বালা গ্রাম নামে পরিচিত সাতক্ষীরা দেবহাটা উপজেলার উত্তর সখিপুর গ্রাম। সকাল হলেই খট... খট... শব্দে মেতে ওঠে পুরো গ্রাম। যে যার মত💝ো কাজে ব্যস্ত। নিজ বাড়ির উঠান কিংবা বাড়ি সংলগ্ন ছোট কারখানায় চলে কর্মযজ্ঞ। কেউ পিতলের পাত গরম করছেন, কেউ সেটি মাপ অনুযায়ী কেটে জোড়া দিয়ে লম্বা পাইপে পরিণত করছেন, কেউ তৈরিকৃত পাইপে গালা ভরছেন, কেউ গালা ভরা পাইপ পিটিয়ে গোলাকার বালায় (রুলি) রূপ দিচ্ছেন। এরপর বালা থেকে গালা বের করে বালার দুই মুখ জোড়া দিচ্ছেন। কেউ সেই বালায় আবার গালা ভ🀅রছেন, কেউ সেই বালায় সেনি দিয়ে টুক টুক করে পিটিয়ে খোদাই করে নকশা করছেন। এভাবেই কয়েক হাত ঘুরে প্রস্তুত হয় বালা।
এ গ্রামের দুই শতাধিক পরিবারে উৎপাদিত বালা প্রাথমিকভাবে যায় ঢাকা, যশোর, চট্টগ্রামসহ কয়েকটি💖 বড় জ🙈েলা শহরে। সেখানে হাতে তৈরি খোদাইকৃত এসব বালায় রঙ পালিশ করা হয়। তারপর তা চলে যায় সারা দেশে।
বালা তৈরির এই কর্মযজ্ঞে শামিল হওয়ায় গ্রামটি থেকে দূর হয়েছে বেকারত্ব। সেই সঙ্গে নিজ বাড়িতে কাজ করতে পারার সুবাদে অনেকꦆ পরিবারের গৃহিণীরাও যুক্ত হয়েছেন এই কাজে। এতে পরিবারের❀ সচ্ছলতা ফিরিছে তাদের।
উত্তর সখিপুর 🦋গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “আমি প্রতিদিন ৮-১০ জোড়া বালায় নকশা করতে পারি। প্রতি জোড়ার জন্য ৬০ টাকা করে মজুরি 🃏পাওয়া যায়। বাড়ি বসেই কাজটি করতে পারায় ঘের-বেড়ির পাশাপাশি বালা তৈরির কাজ শিখেছি।”
এ গ্রামের জিয়ারুল ইসলাম 🧸বলেন, “ডিজাইন ভেদে মজুরিরও ভিন্নতা আছে। সাধারণ ডিজাইনের জন্য ৬০টাকা জোড়া মজুরি পাওয়া যায়। ইরানি গোলাপসহ কিছু আলাদা ডিজাইন আছে, সেগুলোর জন্য ১৮০ টাকা মজুরি পাওয়া। এছাড়া গালা ভরা, পাইপ বানানো ইত্যাদির জন্য প্রতি জোড়ায় ১৩ টাকা করে মজুরি পাওয়া যায়। গড়ে প্রত্যেক কার🦹িগর দিনে ৬০০ থেকে ১০০০ টাকা আয় করতে পারেন।”
বালা তৈরির কারিগর হাসান আল𝓀ী বলেন, “বছর ১৫ আগে মিজানুর রহমান নামে একজন প্রথমে এই গ্রামে সাতক্ষীরা থেকে এক কারিগর নিয়ে এসে বালা তৈরির কাজ শুরু করেন। তার থেকেই আমরা এই কাজ শিখেছি। ধীরে ধীরে তা পুরো গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে।”
দশ বছর ধরে এ কাজে যুক্ত উল্লেখ করে হাসান আলী আরও বলেন, “আমার কাছ থেকেই ১৫-১৭ জন বালা তৈরির কাজ শিখেছে। এ গ্রামের যুবকেরা অন্য কাজের চেয়ে এই কাজে এখন বেশি মনোযোগী। কারণ কাজটি স্বাধীন। সবাই ইচ্ছে খুশি মতো কাজ করতে পারে। ইচ্ছে খুশি মতো নিজের আয় বাড়াতে পারে।🎃 ঝুঁকি কম। মহাজন বালা দেয়, আমরা ডিজাইন করি। নিজের বাড়িতে বসে কাজ করি। বাড়ির মহিলারাও কাজ করতে পারে। সেই সঙ্গে নিজের পুকুর-ঘের দেখাশোনা করি।”
এ গ্রামের আশরাফুল ইসলাম আগে নিজে ডিজাইনের কাজ করলেও এখন নিজের কাজের পাশাপাশি নিজেই কাঁচামাল কিনে অন্যদের কাজ দেন। তিনি বলেন, “একেকটি বালা প্রস্তুতের জন্য কয়েক ধাপের কাজ করতে হয়। প্রস্তুতকৃত বালার জোড়া আ♎কৃতি ভেদে ১২৫ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। পরে এসব বালা রঙ পালিশ করে আরও বেশি দামে বিক্রি করেন পাইকাররা। তখন খুচরা বাজারে এসব বালার দাম ২০৫ টাকা জোড়া থেকে ১২০০ টাকায় গিয়ে দꦯাঁড়ায়।”
আশরাফুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, “আগে আমরা রং পালিশ করেই বিক্রি করতাম। তখন লাভ আরও বেশি ছিল। কিন্তু সাতক্ষীরা সীমান্ত জেলা হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিশেষ করে বিজিবি এগুলো ভারতীয় বলে হয়রানি করতো। আটকে দিতো। তাই এখন রং পালিশ ছাড়াই বিক্রি করা হয়। এছাড়া বর্তমানে কাঁচামালের দাম একটু বাড়তি। কিন্তু প্রস্ত🧸ুতকৃত বালার দাম বাড়েনি। এজন্য লাভ একটু কম হচ্ছে।”
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) সাতক্ষীরার উপব্যবস্থাপক গোলাম সাকলাইন বলেন, “তারা আগ্রহী হলে তাদের আধুনিক পণ্য উৎপাদনের প্রশিক্ষণ ও ঋণ দেওয়ার উদ্যোগ নেবে বিসিক। পা𝓰শাপাশি পণ্য মার্কেটিং করার সময় যাতে কেউ হয়রানির শিকার না হন সেজন্য তাদের একটি তালিকা প্রস্তুত করেꦦ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের লাইসেন্স দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে।”