আজি হতে প্রায় শত বছর আগে সত্যেন বোস যখন অধ্যাপক পদের জন্য দরখাস্ত করেন তখন তার সাথে ডি এম বোসও দরখাস্ত করেছিলেন। কে এই ডি এম বোস? তিনি হলেন দেবেন্দ্রমোহন বোস। আদি নিবাস আমাদের কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা উপজেলার জয়সিদ্ধি গ্রামের বিখ্যাত বসু পরিবারে তার জন্ম। তার চাচা হলেন আনন্দমোহন যার নামে ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ স্থাপিত। দেবেন্দ্রমোহনের মামা হলেন স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু। কলকাতায় গিয়ে যেখানে বাড়ি করেন সেই বাড়ির চারপাশে ছিলেন কেশব চন্দ্র সেন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যা সাগর, রাজা রামমোহন রায়। দেবেন্দ্রমোহন বসু পড়াশুনা করেছেন ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাভেন্ডিস ল্যাবে। কাজ করেছেন নোবেল জয়ী ও ইলেক্ট্রন আবিস্কারক জে জে থমসনের সাথে। ১৯১৯ সালে ক্যামব্রিজ থেকে পিএইচডি শেষে কলকাতায়🌺 ফিরে এসে আবার ইউরোপে যান। সেখানে যাদের সংস্পর্শে আসেন তাদের মধ্যে অন্যতম প্ল্যাংক, আইনস্টাইন, পিটার ডিবাই, ম্যাক্স বর্ন, সামারফিল্ড প্র𓂃মুখ।
১৯২৬ সালে আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপক নিয়োগের বি🔜জ্ঞাপন হয়। সেই সময় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের বেতন বেশ বেশি। সেই সময় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে নিয়োগের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিমান অধ্যাপকদের কাছে যোগ্𒁏য প্রার্থীর সন্ধান চাওয়া হতো। সেই সময় দেবেন্দ্রমোহন বসু ও আমাদের সত্যেন্দ্রনাথ বসু দুজনেই দরখাস্ত করেছিলেন। সত্যেন বসুর পিএইচডি ছিল না। সেই সময় অধ্যাপক নিয়োগের জন্য বিখ্যাত গবেষকদের পরামর্শ নেওয়া হতো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ তখন জার্মান বিজ্ঞানী আর্নল্ড সামারফিল্ড এর মতামত জানতে চেয়েছিলেন।
কে এই আর্নল্ড সামারফিল্ড? অধ্যাপক সামারফিল্ডের পিএইচডি ছাত্রদের মধ্যে ছিলেন নোবেলজয়ী Heisenberg, Pauli, Debye, এবং Hans Bethe! সামারফিল্ডের ৩ জন পোস্ট ডক্টরাল ফেলো নোবেল পুরস্কার পেয়েছে। এছাড়া বিখ্যাত পিএইচডি ছাত্রদের মধ্যে ছিলেন Peierls, Lenz, Meissner, Landé, এবং Brillouin সহ অসংখ্য। সেই মানের অধ্যাপক ছিলেন আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক নিয়োগ বোর্ডের এক্সটার্নাল। সত্যেন বোস ইন্টারনাল প্রার্থী ছিলেন এবং উনার পিএইচডি না থাকলেও উনার ছিল আইনস্টাইনের রেকমেন্ডেশন। সামারফিল্ড দুজনের কাগজপত্র দেখে লিখেছিলেন "দুজনই যোগ্য, তবে আমি দেবেন্দ্রমোহন বসুকে প্রাধান্য দিচ্ছি"। সিলেকশন বোর্ড দেখলো বস🐻ুর পিএইচডি নাই কিন্তু দেবেন্দ্রমোহন বসুর পিএইচডি আছে। অফার পাঠানো হয়েছিল দেবেন্দ্রমোহন বসুকে। সত্যেন বসু তখন আইনস্টাইনের আমন্ত্রণে শিক্ষা ছুটিতে ইউরোপে। সত্যেন বসুকেও অফার লেটার পাঠান﷽ো হলো এ বলে যে যদি দেবেন্দ্রমোহন বসু যোগ দিতে অসম্মতি জানায় তবেই আপনাকে নিয়োগ দেওয়া হবে। ফ্যাক্ট হলো দেবেন্দ্রমোহন শেষমেশ ঢাকায় আসতে অসম্মতি জানিয়েছিলেন ফলে সত্যেন বসুই অধ্যাপক হিসাবে নিয়োগ পান।
তাহলে বুঝতে পারছেন এক সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ বিধিমালা কেমন ছিল? এমনি এমনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলা হয় না। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে আরেক বিখ্যাত গবেষক ছিলেন যার নাম জ্ঞানচন্দ্র ঘোস যাকে বলা হয় ইনস্টিটিউট স্রষ্টা। তার হাতেই বর্তমান ভারতের এক নম্বর বিশ্ববিদ্যালয় ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সাইন্স উন্নত হয়, খড়গপুরের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি বিখ্যাত হয়। আর সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আজকে কোথায়? এর প্রধান কারণ নিয়োগ ও প্রমোশন নীতিমালা সহজ থেকে সহজতর করা হয়েছে। এখন অধ্যাপক নিয়োগে আর আন্তর্জাতিক মানের বিখ্যাত অধ্যাপকদের পরামর্শ নেওয়া হয় না। এখন নিয়োগ বোর্ডে যারা থাকেন তারা যতটা না শিক্ষক তার চেয়ে বেশি রাজনীতিবিদ। তখন একজন অধ্যাপক তার বেতন দিয়ে অন্তত ৩০০ মন চাউল কিনতে পারতেন। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের বেতন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের চেয়ে বেশি ছিল। ꦑএখন সব শুধু উল্টে যায়নি। বেতন এখন প্রায় ৩ ভাগের এক ভাগ। মানও ৩ ভাগের ১ ভাগে নেমে এসেছে।
১৯১১ সালে Tsinghua University জন্ম হয়। তার ১০ বছর পর ঢাকা বা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্ম। ১০ বছর আগে জন্মে Tsinghu🎐a University আজকে ওয়ার্ল্ড রেঙ্কিং-এ ২৫ আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮০০ থেকে ১০০০ এর মধ্যে। কেন আমরা পিছিয়ে পড়লাম। কোথায় আমাদের গলদ? গলদ আর কোথাও না। গত ৫২ বছর ধরে আমরা শিক্ষক নিয়োগের সিস্টেমকে abuse করে শিক্ষক নিয়োগের চেয়ে রাজনীতিবিদ নিয়োগ দিয়ে গিয়েছি। এটি করতে করতে আমরা এটিকে ভাগাড় বানিয়ে ফেলেছি। যেখানে সেখানে ১২টি আর্টিকেল প্রকাশ করে অধ্যাপক হওয়া যায়। ছাত্র ছাত্রীদের থিসিস সুপারভাইস না করিয়ে বা করানোর যোগ্যতা না থাকলেও অধ্যাপক হওয়া যায়। কারো নেচার, সাইন্স জার্নালে প্রকাশনা থাকলে যেমন সম্মান নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শূন্য মানের জার্নালে প্রকাশ করলেও একই মান। কিভাবে তাহলে ভালো বিশ্ববিদ্যালয় হবে? শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া সারা বিশ্বে আমূল পরিবর্তন হয়ে গেছে। এখনꩵ পিএইচডি ছাড়া কেবল না পিএইচডি প্লাস পোস্ট-ডক অভিজ্ঞতা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপকও হওয়া যায় না। এইসব উন্নত নিয়ম করতে হলে উন্নত বেতন কাঠামো লাগবে। সেটাও হচ্ছে না। এইসব বুঝলে বুঝপাতা না হলে তেজপাতা।