‘মাতৃভাষা বাংলা চাই’ স্লোগানে ১🧔৯৪৮ সাল থেকেই আন্দোলনে মুখর ছিল রাজশাহী। শুধু তাই নয়, মায়ের ভাষায় কথা বলার জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে প্রথম রক্ত ঝরেছিল রাজশাহীতেই। রাজশাহীতে দেশের প্রথম শহীদ মিনার স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি হয়েছিল।
ভাষা আন্দোলনে রাজশাহীতে অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি অংশগ্রহণ করেছেন। তাদের মধ্যে নেতৃস্থানীয় ছিলেন কয়েকজন। আর তাদের নেতৃত্ব দিয়েছেন ভাষা সৈনিক মোশাররফ হোসেন আখুঞ্জি। ভাষা আন্দোলন♐ের স🌠ময় তিনি ছিলেন রাজশাহী কলেজের ছাত্র।
ভাষা আন্দোলনের দিনগুলোর কথা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, “ভাষা আন্দোলনে রাজশাহীর সর্বস্তর𒆙ের ছাত্র-জনতা ১৯৪৮ সাল থেকেই সক্রিয় ছিল। ওই সময় থেকেই যেকোনো আন্দোলনের সূতিকাগার ছিল রাজশাহী কলেজ। আমরা ভাষা আন্দোলনে ঢাকার ছাত্র-জনতার 🌠আন্দোলনের সঙ্গে তাল রেখে রাজশাহীতে আন্দোলন-সংগ্রাম কর্মসূচি পালন করতাম।”
ওইদিনের ঘটনার বর্ণনা জানিয়ে মোশাররফ হোসেন বলেন, “১৯৪৮ সালে রাজশাহী নগরীর ফায়ার ব্রিগেড মোড়ে ছাত্র-জনতার মিছিলে তৎকালীন মুসলিম লীগের ক্যাডার বাহিনী 🌺ও পুলিশ হামলা করে। এতে একজন শিক্ষার্থী মারাত্মকভাবে আহত হন। এরপর থেকেই রাজশাহীর ছাত্র-জনতা আন্দোলনে আরও বেশি করে সম্পৃক্ত হন এবং আন্দোলন দুর্বার গতি লাভ করে।”
তিনি বলেন, “১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকায় ভাষার দাবিতে ছাত্র-জনতার আন্দোলন তখন তুঙ্গে। ২১শে ফেব্রুয়ারি রাজশাহীতে আমরা দিনভর ঢাকার খবর জানার জন্য গভীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম। কারণ, রাজশাহীর ছাত্রদের মনে গভীর আশঙ্কা ছিল ঢাকায় বড় কিছু ঘটতে পারে। সন্ধ্যার দিকে রাজশাহীতে খবর ✤এলো ঢাকায় ছাত্রদের ওপর গুলি 💧করা হয়েছে। অনেক ছাত্র আহত ও নিহত হয়েছেন। এ খবর পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে রাজশাহী শহরে বিষাদের ছায়া নেমে আসে। দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। তখন সব আন্দোলনেই ছাত্রদের জমায়েত হওয়ার স্থান ছিল রাজশাহী কলেজ। সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পরেই কলেজের নিউ হোস্টেলে একে একে রাজশাহীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা সমবেত হতে শুরু করে। একপর্যায়ে কয়েকশ’ ছাত্র জমায়েত হলেন হোস্টেল প্রাঙ্গণে। সবার চোখে-মুখে ভীষণ উৎকণ্ঠা, কিন্তু দৃঢ় প্রত্যয়ে সবার কণ্ঠেই উচ্চারিত হচ্ছে, ‘ছাত্র হত্যার বিচার চাই, রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই।”
মোশাররফ হোসেন বলেন, “তৎকালীন রাজশাহী মেডিকেল স্কুলের (বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল) সিনিয়র ছাত্র এসএম𓆏 গাফ্ফারের সভাপতিত্বে শুরু হলো ছাত্রদের প্রতিবাদ সভা। সভায় দুটি প্রস্তাব গৃহীত হলো।”
তিনি বলেন, “রাজশাহীতে দুর্বার গতিতে ভাষা আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য গঠিত হলো ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও শহীদ ছাত্রদের 𓆏স্মরণে শহীদ মিনার নির্মাণ কমিটি। ইট ও কাদামাটি দিয়ে যেভাবেই হোক, রাতেই শহীদদের স্মরণে একটি শহীদ মিনার তৈরি করতে হবে বলে সবাই সিদ্ধান্ত নিলেন। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি হলেন মেডিকেল স্কুলের ছাত্র এসএম গাফ্ফার এবং যুগ্ম আহ্বায়ক হলেন রাজশাহী কলেজের সিনিয়র ছাত্র গোলাম আরিফ টিপু (বর্তমানে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর) ও নাটোরের হাবিবুর রহমান। এরপর ওই রাতেই ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে নির্মাণ করা হলো শহীদ মিনার। সেটি রাত জেগে পাহারাও দেওয়া হলো। কিন্তু সকাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মুসলিম লীগের কর্মীরা ও পুলিশ এসে শহীদ মিনারটি ভেঙে দিলো।”
তিনি আরও বলেন, “শহীদ মিনার নির্মাণ বা তার অবয়ব সম্পর্কে তখন আমাদের কোনো ধারণা ছিল না। এ অবস্থায় সারা রাত ধরে ইট ও কাদা-মাটি দিয়ে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করলাম। শহীদদের স্মরণে স্তম্ভের গায়ে লিখে দেওয়া হলো ‘শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’। এছাড়া স্মৃতিস্তম্ভটিতে আরও লেখা হলো কবিগুরুর বিখ্যাত কবিতার একটি চরণ- ‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণ♚ী, ভয় নাই ওরে ভয় নাই। নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান, ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।’ প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও শহীদ মিনারটির ছবি তোলা হলো একটি পুরোনো ভাঙাচোরা ক্যামেরা দিয়ে, যা সংরক্ষিত আছে সবার কাছে।”