জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ক্যাম্পাসে গণহত্যার নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দেশের একমাত্র গুচ্ছ ভাস্কর্য ‘৭১ এর গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি’। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক দিয়ে ঢুকলেই দেখা যায় শান্ত চত্বরে মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে আছে ভাস্কর্যটি। এটি তৈরি করেছেন খ্যাতনামা শিল্পী ভাস্কর রাশা। সহকারী ভাস্কর ♈হিসেবে ছিলেন রাজিব সিদ্দিকী, রুমী সিদ্দিকী, ইব্রাহীম খলিলুর রহমান এবং মিয়া মালেক রেদোয়ান।
মুক্তিযুদ্ধের সময় সাধারণ মানুষদের ধরে এনে তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের (বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) ভেতরে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে হত্যা করা হতো। হত্যার পর লাশের স্তূপ সাজিয়ে গণকবর দেওয়া হত🏅ো যেখানে।✱ সেই স্থানটিতেই নির্মাণ করা হয়েছে গুচ্ছ ভাস্কর্যটি।
এ ভাস্কর্যটিতে মুক্তিযুদ্ধকালীন🍎 গণহত্যা ও যুদ্ধের প্রস্তুতির চিত্র ফুটে উঠেছে। ভাস্কর্যটি দুটি অংশে বিভক্ত। এক অংশে রয়েছে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি। অপর অংশে রয়েছে পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মম গণহত্যার চিত্র।
ভাস্কর্যটির যে অংশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মম গণহত্যার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, সেখানে বেদনার জায়গা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ২৫ মার্চের কালরাতকে। এ অংশে দেখানো হয়েছে—এই রাতে ইয়াহিয়া খান মাতাল অবস্থায় আছেন, পাকিস্তানিরা হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। গর্ভবতী মাকে অত্যাচার করে হত্যা করা হচ্ছে। লাশ ফেলে রাখা হচ্ছে যেখানে সেখানে। ভাস্কর্যের অংশ হিসেবে রয়েছে একটি পত্রশূন্য বৃক্ষ। তার ওপর একটি শকুন বসে আছে। এর দ্বারা সে স𒐪ময়ে শ্মশান হয়ে যাওয়া বাংলাদেশের প্রতীক বোঝানো হয়েছে।
অপর অংশে রয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতির চিত্র। বাংলার কামার, কুমার, জেলে, কৃষিজীবী মানুষ—মোটকথা সর্বস্তরের মানুষ একত্রিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে লড়ছেন। দা, বটি, খুন্তি, কোচ, বর্শা সবকিছু নিয়ে শত্রুর মুখোমুখি হয়েছেন তারা। পরের অংশে দেখা যায়, সবাই আধুনিক অস্ত্র নিয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। যুদ্ধে নামার পর যখন মুক্তিযোদ্ধারা বুঝতে পারেন, পুরোনো পদ্ধতি দিয়ে তাদের সঙ্গে পেরে ওঠা সম্ভব নয়, তখন সবাই প্রশিক্ষণ নেওয়া শুর🍬ু করেন, যেখানে রয়েছে সব বয়সী নারী-পুরুষ। পরিপূর্ণ যুদ্ধের জন্য গেরিলা কৌশল, মাঝারি আকারের অস্ত্রের ব্যবহার শিখছেন তারা। ভাস্কর্যের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছেন প্রশিক্ষণ নেওয়া সাহসী এক কৃষকের ছেলে। তার চোখে যুদ্ܫধজয়ের নেশা। মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিতে সবার চোখে প্রতিশোধের স্পৃহার ছাপ রয়েছে। ভাস্কর্যে সবার মাথা সোজা, মুখ লালবর্ণের। এর কারণ রাগ হলে মানুষের চেহারাও লালবর্ণ ধারণ করে। অন্যদিকে গণহত্যার দৃশ্যের রং ধূসর, কারণ এটি আমাদের বেদনাদায়ক স্মৃতি।
ভাস্ক♑র্যটির নিচে রয়েছে পানি। যা দিয়ে নদীমাতৃক বাংলাদেশকে বোঝানো হয়েছে। পানির মধ্যে রয়েছে বাংলা বর্ণমালা, যা দিয়ে ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে তুলে ধরা হয়েছে। এতে বোঝানো হয়েছে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সফলতায় বাংলার মানুষের মধ্যে স্বাধীনতার ভাবনা আসে।
১৯৮৮ সালে ভাস্কর্যটির নির💝্মাণকাজ শুরু হয়। শেষ হয় ১৯৯১ সালে। ২০০৮ সালের ৩১ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. স𓃲িরাজুল ইসলাম খান এটি উদ্বোধন করেন।