১৫ লাখ টাকার ছাগল-কাণ্ডে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মতিউরের কানাডাপ্রবাসী মেয়ে ফারজানা রহমান ইপ্সিতা তার স্বজনের কাছে ভয়েস মেসেজে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাঠানো চাঞ্চল্যকর ভয়েস মেসেজ দেখা যাচ্ছে।
প্রথম স্ত্রী রায়পুরা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ ও তার সন্তানরা আজকের এ পরিস্থিতির জন্য দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী-সন্তানদের দায়ী করছেন। একই সঙ্গে স্বামীকে ডিভোর্স দিতে দ্বিতীয় স্ত্রীকে চাপ দিচ্ছেন মতিউরের বোন। বিশেষ করে মঙ্গলবার মতিউরের বিভিন্ন ব্যাংক ও পুঁজিবাজারের বিও অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করার পর সব ওলটপালট হয়ে গেছে। ভাইয়েরাও চলে গেছেন আত্মগোপনে। বন্ধু, শুভাকাঙ্ক্ষীরাও দূরে সরে আক্ষেপ ও মজার ছলে বলছেন, এক ছাগলে তছনছ হয়ে গেছে মতিউরের সাজানো বাগান। একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
ইতোমধ্যে বিশ্বখ্যাত ম্যাকলারেন ব্র্যান্ডের বিলাসবহুল গাড়ির ছবিসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছেন এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমানের প্রথম পক্ষের মেয়ে ফারজানা রহমান ইপ্সিতা। যে বাবার কল্যাণে কানাডায় তার বিলাসী জীবন, সেই বাবাকেই এখন ছেড়ে কথা বলছেন না।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছাগল-কাণ্ড ভাইরাল হওয়ার প্রসঙ্গে ইপ্সিতা তার ভয়েস মেসেজে বলেন, “মানুষের দোষ তো নাই রে ভাই। দেশের মানুষ তো আসলেই কষ্ট করে। এই লোকটা আমার মারে এত বড় চিট করল ভাই। আমি এক মিনিট পরপর আমার মার (মায়ের) সঙ্গে কথা বলতাছি (বলছি)। আমার মা হাউমাউ করে কান্দে (কাঁদে)। আমার ভাই কান্দে। আমার ভাই আমারে বলে, বাপ আমাদের কখনো ভালোবাসে নাইরে আপু। ভালোবাসলে সে এইভাবে চিট করত না। এখন কী করব, জানিনা রে ভাই। আমার আর ভাল্লাগে (ভালো লাগে) না। মানুষের রাগ তো আমি বুঝতে পারছি। বিকজ আপনারা অনেক ভুক্তভোগী। এই...সরকার। আল্লাহ মাফ করুক, আসলেই ভুক্তভোগী। কিন্তু আমার ফ্যামিলি, আমার, আমার মা-ভাইয়ের কোনো দোষ এখানে ছিল না ভাই। তার আছে অনেক। আমি জানি টাকাপয়সাও ইলিগ্যাল না। তার ভালো ফ্যামিলি। বিয়াও করছিল ভালো ফ্যামেলির মাইয়া (মেয়ে)। তাইলে ভালো ফ্যামিলির মাইয়ারে বিয়া (বিয়ে) কইরা (করে) তুই রাখতে পারলি না। তোর এত খারাপ লাগছে, আমার মারে ছাইড়া তুই চইলা যাইতি। তুই আমাদের চিট করলি কেন। তুই তোর চাকরি বাঁচাইতে পারবি, টাকা বাঁচাইতে পারবি। কিন্তু তুই যে আমাদের ধোঁকা দিছোস, এইটা আমরা কী করুম। আমরা কই যামু (যাব), কারে মুখ দেখামু (দেখাব)।’
ভয়েস মেসেজের আরেকটি ক্লিপে তিনি বলেন, “আমার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টটা খাইয়া দিছে হ্যাকারে। ইভেন আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রবলেম করতাছে। মানুষ আমার পেছনে লাগছে কেন বুঝলাম না। ইভেন আমার পেজে...এগুলো কে করাচ্ছে? আমি কার ক্ষতি করলাম। আমার মার অ্যাকাউন্টে প্রবলেম করতাছে। আমার মা তো একজন উপজেলা চেয়ারম্যান। এখানে না, কেউ একজন মাস্টার গেম আছে, মানে কেউ একজন আমাদের সঙ্গে গেম খেলতাছে। আমি হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিওর। আপনি পলিটিকসে ছিলেন। আপনি বোঝেন না। মনে হইতাছে আমাদের সঙ্গে গেম খেইলা ওই ফ্যামিলি সামনে আসতে চাইতাছে। বেটার তো আসলেই টাকাপয়সা আছে। তার পুরা চৌদ্দগোষ্ঠী ভালো বিজনেস কইরা যাইতেছে। তার ভাই ভালো বিজনেজ করে। এক্সপোর্ট-ইম্পোর্টের বিজনেস। তার ছোট ভাইয়ের তিন-চারটা গার্মেন্ট। সব নিজের। তার তো কিছুর অভাব নাই। আমার কেন জানি মনে হয়, সম্পত্তির জন্য ওই সেকেন্ড ফ্যামিলি সামনে আসতে চাইছে। বাপে মনে হয় বলছে না, এখন সে আমাদের অ্যাকিউস কইরা কইরা এই কাহিনিটা করছে। নাইলে কেন করবে। এখন কয় ছাগল সে কিনে নাই। ছাগল বউয়ের জন্য কিনছে, বউ পছন্দ করছিল। অথচ শুরুতে কইছিল বাবা পছন্দ করছে। শুরু কী করছে পোলায়।” মতিউরের প্রমোশন, সম্পদ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও পারিবারিক ড্রামার অনেক তথ্য ফাঁস হয়েছে ইপ্সিতার ভয়েস মেসেজে।
জানা যায়,ℱ মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজও আত্মগোপনে আছেন। ঈদের পর থেকে তিনি উপজেলা পরিষদের অফিসে যাওয়া থেকে বিরত রয়েছেন। নেই বসুন্ধরার বাসায়। কোথায় আছেন, তা তার ঘনিষ্ঠজনরাও বলতে পারছেন না। প্রথম পক্ষের ছেলে আহমদ তৌফিকুর রহমানও পারিবারিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে যাচ্ছেন না। বন্ধুবান্ধব কারও সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন না। এমনকি লায়লা কানিজ, কাইয়ুমসহ পরিবার♐ের অন্যরা ঈদের দুই দিন পর পর্যন্ত যেসব মোবাইল নম্বর ব্যবহার করতেন, সেগুলো এখন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, কৌশল হিসাবে তারা নতুন মোবাইল নম্বর ব্যবহার করছেন।