নিকারাগুয়ার দুই প্রজন্মের দুই কবির কবিতা

আলম খোরশেদ প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৯, ২০২৪, ০৫:২৯ পিএম
নিকারাগুয়ার দুই প্রজন্মের দুই কবি

অনুবাদ ও ভূমিকা: আলম খোরশেদ
 

ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষপাদে লাতিন আমেরিকার সাহিত্যে যে-আধুনিকতাবাদী আন্দোলনের সূত্রপাত হয়, যাকে বলা হয়ে থাকে মোদের্নিসমো, যার ঢেউ আটলান্টিকের অপর পারে খোদ স্পেনে গিয়েও লাগে, রুবেন দারিওই (১৮৬৭-১৯১৬) তাঁর মূল প্রবক্তা। তাঁর জন্ম ১৮৬৭ সালে নিকারাগুয়ার মাতাগাল্পা শহরে। খুব অল্প বয়সেই লিখতে এবং ভ্রমণ করতে শুরু করেন তিনি। ভ্রমণের এক পর্যায়ে চিলেতে থাকার সময় ১৮৮৮ সালে তিনি প্রকাশ করেন Azul নামে একটি ব্যক্তিগত গদ্যপদ্যের গ্রন্থ, যার ভেতর দিয়ে সূচিত হয় এমন এক নতুন সাহিত্যভাষা ও ভাবনার; অচিরেই যা লাতিন ♉আমেরিকার সাহিত্যের তৎকালীন আঞ্চলিক চেহারাটিকে আমূল পাল্টে দিয়ে তাকে করে তোলে বৈশ্বিক, আধুনিক ও আন্তর্জাতিক। রুবেন দারিওর ভাষিক নিরীক্ষা, প্রথাভাঙা চিন্তার চর্চা, উপনিবেশবিরোধিতা, সর্বোপরি আধুনিক, যুক্তিবাদী মনন লাতিন আমেরিকান সাহিত্যের, বিশেষ করে কবিতার শরীরে নতুন প্রাণ ও শক্তির সঞ্চার করে, যা অদ্যাবধি সদর্পে স্পন্দ্যমান। রুবেন দারিওর প্রধান গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে: Profane Hymnes and Other Poems (1896); Songs of Life and Hope (1905); Cantos for Argentina (1915) ইত্যাদি। ১৯১৬ সালে মানাগুয়া শহরে রুগ্ন, দরিদ্র ও নিঃসঙ্গ অবস্থায়, আজন্ম বোহেমিয়ান রুবেন দারিওর জীবনাবসান হয়।

বিংশ শতাব্দীর নিকারাগুয়ার অবিসংবাদিতভাবে জনপ্রিয়তম কবি এর্নেস্তো কার্দেনালের জন্ম ১৯২৫ সালে। নিকারাগুয়ার সান্দিনিস্তা বিপ্লবের অন্যতম সংগঠক ও সৈনিক কার্দেনাল, খ্রিস্টধর্ম ও মার্কসবাদের মৌলসত্তা এবং শিক্ষার সম্মিলনে মুক্তির ধর্মতত্ত্ব বা Liberation Theology নামে এক নতুন রাজনৈতিক দর্শনের জন্ম দিয়ে লোকমুখে পাদ্রিকবির অভিধা পান। তাঁর কবিতার ভাষাও বেশ সরল ও সপ্রতিভ এবং আঙ্গিক অভিনব ও স্বাতন্ত্র্যমণ্ডিত, যা কার𓆏্দেনালকে সর্বস্তরের পাঠকের কাছে এত🍷টা জনপ্রিয় করেছে। তিনি একপর্যায়ে সান্দিনিস্তাদের বিপ্লবী সরকারের সংস্কৃতিমন্ত্রীও ছিলেন, যদিও পরে তিনি সেই দলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছেদ করেন। তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে অন্যতম: Psalms of Struggle and Liberation (1971); Homage to the American Indian (1973); Zero Hour(1980); Flights of Victory (1995) ইত্যাদি। নিকারাগুয়া হ্রদে অবস্থিত সোলেন্তিনামে দ্বীপে কার্দেনাল নিজহাতে একটি ভিন্নধর্মী আত্মিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেন। ২০২০ সালে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

এখানে এই দুই ভুবনবিখ্যাত নিকারাগুয়ান কবির দুটো কবিতার অনুবাদ উপস্থাপনဣ করা হল।

 



রুবেন দারিও

মৃত্যুনিয়তি

 

বৃক্ষ সুখী কেননা সে প্রায় অনুভূতিহীন;
কঠিন পাথর আরও বেশি সুখী, সে কিছুই অনুভব করে না:
জীবন্ত থাকার চেয়ে বড় কোনো যন্ত্রণা নেই,
সচেতন জীবনের চেয়ে ভারি নয় কোনো বোঝা-ই।

জীবিত থাকা, এবং কিছু না জানা এবং কোনো পথ না পাওয়া,
একদা বেঁচে থাকার আতঙ্ক এবং ভবিষ্যতের সন্ত্রাস ...
এবং আগামীকাল মৃত হয়ে যাবার নিশ্চিত শঙ্কা,
এবং সারাটা জীবন ধরে যন্ত্রণা ভোগ করা, অন্ধক𝓰ারের মধ্যে

এবং যা আমরা জানি না এবং জানার কথা ভাবিও না তার মধ্যে ...
এবং মোহনীয় আঙুরের গুচ্ছে আমাদেরকে প্রলুব্ধ করা মাংসের শরীর,
আর শেষকৃত্যের পুষ্পস্তবক নিয়ে আমাদের জন্য অপেক্ষারত সমাধিস্তম্ভ,
এবং আমরা কোথায় যাচ্ছি ও কোত্থেকে এসেছি,
তা জানতে না পারা! ...



এর্নেস্তো কার্দেনাল

বিবর্তন

আমাদের দাঁতগুলো হাঙরের
তবে পরে স্তন্যপায়ী আমাদের ঠোঁট গজিয়েছে
যেগুলো চুষতে জানে,
আর এই চুষতে জানা ঠোঁটগুলোর জন্যই
আমরা চুমু খেতে শিখেছি।
আমাদের এই মুখ খোলার ঘটনাটি ঘটেছে
এক হাজার কোটি বছর আগে,
সেই আদিম সমুদ্রের তলায়,
আমাদের দাঁতের জন্ম চল্লিশ কোটি বছর আগে,
লাল ঠোঁটের জন্ম মাত্র বিশ কি ত্রিশ লক্ষ বছর আগে,
গাছ থেকে নেমে আসার পর
উঁচু ঘাসের কারণে
বানর উঠে দাঁড়াতে বাধ্য হল
তারপর সে চোখ তুলে তাকাল
দূরের নক্ষত্রের দিকে।