যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন ঋষি সুনাক। দেশটির ইতিহাসে এই♋ প্রথম কোনো ব্রিটিশ-এশিয়ান ব্যক্তি সরকারের হাল ধরেছেন। ক্ষুরধার মেধা আর নিজের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ব্যবহার করে মাত্র সাত বছরে আরোহণ করেছেন রাজনীতির শিখরে। ১৮১২ সালের পর মাত্র ৪২ বছর বয়সে যুক্তরাজ্যের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন সুনাক। তবে এই অবস্থানে আসাটা তার🌱 জন্য মোটেও সহজ ছিল না। অবশ্য ভাগ্যকে পাশে পেয়েছেন এই ভারতীয় বংশোদ্ভূত।
ঋষির পরিবারের আদি বাসস্থান ভারতের পাঞ্জাব অঞ্চলে। পাঞ্জাবের সেই অংশটি এখন পাকিস্তান অংশে পড়েছে। তার দাদা যখন ভারত ছাড়েন, সেই ১৯৩৫ সালে, পুরো ভারতীয় উপমহাদেশে তখন ব্রিটিশ শাসন চলছে। ভাগ্যের খোঁজে রামদাস সুনাক ভারত থেকে পর🐠িবার নিয়ে আফ্রিকার নাইরোবিতে পাড়ি জমান। এরপর ১৯৬০ সালে চলে আসেন যুক্তরাজ্যে। ঋষির বাবা যশবীর সুনাকের জন্ম কেনিয়ায় এবং মা উষার জন্ম তানজানিয়ায়। যশবীর ছিলেন একজন চিকিৎসক এবং উষা একজন ফার্মাসিস্ট।
১৯৮০ সালের ১২ মে যুক্তরাজ্যের সাউদাম্পটনে যশবীর ও উষার ঘরে জন্ম নেন ঋষি। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবনে তিনি পড়েছেন যুক্তরাজ্যের উইনচেস্টার কলেজে, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যা🅺লয়ে এবং ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়াশোনা করেছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দর্শন, অর্থনীতি ও ব্যবসায় শিক্ষা বিষয়ে।
কর্মজীবনে তিনি বেশ বিখ্যাত ও বড় কিছু প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। রাজনীতিতে আসার আগে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নিজেඣর বিলিয়ন ডলারের কোম্পানি। তার সামগ্রিক সম্পদের সিংহভাগ অর্জন করেছেন এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজ করে। তার বয়স ৩০ হওয়ার আগেই তিনি মাল্টি মিলিয়নিয়ার ধনীদের তালিকায় নাম লেখান।
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ করার সময়ে ঋষির সঙ্গে তার স্ত্রী অক্ষতা মূর্তির পরিচয় হয়। অক্ষতা একজন ভারতীয় নাগরিক। তিনি যুক্তরাজ্যের নাগরি🦩কত্ব গ্রহণ করেননি। ২০০৯ সালে তারা বিয়ে করেন। কৃষ্ণা ও আনুশকা নামে তাদের দুই মেয়ে আছে। অক্ষতা মূর্তি ভারতের ধনকুবের নারায়ণ মূর্তির মেয়ে। ভারতের অন্যতম তথ𒁏্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইনফোসিসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা অক্ষতার বাবা নারায়ণ।
ইনফোসিস কোম্পানির শূন্য দশমিক ৯২ শতাংশ শেয়ারের মালিক অক্ষতা। ফলে তার সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৭৮ কোটি ডলার। যা প্রয়াত রানি এলিজাবেথের সম্পদ থেকেও বেশি। আর ঋষি-অক্ষতা দম্পতির মোট সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ৮২ কোটি ডলার। এই পরিমাণ সম্পদ নিয়ে তারা যুক্তরাজ্যের শীর্ষ ধনীদের তালিকায় আছেন ২২২তম অবস্থানে। তবে যুক্তরাজ্যের নাগরিক না হওয়ায় এই অর্থের কোনো কর দিতে হয় না অক্ষতাকে। তবে স্বামী যুক্তরাজ্যের নাগরিক হওয়ায় তিনি সহজেই দেশটির নাগরিক হতে পারতেন। কিন্তু নাগরিকত্ব গ্রহণ করলেই যুক্তরাজ্যের সরকারকে তার সম্পত্তির কর হিসেবে ২ কোটি ডলার দিতে হবে। এই সূক্ষ্ম হিসাবটির জন্য সম্প্রতি রাজনৈতিক ক্যারিয়ার🌜ে বেশ চাপে পড়ে যান সুনাক। পাশাপাশি এই দম্পতির বিলাসবহুল জীবনযাপনের জন্য অনেকেই সুনাককে যুক্তরাজ্যের সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরের নেতা বলে মনে করেন।
ঋষির রাজনীতিতে উত্থান ২০১৫ সালে যুক্তরাজ্যের এমপি হওয়ার মাধ্যমে। তিনি ই♔য়র্কশায়ারের রিচমন্ড আসন থেকে কনজারভেটিভ পার্টির এমপি নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৯ সালের নির্বাচনে জিতে হন অ🙈র্থ প্রতিমন্ত্রী এবং ২০২০ সালে অর্থমন্ত্রী।
২০২২ সালে পার্টিগেট কেলেঙ্কারিতে বরিস জনসনের বিদায়ের পর প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে প্রার্থী হন ঋষি সুনাক। তবে ভাগ্য সেবার তার সহায় হয়নি। ২০ হাজার ভোটে হেরে যান লিজ ট্রাসের কাছে। তবে মাত্র ৪৫ দিনের মাথায় ট্রাস প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর পর বিনা নির্বাচনেই প্রধানমন্ত্রী হন সুনাক। এবার তার সামনে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিকে চাঙা করে তোলꦚার লক্ষ্য। তিনিও এই লক্ষ্যে কাজ করার এবং দলকে পুনরায় ঐক্যবদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
সূত্র: বিবিসি, গার্ডিয়ান, লাইভমিন্ট