পাবনা
প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২৩, ১২:৫৬ পিএম
‘মানত’ রক্ষায় সাইফুলের ব্যতিক্রমী বিয়ে

‘সোনা-রুপার আংটি দিয়ে মোড়ানো লাল কাপড় বেঁধে ছেড়ে দেওয়া হলো। যে প্রথমে ধরবে ছেড়ে দে🦩ওয়া গরুটি হবে তার। তবে ওই গরুর মালিক বা তার কোনো আত্মীয়-স্বজন নিতে পারবে না। শুধু কী তাই, তিন দিনব্যাপী চলেছে মাদারের (আঞ্চলিক ভাষা) পালা গান। সেইসঙ্গে চলে খাওয়া দাওয়া। এরপর পালকি চড়ে সারা গ্রাম ঘুরে কনের বাড়িতে বিয়ে করতে গেলেন বর। পাড়া প্রতিবেশীরাও হই-হুল্লোড়ে মেতে উঠলেন।

এসব শুনে মনে হতে পারে এটা কোনো সিনেমা বা নাটকের দৃশ্য। মনে হতে পারে রূপকথার কোনো গল্প। কিন্তু না, এভাবেই আয়োজনের মাধ্যমে বিয়ে করলেন পাবনার চাটমোহরඣ উপজেলার ছাইকোলা ইউনিয়নের কাটেঙ্গা নদীপাড়া গ্রামের মৃত খাদেমুল ইসলামের ছেলে ꦦসাইফুল ইসলামের (৩২)। শুক্রবার (২০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বিয়ের আয়োজন সম্পন্ন হয়।

সাইফুল ইসলাম ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন (এসএফডিএফ) চাকরি করেন। টানা কয়েক🃏দিনব্যাপী এই বিয়ের আয়োজনে এলাকাবাসীর মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছিল। পালকি চড়ে বর সাইফুল যখন কনের বাড়িতে গেলেন তখন এলাকার শত শত মানুষ ভিড় জমান একনজর বিয়ের অনুষ্ঠান দেখতে।

সাইফুল ইসলাম ও তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে༺ কথা বলে জানা যায়, সাইফুল ইসলামের বাবা ছিলেন ব্যবসায়ী। মা খোদেজা বেওয়া গৃহিণী। খোদেজা বেওয়া বিয়ের পর একে একে জন্ম দেন ৮ সন্তান। কিন্তু অজানা রোগে আক্রান্ত হয়ে সব সন্তানই মারা যায়। একটা সন্তানের আশায় পাগলপ্রায় হয়ে পড়েন খোদেজা বেওয়া।🌳 মানসিকভাবে ভেঙে পরে পুরো পরিবার।

এরপর খোদেজা বেওয়ার শাশুড়ি ময়না খাতুন নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলায় মেয়ের ꦍবাড়িতে বেড়াতে গিয়ে জা♕নতে পারেন সেখানকার শীতলী চরলালি মসজিদে ভেজা কাপড়ে গিয়ে আল্লাহর কাছে মানত করলে মনোবাসনা পূরণ হয়।

লোকমুখে শুনে ময়না খাতুন ওই মসজিদে গিয়ে ভেজা কাপড়ে দুই হাত তুলে আল্লাহর কাছে বলেন, “যদি ছেলের বউয়ের কোনো সন্তান হয় এবং বেঁচে থাকে তবে সেই সন্তানের বিয়ের সময় সোনা-রুপার আংটি দিয়ে মোড়ানো লাল কাপড় গরুর গলায় বেঁধে ༒গ্রামবাসীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে হবে মাদারের গান এবং পালকি চড়িয়ে পুরো গ্রাম ঘুরিয়ে বিয়ে করানো হবে সেই সন্তানকে। আর বরযাত্রীকে খাসি জবাই করে খাওয়ানো হবে।”

এর কিছুদিনের মধ্যেই সাইফুল ইসলামের জন্ম হয়। শুধু সাইফুলই নয়, তার মা ⛄খোদেজা বেওয়ার কোল আলো করে পর পর জন্ম নেয় একটি মেয়েসহ আরও তিন সন্তান। পরিবারে বইতে থাকে খুশির বন্যা। এরমধ্যে কেটে গেছে ৩২ বছর। পৃথিবীর মায়া ত্যাগ ক꧟রে চলে গেছেন সাইফুলের দাদী ময়না খাতুন ও বাবা খাদেমুল ইসলাম। অবশেষে দাদীর সেই ‘মানত’ রাখতেই নানা আয়োজনের মধ্যে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন সাইফুল ইসলাম। কনে একই উপজেলার বরদানগর মরশিন্দা গ্রামের বাচ্চু মিয়ার মেয়ে মায়া খাতুন।

আলাপকালে সাইফুল ইসলাম বলেন, “দাদীর মানত রাখতে এইভাবে বিয়ের আয়োজন করতে হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় দুই লাখ টাকা খরচ হয়েছে। আত্মীয়-স্বজন সবাইকে ন✱িয়ে খুবই আনন্দ হয়েছে। আর পালকি চড়ে বিয়ে করা শুধু শুনেছি, এবার নিজে সেই আনন্দ উপভোগ করলাম।”

সাইফুলের মা খোদেজা বেওয়া বলেন, “আমার শাশুড়ি বেঁচে থাকতে এই মানত করেছিলেন। তিনি মৃত্যুর আগে আমাকে বলে যান, ছেলের নাম সাই꧒ফুল থাকবে। আর যেভাবে মানত করেছি সব ঠিকমতো পালন করবে। তার সেই মানত আমি পূরণ করলাম। আল্লাহ আমাদের ভাল রেখেছেন, সন্তানদের সুস্থ রেখেছেন। আমরা খুব খুশী।”

বিয়ে⛎র কনে মায়া খাতুন বলেন, “আমি শুনেছি দাদীর মানত রাখতে এভাবে বিয়ের আয়োজন করেছেন তারা। আমাদের বাড়িতেও আনন্দ উৎসব হয়েছে। আমরা খুব খুশি। সবাই দোয়া করবেন যে আমরা সুখী হতে পারি, শ্বশুরবাড়ির সবাইকে নিয়ে ভাল থাকতে পারি।”

ছাইকোলা ইউনিয়ন পরিষদের চে๊য়ারম্যান নুরুজ্জামান নুরু বলেন, “ব্যতিক্রমী এই বিয়েটা একেবারেই অন্যমাত্রা এনে দিয়েছে। গ্রামবাসী উপভোগ করেছেন সাইফুল ইসলামের বিয়ে।”

Link copied!