আজ বাংলা কথাসাহিত্যের অন্যতম নক্ষত্র মতি নন্দী নব্বই পূর্ণ করলেন। ‘নক্ষত্রের রাত’ তাঁর প্রথম উপন্যাস। গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ১৯৫৯। তখন 🔴তিনি ২৮। আজ থেকে ৬২ বছর আগে। আজও নক্ষত্রের রাত-এ ময়লা পড়েনি। যেমন পুরনো হয়নি বাওবাব, সাদা খাম, বারান্দা, নায়কের প্রবেশ ও প্রস্থান, নীল থলি, দুঃখের বা সুখের জন্য, গোলাপবাগান, বিজলিবালার মুক্তি— এমন অন্তত আরও বেশ কয়েকটি উপন্যাস। আয়তনে কৃশ কিন্তু বারুদঠাসা। যেখানে লেখক মানবরহস্যের গভীর কুয়ো থেকে প্রেম অপ্রেম দখল সন্দেহ প্রতিশোধ রিরংসা— মানুষের অসহায়তা অক্ষমতা কাহিনির ক্যাপসুলে পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন। পাঠককে স্বস্তি দিতে নয়, বিব্রত করতে। ভাতঘুম উপহার দিতে নয়, ঘুম না-আসা রাতে একাকী পায়চারি করে করে অবসন্ন করে দেবে বলে। শবাগার, বেহুলার ভেলা, জলের ঘূর্ণি ও বকবক শব্দ, একটা খুনের খবর, জালি, অবিনাশের সাড়ে আটচল্লিশ, একটি মহাদেশের জন্য— এমন আরও বেশ কিছু গল্প ‘মতি নন্দীর হাতের ক্ষুর’, যা দিয়ে তিনি আজও পাঠকের মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করেন, রক্তক্ষরণ হয়। ক্ষুরে আজও মর🐽চে পড়েনি।
তিনিই প্রথম এবং আজও একমেবাদ্বিতীয়ম, যিনি ক্রীড়াকে সাহিত্য করেছেন। খেলার দুনিয়ার আবেগ পরিশ্রম সাফল্য ব্যর্থতা জয়-পরাজয় জেদ অপমান পাঠককে উপহার দিয়েছেন। পাঠক অনাস্বাদিত কাহিনিতে মুগ্ধ হয়েছেন। বাঙালি পাঠকের ঘরে ঘরে তাই বড়ো আদরের কোনি, স🥀্টপার, স্ট্রাইকার, ননীদা নট আউট, জীবন অনন্ত, অপরাজিত আনন্দ, শিবা, কলাবতী— আরও অনেকে। নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের লড়াই আর স্বপ্নকে জয়ী করেছেন লেখক। পাঠক নিজেকে শনাক্ত করতে পেরেছেন। জনপ্রিয় হয়েছেন লেখক। সংগত কারণেই। এই জনপ্রিয়তাই আবার কুজ্ঝটিকা সৃষ্টি করেছে, আড়াল🎀 করেছে লেখকের একান্ত নিজস্ব ‘ক্ষুরের’ প্রকৃত ধার, বুঝতে পারা যায়। যে নির্মোহ গদ্য , বাহুল্যবর্জিত কথন, নিষ্ঠুর নিষিদ্ধ বাস্তব তাঁকে বাংলা সাহিত্যে স্বতন্ত্র করেছে— তার উত্তাপের পরিচয় অতি নিবিষ্ট অনুসন্ধিৎসু পাঠক ছাড়া সার্বিক পাঠকের কাছে পৌঁছানোয় দিগভ্রান্ত কিছুটা যেন-বা। লেখকের নয়, এ তো বাংলা সাহিত্যের ক্ষতি।
এই ব্যতিক্রমী লেখকের নব্বই-পূর্ণ জন্মদিনে আমরা পাঠ করি, মনোনিবেশ করি, অনুসন্ধানে মাতি বিশেষত সেইসব উপন্যাস গল্পে, যেখানে মতি নন্দী একক, নিঃসঙ্গ অভিযাত্রী। তাঁরই আবিষ্কৃত তাঁরই নির্মিত নিজস্ব দ🍌্বীপের একমাত্♉র স্বত্বাধিকারী। বাংলা সাহিত্যে নিজস্ব ভুবনের আবিষ্কারক মতি নন্দীকে বিনত প্রণাম।