• ঢাকা
  • সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Songbad Prokash

ইনস্টাগ্রাম

টুইটার


লিংকডইন

পিন্টারেস্ট

গুগল নিউজ


ওয়ার্কশপের কাজ ফেলে মুক্তিযুদ্ধে যান দুলাল হোসেন


আরিফ আহমেদ সিদ্দিকী, পাবনা
প্রকাশিত: মার্চ ২৪, ২০২৩, ০৯:৫১ পিএম
ওয়ার্কশপের কাজ ফেলে মুক্তিযুদ্ধে যান দুলাল হোসেন
বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. দুলাল হোসেন

বাবার সঙ্গে এলাকার একটি ওয়ার্কশপে কাজ করতাম। ছিলাম মেকানিক। তখন আমার বয়স ১৮ বছর। ১৯৭১ সালের উত্তাল ৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণ শুনে উদ্বুদ্ধ হয়েই কাজ ফেলে চলে যাই দেশ মাতৃকার টানে স্বাধীনতার যুদ্ধে—কথাগুলো বলেন পাবনা পৌর এলাকার চকগোবিন্দা মহল্লার চাঁদম🧸ারীর মরহুম শেখ বন্দের আলীর ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. দুলাল হোসেন।

দুলাল হোসেনের জন্ম ১৯৫২ সালের ১০ সেপ্টেম্বর, পাবনা পৌর শহরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের চক-গোবিন্দা, 💜চাঁদমারী ম🌞হল্লায়। পাঁচ ভাই তিন বোনের মধ্যে তিনি পঞ্চম।

দেশ স্বাধীন করতে গিয়ে ডান হাতে গুলি লেগে পঙ্গু হয়ে যান দুলাল হোসেন। তবুও জীবনযুদ্ধে হতাশ নন🎃 তিনি। তার বড় প্রাপ্তি লাল-সবুজের এ বাংলাদেশ। দুলাল হোসেনের মতে, দেশ স্বাধীন হলেও যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি। তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযোদ্ধাদের কাঙ্𒁃ক্ষিত স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

পাবনা পৌর এলাকার বাসিন্দা যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. দুলাল হোসেন করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন, স্মৃতি শক্তি কমে গেছে। শুধু মনে আছে কীভাবে ডান হ🌟াতে পাক হানাদার বাহিনীর গুলিতে আহত হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে প্রথম কীভাবে যুদ্ধে গেলেন, বিভিন্ন সময়ে যুদ্ধের লোমহর্ষক বিবরণ দিতে গিয়ে চোখ গড়িয়ে জল পড়ছিল।

বীর মুক্তিযোদ্ধা দুলাল হোসেন বলেন, “আট ভাই-বোনের অভাব অনটনের সংসারে প্রাইমারি স্কুলের গণ্ডি পার হতে পারি নাই, বাবার সঙ্গে একটা 🌱ওয়ার্কশপে মেকানিকের কাজ করতাম। সামান্য বেতনে পেতাম। রেডিওতে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শুনছিলাম। ভাষণ শুনে বুঝতে পারি, সামনে কঠিন সময় আসছে। লড়✨াই করতে হবে। কয়েকদিন পরেই ২৫ মার্চ গণহত্যা শুরু করে পাকিস্তানি বাহিনী।”

জীবনের মায়া না করে যুদ্ধ করেছি। শেষ পর্যন্ত একটি অপারেশনে গিয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে—সেদিনের সে ঘটনা বলতে গিয়ে কিছুটা হতবিহবল হয়ে যান দুলাল হোসেন। তিনি দেখান ডান হাতের কনুইয়েরജ পাশে কীভাবে গুলি লেগেছিল, যার ক্ষতচিহ্ন এখনও বয়ে বেড়াচ্ছেন। তিনি জানান, অপারেশন করে গুলি বের করা হলেও এখনও সমস্যা আছেই।

এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, “যতদূর মনে পড়ে ২৭ মার্চ পাবনার চাঁদমারী (সার্কিট হাউস) এলাকায় আমরা পাকিস্তানি বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে গাছের গুড়ি ফেলে ব্যারিকেড দিই এবং স্থানীয়ভাবে✨ সংগ্রহে থাকা অস্ত্রের সাহায্যে আক্রমণ করার চেষ্টা করি। কিন্তু তাদের সঙ্গে আমরা পেরে উঠি না।”

যুদ্ধে যাওয়ার কথা জানিয়ে দুলাল হোসেন বলেন, “প্রথমে স্থানীয়ভাবে ফুটু ওস্তাদ আমাদের পাকিস্তানিদের সঙ্গে কীভাবে যুদ্ধ করতে হবে, কীভাবে নিজে আত্মরক্ষা করতে হবে, এমন প্রশিক্ষণ দেন। পরে ভারতে গিয়ে ২ মাসের প্রশিক্🐈ষণ নিয়ে দেশে এসে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। ভারতে যাওয়ার স্মৃতি খুব কষ্টকর। দুই-তিনদি✨ন না খেয়ে, কুষ্টিয়া হয়ে ভারতে যাই। শিয়ালদহ স্টেশনে নামি, তারপর ভারতের একজনের সহযোগিতায় ভারতীয় ক্যাম্পে প্রশিক্ষণের সুযোগ পাই। অনেক স্মৃতি এখন মনে নেই, অনেকের নাম ভুলে গেছি।”

পাবনা সদর উপজেলার সানিকদিয়ার যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমার ডান হাতে গুলি লেগেছিল। সেলিম নামের এক মুক্তিযোদ্ধা আমার বাম পাশেই ছিল। সে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। আমার ডান হতে গুলি লাগার পর শুয়ে পড়ি। তারপরও আমার মাথার ওপর দিয়ে▨ গুলি চলেꦐ যাচ্ছে বৃষ্টির মতো। মরতে মরতে বেঁচে যাই।”

পারিবারিকভাবে বীর মুক্তিযোদ্ধা দুলাল হোসেন তিন কন্যা সন্তানের জনক।𒊎 তিন কন্যাই বিবাহিত। যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা দুলাল হোসেন জানান, “যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ছাড়া আয়ের আর কোনো উৎস নাই। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপে, হার্টের সমস্যা, চোখের সমস্যাসহ নানা রোগে ভুগছেন তিনি। প্রয়োজন উন্নত চিকিৎসা, কিন্তু টাকার অভাবে তাও করতে পারছেন না।

স্বাধীন বাংলাদেশের কাছে প্রত💃্যাশার কথা জানাতে গিয়ে দুলাল হোসেন বলেন, “বিভিন্ন সময় নিজের চোখে মুক্তিযোদ্ধাদের অপমানিত ও লাঞ্ছিত হতে দেখেছি। কিন্তু এখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকন্যা মানಞনীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান দিয়েছেন। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাই।”

Link copied!