প্রকৃতি

বাগানের আদৃত বীজতাড়ক

মোহাম্মদ আলি প্রকাশিত: অক্টোবর ১৮, ২০২৩, ০৫:৫৩ পিএম
বাগানের আদৃত বীজতাড়ক
বীজতাড়ক গাছ ও ফুল। ছবি: লেখক

আমাদের বনে-বাদাড়, গ্রামেগঞ্জের সুদীর্ঘ ও বহুবর্ষজীবী লতা বীজতাড়ক। কেমন একটা অদ্ভুত নাম এর! বীজের সঙ্গে এর নামের অবশ্য কিছু সম্পর্ক আছে। তবে সে কথা পরে। এটি আমাদের দেশের অন্যতম সুন্দর আরোহী নিঃসন্দেহে। এর গোড়া কাষ্ঠল। পাতার গড়ন-বরন, আকার, ডালপালার ধবল নলাকার প্রকাশ, রঙিনসুন্দর ফুলের পূর্ণ মেলে ধরা, লতার আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরার মায়া—সব মিলিয়ে আদরণীয় এক লতা এই বীজতাড়ক। সর্পিল ডালপালাগুলো গোলগাল-মোটা, আদুরে নরম ও সাদা রোমে পূর্ণ। এর আকর্ষী (লাউ কিংবা আঙুরলতার উপাঙ্গ, যা কোনো অবলম্বনকে পেঁচিয়ে ছড়িয়ে পড়ে) নেই, কিন্তু ডালকেই আকর্ষীর মতো বানিয়ে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে কোনো অবলম্বনকে নিজের শরীর দিয়ে ঢেকে ফেলবে সম্পূর্ণভাবে। আর অবলম্বন না পেলে সমস্যা নেই, মাটিতেই ছড়িয়ে-বিছিয়ে সুদৃশ্য𝓰ভাবে নিজেকে জানান দেয় বাংলাদেশের অন্যতম বহুদূর বিস্তৃত লতাটি। এর ডাল কিংবা পাতা ভাঙলে আঠালো পদার্থ বা দুধকষ বোরোয়। এটি কোনো বাগানে থাকা মানে সে-বাগানের গৌরব বহুগুণে বেড়ে যাওয়া।

বীজতাড়কের পাতা বড় বলেই লতাটিকে দেখতে বেশ সুদৃশ্য লাগে। পাতাগুলো প্রায় বৃত্তাকার বা ডিম্বাকার। ৮-১৬ ও ৭-১৬ সেমি লম্বাচওড়া। পাতার আগা ভোঁতা কিংবা চোখা, গো🐈ড়া হৃদয়াকৃতির; বোঁটা বেশ বড়, ৫-১৬ সেমি লম্বা। ডালে পাতার বিন্যাস থাকে একান্তরভাবে। শিরার গাঁথুনি বেশ স্পষ্ট। পাতার উপরিভাগ সবুজ, প্রায় রোমহীন বলা চলে; নিচের দিকটꦫায় আদুরে ধূসর-সাদা রোমে ঢাকা। পাতায় পার্শ্বশিরা ১০-১৫টি, নিচের দিকে সেগুলো সুস্পষ্ট।

বীজতাড়কের ফুল দারুণ আকর্ষণীয়। দেখতে অনেকটাই জলজ লতা কলমি কিংবা গুল্ম ঢোলকলমির মতো। কিন্তু এদের চাইতে একটু স্বতন্ত্র এবং তা কেবল বৃতির কারণে। এর ফুল এই বৃতি দিয়ে অদ্ভুতভাবে মোড়ানো থাকে। বৃত্যাংশগুলো অসমান। এর উপপত্র রয়েছে এবং তা বৃতির চেয়ে বড়; এগুলো দ্রুত ঝরে পড়ে। বেশ লম্বা, রোমশ ও শক্ত বোঁটায় কাক্ষিক মঞ্জরীতে এর ফুলগুলো ধরে। একেক মঞ্জরিতে সাধারণত ২টি ফুল ধরলেও মোট কুঁ❀ড়ির সংখ্যা হতে পারে ৬-৭। ফুল নলাকার, ৩.৫-৭ সেমি লম্বা আর ৫ সেমি চওড়া। মূলত গোলাপি, কেন্দ্রটি গাঢ় বেগুনি। ফুলের কুঁড়িও সুদৃশ্য, বেশ বড় আর আগা সুঁচালো। পাপড়ি ৫টি। পুংকেশরও ৫টি। এর ফুল আসে বর্ষাকালে। গোলাপি-বেগুনি সুগন্ধি ফুলগুলো ফোটে রাতে।

গোলাকার ফলগুলো হলুদাভ-বাদামি, মসৃণ ও উজ্জ্বল, একদিকে সামান্য সুঁচালো🍎; ২ সেমি চওড়া প্রায়। বীজগুলো বাদামি ও মসৃণ। ফলগুলো নিজে থেকে ফেটে গিয়ে বীজ বের করে দেয়। এ বৈশিষ্ট্য মর্নিং গ্লোরি গোত্রের কমবেশি সব সদস্যরই রয়েছে।  

বীজতাড়ক লতাটি আমাদের বাগানের জন্য হতে পারে শীর্ষ বাছাই♉য়ের একটি। আগেই বলা হয়েছে, এর পেঁচিয়ে জড়িয়ে ধরার কৌশল, পাতার উল্টোপিঠের রং, শাখাপ্রশাখার আলোকিত অবয়ব, ফুলের নজরকাড়া রূপ, পাত🐲ার বিশালতা ও ঘন বুনন বাগানের রূপকে বেশ কয়েক গুণ বাড়িয়ে তুলবে, বলাই বাহুল্য।

বীজতাড়ক ছাড়াও এর আরও কয়েকটি নাম রয়েছে। যেমন, ঋষ্যগন্ধা, বিদ্রধিদারক, ছগলাঙ্ঘ্রি, বৃদ্ধদারক, শ্যামা, বস্তান্তী, অন্তঃকোটরপুষ্পী, মুর্বা, স🌊মুদ্রফলক, সমুদ্রশশা, বিধারা। এগুলো সবই এর সংস্কৃত নাম। ঋষ্য ন♐ামীয় হরিণের গায়ের গন্ধের সঙ্গে মিল রেখে এর নামকরণ। বিদ্রধিদারক অর্থ শত্রুকে হত্যাকারী। এই বিদ্রধিদারক শব্দটি লোকমুখে বিবর্তিত হতে হতে একসময় বর্তমান নাম বীজতাড়কে এসে ঠেকেছে। নাম বীজতাড়ক হওয়াতে অবশ্য কোনো ক্ষতি হয়নি আমাদের, কেননা এর ফলে বীজও যেমন হয়, আবার তা তড়াক করে ফেটেও যায়!

বীজতাড়কের ইংরেজি নাম রয়েছে বেশ কয়েকটি : Hawaiian baby woodrose, Elephant creeper, Woolly morning glory। এর মধ্যে Elephant creeper নামটা মজার নিঃসন্দেহে। এমন নাম হয়েছে এর বিশালাকꦍার পাতাগুলোর কারণে। পাতাগুলো এতই বড় যে এদেরকে দেখতে লꦍাগে অনেকটা হাতির কানের মতো।

খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ ও সপ্তম শতাব্দীর বৈদিক সাহিত্যে বীজতাড়কের উল্লেখ রয়েছে। এর কথা বেশ ভালোভাবে লেখা রয়েছে ভারতীয় প্রাচীন ঔষধশাস্ত্র চরক-সুশ্রুততেও। বীজ, মূল ও পাতা ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। শিকড় মসুর ডাল ও গুড়ের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ালে গবাদিপশুর দুধের পরিমাণ বাড়ে। ভেষজ শাস্ত্রমতে, বীজতাড়কের শিকড় বলকারক, বাতনাশক; স্নায়বিক রোগে এর ব্যবহার রয়েছে। চর্মরোগেও গাছটির পাতা ব্যবহৃত হয়। পাতার নিচের দিকটায় ঘি মাখিয়ে ফোড়ার ওপর বসিয়ে দিলে তা ফেটে যায়। আবার পাতার ওপরের দিকটায় ঘি মাখিয়ে ফোড়ার ওপর বসিয়ে দিলে পুঁজ বের হয়ে আসে। এর শিকড়চূর্ণ পেটফাঁপা রোগে ব্যবহৃত হয়। কাঁচা শিকড়ের ছালও এ রোগে ব্যবহার করে উপকার পাওয়ার কথা বলা আছে শাস্ত্রগুলোতে। তা ছাড়া মূত্রনালিসংক্রান্ত জটিলতা, গাঁটব্যথা, ফাইলেরিয়া, আমবাত, ঝিল্লিপ্রদাহেও এর ব্যবহার রয়েছে। বীজচূর্ণ দুধের সঙ্গে পান করালে স্মৃতিশক্তি বাড়ে বলে জানা যায়। তবে আধুনিক চিকিৎসাবিদ🌜্যা বলছে, এর বীজ বিষাক্ত; তাই এর ব্যবহারে বেশ সতর্কতা প্রয়োজন। বমি-ভাব, হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি, উচ্চ রক্তচাপ, ক্লান্তি-আলস্য, মানসিক দৌর্বল্যও দেখা দিতে পারে এর বীজের প্রভাবে।

বীজতাড়কের আদি বাসভূমি নিয়ে কিছুটা জটিলতা রয়েছে। এক সূত্র বলছে, এর জন্মভূমি মাল💧য়েশিয়া, অন্য সূত্র বলছে বৃহৎ বাংলা। তবে আদিনিবাস যা-ই হোক, দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এর দেখা মিলবে। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ, এমনকি হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা পর্যন্ত এর রূপের গৌরব ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানেও দারুণ আদৃত সুদৃশ্য লতাটি। আর আমাদের দেশের ঢাকা, নোয়াখালী, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, পটুয়াখালী, সিলেটসহ বিভিন্ন জায়গায় একে মাটিতে গড়াগড়ি খেতে কিংবা কোনো গাছ বরাবর ওপরে উঠে যেতে দেখা যায়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Argyreia nervosa, এটি Convolvulaceae পরিবারের সদস্য।

লতাটি বাড়তে পারে অনেক দূর পর্যন্ত, আর এর গোড়ার দিকটা বেশ কাষ্ঠল। বৈজ্ঞানিক নামের প্রজাতির অংশে (Argyreia) সে-স্মারক রয়েছে। কথাটার অর্থ শক্তপোক্ত বা বলিষ্ঠ। এর পরিবারের অধিকাংশ সদস্যেরই রূপের জৌলুশ রয়েছে। বাগানবিদ্যায় একটা কথা প্রচলিত রয়েছে, চাইলে শুধু এ পরিবারের, অর্থাৎ মর্নিং গ্লোরি পরিবারের বিভিন্ন প্রজাতির লতা নিয়ে যে-কেউ বিশাল একটা রূপগর্বী বাগান রচনা করতে পারবেন ইচ্ছা করলেই। শুধ👍ু শুধু তো কথাটা বলা হয় না, এ পরিবারের প্রজাতির সংখ্যা যে ১৬৫০-এরও উপরে। আপনি এবার চিন্তা করে দেখুন এদের নিয়ে বাগান করার শখ এ জীবনে আপনার কখনো পূরণ হবে কি না!

  • JeetBuzz
    ৳1,077 Slot & Fishing Bonus
    18+ | Play Responsibly | gamblingtherapy.org | T&Cs Apply
    • Industry-leading odds and gameplay
    • 24/7 professional customer service team
    • Diverse and rich promotional bonuses
    Show More
    Jeetbuzz - Where Bangladesh Bets and Wins! As the trusted and internationally recognized betting platform, we combine legal integrity with a thrilling variety of casino games to deliver the ultimate gaming experience for cricket enthusiasts. Join us for secure bets, unbeatable offers, and top-notch customer service that sets us apart