• ঢাকা
  • রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Songbad Prokash

ইনস্টাগ্রাম

টুইটার


লিংকডইন

পিন্টারেস্ট

গুগল নিউজ


সৃজনের জন্মই দুঃখ থেকে : আতাউর রহমান


শাহাদাত হোসেন তৌহিদ
প্রকাশিত: আগস্ট ৫, ২০২১, ০২:৪২ পিএম
সৃজনের জন্মই দুঃখ থেকে : আতাউর রহমান

আতাউর রহমানের পরিচিতি বহুবিধ। নাট্যজন, অভিনেতা, মঞ্চ নির্দেশক, লেখক। মঞ্চসারথি হিসেবে যিনি উপাধি লাভ করেন। বরেণ্য এ নাট্যজনের জন্ম ১৯৪১ সালের ১৮ জুন নোয়াখালীতে। স্বাধীনতাযুদ্ধ-প🎃রবর্তী মꦅঞ্চনাটক আন্দোলনের অগ্রদূতখ্যাত এ ব্যক্তি মঞ্চনাটকে অবদানের জন্য ২০০১ সালে একুশে পদক পান। আতাউর রহমানের এ সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন শাহাদাত হোসেন তৌহিদ


সংবাদ প্রকাশ: আপনি একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, গণমাধ্যমের কাছে আপনার প্রত্যাশা কী?

আতাউর রহমান: গণমাধ্যম💧ে অন্যান্য সংবাদের পাশাপাশি নাচ-গানও থাকতে হবে। ক্ল্যাসিক্যাল ডান্স হতে পারে, মণিপুরি নৃত্য হতে পারে, ভাওয়াইয়া, আধুনিক গান হতে পারে। কবিতা আবৃত্তির একꦛটা সেশন হতে পারে। একটা বিষয় নিয়ে তর্কবিতর্কের সেশন করতে হবে। সবকিছু মিলিয়ে কিন্তু সংস্কৃতি। কোনটা আমি নেব আর কোনটা নেব না, সেটা আমার বিষয়। মানুষের সামনে তো অনেক খাবার থাকে। মানুষ কি সবকিছু খায়? বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেন এর খবর পৌঁছে যায়। তাহলে আমার মনে হয় লোকে মজা পাবে।

সংবাদ প্রকাশ: নাটকসংক্রান্ত এ দেশের মানুষের মনোভাব কি এখনো রক্ষণশীল?

আতাউর রহমান: পৃথিবীর সব জায়গাতেই রক্ষণশীলতা রয়েছে। সাধারণভাবে এখন অনেক ঔদার্য এসেছে। এখনো অনেক পরিবার মনে করে, নাটক দেখা হয়তো শরিয়তবিরোধী। আবার অনেকে কিন্তু দ্বিচারিণী। মানে এটাও করে, ওটাও করে। তাসও খেলে, নামাজ💎ও পড়ে। এটা নিয়ে অনেকের সঙ্গে আমার ঝগড়াও হয়েছে যে আপনি নামাজও পড়ছেন, আবার তাসও খেলছেন। আপনাকে দুটোর একটা করতে হবে। আর যদি বলেন যে না আমি এখানে নাটক-গান ঢুকতে দেব না, শুধু ধর্মীয় পুস্তক নিয়ে আলোচনা হবে, হোক। সেটাও একধরনের সংস্কৃতি, সবকিছুই সংস্কৃতি। সবকিছু মিলিয়ে কিন্তু পৃথিবীটা তৈরি। ধর্মীয় আলোচনা কিন্তু পৃথিবীর অংশ। ধর্মীয় আলোচনা যিনি করেন, তিনিও গানও শোনেন। আমাদের মহানবীর সময় হামদ-নাত হতো। তিনি বলতেন যে মিউজিক্যাল ইনস্টুমেন্ট ছাড়া হতে পারে।

সংবাদ প্রকাশ: নাট্যচর্চার পাশাপাশি আপনি রবীন্দ্রচর্চা ও শেকসপিয়ার চর্চাতেও বহুদিন ধরে রত আছেন, এখন এ-সংক্রান্ত ব্যস্ততা নিয়ে যদি কিছু বলতেন।

আতাউর রহমান: রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে বলতে এটা আমার একধরনের কৌতূহল। কৌতূহল মানুষকে অনেক দূর নিয়ে চলে যায়। আমি চীনে রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে বক্তৃতা দিয়েছি। প্রায় ষাট মিনিট বাংলা একাডেমিতে একক বক্তৃতা দিয়েছি, এভাবে বহু জায়গায় দিয়েছি। এক জায়গাতে একজন বলল, তুমি রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে এত বলছ, নজরুল সম্পর্কে বলতে পারবে? আমি বলেছি, আমি দুই ঘণ্টা বলতে পারব। তারপর আমি আমি জেদ করে বললাম আমি স্টিফেন হকিংয়ের ব্ল্যাক হোল নিয়ে এক ঘণ্টা বক্তৃতা দিতে পারব। আমি নিউটন, আইনস্টাইন সম্পর্কে এক ঘণ্টা করে বলতে পারব। কারণ, আমার জীবন সম্পর্কে জানার আগ্রহ প্রচুর। কেতাবি ধর্ম নিয়ে একবার আমি রাত ৪টা পর্যন্ত পড়লাম হজরত ইব্রাহিম থেকে শুরু করে দাউদ-মুসা হয়ে হজরত মুহাম্মদ-ইক্বরা বিসমে এসে থামলাম। রাত চারটার আমার ছোট ভাই দেখল আমার ইন্টারনেট ওপেন। আমার স্ত্রীকে ফোন করে জাগিয়ে সে বলল, ভাইয়ের বয়স হয়েছে উনাকে ঘুমিয়ে পড়তে বলো। এই যে আগ্রহ, মুক্তিযুদ্ধের গানও আছে, মহাশ্বেতা দেবীও আছে, কী নেই আমার এখানে, ভারতে𓂃র গ্রেটেস্ট স্পিচেস আছে। একটা জিনিস হচ্ছে যে, বাড়িটা হবে বিদ্যালয়। সেই জায়গাটা এখন আর নেই। এখন সবাই ক্যারিয়ারের পেছনে দৌড়াচ্ছে।

সংবাদ প্রকাশ: সাংস্কৃতিক বিকাশে বর্তমান সরকার কালচারাল সেন্টার প্রতিষ্ঠার কথা বলছেন, এ নিয়ে যদি কিছু বলেন। কিংবা সাংস্কৃতিক বিকাশে আর কী কী করা যেতে পারে?

আতাউর রহমান: আমাদের সরকার প্রতিটা জেলায় শিল্পকলা একাডেমি করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটি স্বপ্ন আছে, লিয়াকত আলী লাকীও আমাকে বলেছিলেন, তিনি জায়গাও ঠিক করে রেখেছেন, দেখিয়েছেন ওই জায়গাটা। যেখানে উনি সিডনি অপেরা হাউসের চেয়েও বড় একটি অপেরা হাউস করবেন, যেখানে পৃথিবীর সব জায়গা থেকে লোক এসে নাটক করবেন। বাঙালির সংস্কৃতি ঔদার্য আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও স্বীকার করেন। জাতির পিতাও স্বীকার করতেন। আমাদের যা সুকৃতি, আমরা কৃপণ নই, সেটা বিদেশে আমরা নিয়ে যাব। বিদেশ থেকে যা সুন্দর, যা আমাদের কল্যাণকর সেটা আমরা নিয়ে আসব। যে কারণে আমরা বহু বিদেশি নাটক অনুবাদে রূপান্তর করেছি, বিদেশি কবিতা/প্রবন্ধ/উপন্যাস আমরা অনুবাদ করেছি। আমরা সেদিক থেকে উদার। এই করোনাকাল যদি কেটে যায় আমাদের সরকার নিশ্চয় সংস্কৃতির ক্ষেত্রে আবারও কাজ শুরু হবে। উনারা জানেন, সংস্কৃতি একটি জাতির পরিচয় বহন করে। যেটা আজকে বঙ্গবন্ধুর কথা বারবার আসছে। কারণ, তিনি রবীন্দ্রনাথকে ভালোবাসতেন। ‘কারাগারের রোজনামচা’তে তিনি বলছেন, তিনি কত পড়াশোনা করতেন, বলতেন আজকে মনটা ভালো নেই, শরীরটা খারাপ, ঘুম হচ্ছে না কিছুতেই, তখন তিনি বলতেন যে, ঘুমানোর জন্য আমার বন্ধু শহীদুল্লা কায়সারের ‘সংশপ্তক’ বইটা হাতের কাছে ছিল— ওটা টেনে পড়েছি।
এভাবে তিনি প্রতিনিয়ত পড়তেন। তিনটা অসাধারণ বই লিখেছেন—আমার দেখা নয়া চীন, অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা। তিনি যদি সুযোগ পেতেন তিনি যদি জীবনের বেশির ভাগ সময় কারাগারে না কাটতেন, তাহলে তিনি উইনস্টন চার্চিলের মতো অনেক বই লিখতে পারতেন। নোব🐓েল পুরস্কার পেতেন কি না, সেটা আমি জানি না। হয়তো পেতেন বা পেতেন না। কিন্তু উনার লেখকসত্তা অনেক বড় ছিল। তিনি যে বিরাট বক্তা ছিলেন তা নয়, লেখকসত্তাও কম ছিল না। তো, আমাদের ধারণা যে, আমরা 🦋যদি এটা (করোনা) উত্তীর্ণ হই আমাদের দেশ আবার নবজোয়ার আসবে। 

সংবাদ প্রকাশ: সংস্কৃতি বিকাশে সরকার আর কী কী করতে পারে?

আতাউর রহমান: আমি প্রায়ই বলি, ১৯৫৬ সালে ভাঙা ক্যামেরা দিয়ে সত্যজিৎ রায় ‘পথের পাঁচালী, অপুর সংসার, অপরাজিতা’ করেছিলেন সেটাকে আজ পর্যন্ত কেউ অতিক্রম করতে পারেনি। যে কাজ করছে সে মানুষটি সবচেয়ে বড়। টেকনোলজির দরকার আছে, কিন্তু টেকনোলজি সবচেয়ে বড় নয়। সেটা মনে রেখে মানুষ তৈরি করতে হবে। স্কুল-কলেজে বেশি তাদের শিল্প-সাহিত্য সংস্কৃতি কবিতা পড়াতে হবে। এবং তাদের শিল্পমনস্ক করে গড়ে তুলতে হবে। সবার মাঝে যদি দেশপ্রেমকে যদি উজ্জীবিত করা যায় তাহলে শিল্প সংস্কৃতি এমনিই চলবে। আমাদের কবিতা-সাহিত্য এগিয়ে চলবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী সব সময় লেখাপড়া নিয়ে থাকেন, নিজে লেখেনও। আমাদের অনেক মন্ত্রীরাও লেখাপড়া নিয়ে থাকেন। আমাদের মধ্যে আধুনিক যুগে আবদুল্লাহ আল মামুন হয়েছ⛎েন, সেলিম আল দীনের মতো নাট্যকার হয়েছেন, সৈয়দ শামসুল হকের মতো বহুপ্রভা লেখক হয়েছেন। একটা কথা মনে রাখতে হবে, সুযোগ পেলেই যে ভালো হবে, এর কোনো অর্থ নেই। কারণ, মানুষের দুঃখ থেকেই কিন্তু সৃজনের সৃষ্টি। সৃজনের জন্মই দুঃখ থেকে।

সংবাদ প্রকাশ: সৃজনের জন্মই দুঃখ থেকে, একটু ব্যাখ্যা করবেন?

আতাউর রহমান: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ট্যাংকের মধ্যে বসে একজন লিখছেন। কখন গুলি পড়বে, বোমা পড়ে মরে যাবে, ঠিক নেই🍬 কিন্তু লিখছে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় চিত্রকর ভিনসেন্ট ভ্যান গখ না খেয়ে প্রায় মারা যান। জীবনানন্দ দাশ ট্রামের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে না খেয়ে মারা গেছেন। দুঃখ বেদনা থেকে কবিতার জন্ম। বাল্মিকী প্রথম শ্লোক লিখলেন, তিনি দস্যু রত্নাকর থেকে বাল্মিকী হলেন— সেটা অন্য কাহিনি। তিনি দেখলেন যে,ღ পঞ্চপাখি যখন প্রেম করছে বা কাছাকাছি যেমন কবুতররা করে, তখন তাদের একটিকে মেরে ফেললেন, তখন ওই পাখিরা ওড়ে। একটা মরলে কাকও ওড়ে। ওড়ে মানে কাঁদতে থাকে। কা কা করে চিৎকার করে কাঁদতে থাকেন। তখনই বাল্মিকীর মুখ থেকে বেরিয়ে গেল প্রথম পৃথিবীর শ্লোক বা কবিতা—মা নিশাদ ‘মা নিষাদ প্রতিষ্ঠাং ত্বমগমঃ শাশ্বতীঃ সমাঃ।/যৎ ক্রৌঞ্চমিথুনাদেকমবধীঃ কামমোহিতম্।।’ রবীন্দ্রনাথ বলছেন, এতেই কি বলিয়া মনি সাপ দিলো তারে, সেই সাপে এক শ্লোক নিঃস্বরিলো বুকে। সেই শোক হইতে শ্লোকের হইল উপাদান। না নিশাদ ভরিয়া তাহার উপাখ্যান। দুঃখ থেকে কবিতার জন্ম।

বিশ্বকর্মাকে পাঠাল ব্রহ্মা, তুমি এই নবরত্ন ছন্দ দিয়ে কী করবে? বলে আমি তো জানি না। বলে, রামের জীবনী লিখব। রাম সম্পর্কে ও জানে না। রবীন্দ্রনাথ বলছেন, তুমি রচিবে যাহা তাহাই সত্য বটে কবির কলমে। এখন শোনা যায় যে, জন্মই হয়নি রামের কিন্তু 🐷রামায়ণ লেখা হয়ে গেছে। কাজেই দুঃখ ও বেদনা ছাড়া শিল্প সৃজন হয় না। খুব সুখী মানুষকে দিয়ে শিল্প সৃজন হয় না।

সংবাদ প্রকাশ: শিল্প-সংস্কৃতির ব্যাপারে সরকার উদাসীন—এমন একটি অভিযোগ রয়েছে।

আতাউর রহমান: না, এটা একেবারেই ঠিক না। সম্পূর্ণ ভুল। আসাদুজ্জামান নূর আমাদের আগের মন্ত্রী মহোদয় ছিলেন শিল্পেরই লোক, এখন যিনি আছেন প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ তিনিও শিল্পের অনুসারী ও অনুরাগী। আমাদের প্রত্যেক মন্ত্রী এবং ওবায়দুল কাꦕদের সাহেব তার সামনে আমি একুশে পদক পে⭕য়েছি। তিনিও সংস্কৃতিমন্ত্রী ছিলেন। আমাদের মহিলা সমিতিতে এসে নাটক দেখতেন। ইন্ডাস্ট্রিকে বাঁচানোর জন্য যে টাকা লাগবে, সেটাতে শিল্পের ক্ষেত্রে হবে না। তারপরও শিল্পের ক্ষেত্রে অনুদান দিচ্ছে। যে টাকা অনেক সময় ফেরত যায়। কারণ, আমরা স্পন্সরশিপ পাই। আমাদের সরকারের বিবেচনায় আছে একটা সেলারি গ্র্যান্টেড প্রত্যাশা করি যে প্রত্যেক নাটকের লোক টাকা পাবে অথবা নাটকের ১০টা দল সিলেক্ট করবে এ বছর যে তাদের জন্য থোক বরাদ্দ দিয়ে দেবে। যে তোমাকে আমি ১০ লাখ টাকা দিয়ে দিলাম যে তোমার থেকে আমি ‍দুটো নাটক চাই। হয়তো চার-পাঁচ লাখ টাকা খরচ হবে বাকিটা তোমার ভাগ করে নাও। শিল্পকলা তো দেয়। আমার হ্যামলেট নাটকে প্রত্যেকে ৫ হাজার, ৩ হাজার, ২ হাজার হলেও পায়, দিচ্ছে তো। এক দিনে তো সব সমস্যা সমাধান হবে না। আমাদের দেশের মাত্র পঞ্চাশ বছর পূর্তি হয়েছে মানুষকে হাজার বছর অপেক্ষা করতে হয়।

কথাপ্রকাশ বিভাগের আরো খবর

Link copied!