ইস্টিমারের আলো

সালেহা চৌধুরী প্রকাশিত: আগস্ট ৩০, ২০২১, ০৭:২৭ পিএম

অনেক আগে স্টিমারে করে বরিশাল যাওয়ার সময় রাতের নদীতে যে আলো দেখেছিল রুপা, সেটি ছিল ইস্টিমারের পথচেনা নিজের আলো। এই আলোর পথ ধরে একসময় ইস্টিমার গন্তব্যস্থলে পৌঁছে যাবে। এই আলোটুকু না থাকলে পথ হারিয়ে ফেলত সেই জলযান। হারিয়ে যেত নদীতে। পাশে বসে ছিল কিশওয়ার। ওদের তখন নতুন বিয়ে হয়েছে। চুপচাপ বসে আলো দেখাটাই ছিল মজার সময় কাটানো। এমনি নানা ঘটনা নিয়ে কেটে গেল অনেকগুলো বছর। কাঁটায় কাঁটায় মেলালে বলতে হয় পাঁচ বছর। পাঁচ বছর পর কিশওয়ার লন্ডনে এলো বাংলাদেশ হাইকমিশনে কাজ নিয়ে। 
একটা ছেলে হলো ওদের। পাঁচ বছর পর ছেলে। খুব খুশি হয়েছিল রুপা আর কিশওয়ার। প্রথমে তেমন কিছু বুঝতে পারেনি। কিন্তু যখন আঠারো মাসে বাবুয়া একটা শব্দ উচ্চারণ করল প্রথম, তখন রুপা জেনে গেল ছেলের সমস্যা আছে। ভয়ে ভয়ে একদিন এক চাইল্ড স্পেশালিস্টের কাছে নিয়ে গেল। অনেক পরীক্ষার পর স্পেশালিস্ট জানালেন— ছেলেটি অটিস্টিক। রুপা আর কিশওয়ার জানতে চাইল শব্দটির মানে কী? স্পেশালিস্ট অনেকভাবে শব্দটির মানে বোঝাতে চাইলেন। 
তিনি অনেকগুলো লক্ষণের কথা বললেন, যা একজন অটিস্টিক ছেলের থাকে। ১. সে কথা শেখে দেরিতে। এবং পরে আবার জানা শব্দগুলোও ভুলে যেতে পারে এবং যদি কথা বলে শব্দসংখ্যা খুব কম হয়। কখনো একেবারেই কথা বলে না। ২. একা থাকতে ভালোবাসে এবং নিজের মতো থাকতে। ৩. একই ধরনের কাজ করে, যাকে বলা হয় রিপিটিটিভ বিহেভিয়ার। একই ধরনের শব্দও ব্যবহার করে, ৪. ভাবাবেগ দেখাতে পারে না। এবং অন্যের ভাব বা আবেগ বা হ্রদয় কোনো কিছু সে ঠিকমত বুঝতে ও রেসপন্স বা সাড়া দিতে পারে না। তারপরও বাবা-মায়ের উচিত তাকে প্রচুর ভালোবাসা দেখানো, ৫. অনেক দিন বাঁচে না, এটা সব সময় ঠিক নয়। তবে অনেকে মনে করে এসব শিশু চল্লিশ পেরোয় না। শুনে খুশি হবেন এই পৃথিবীর সবচাইতে বেশি বয়সী অটিস্টিক মানুষ ডোনাল্ড ট্রিপলেট। তাঁর বয়স ৮৮ বছর। কাজেই বেশি দিন বাঁচে না, এমন একটা ঢালাও কথা বলব না। ৬. লেখাপড়া শেখে না, এটাও ঠিক নয়। তবে স্বাভাবিক শিশুদের চাইতে বেশি সময় লাগে। তবে ওরা যেকোনো একটি বিষয় শেখে। অনেকগুলো একসঙ্গে নয়। মানে যদি অঙ্ক শেখে তার সঙ্গে সাহিত্য নয়। এরপর স্পেশালিস্ট ওদের দিকে তাকিয়ে বলেন, আলবার্ট আইনস্টাইন অটিস্টিক ছিলেন। ভালো করে কথা বলতে তাঁর সময় লেগেছিল পাঁচ বছর। তারপর? আর কী শুনতে চান ডাক্তার বলেন। আর একটি হলো, ওরা সহজে বন্ধু করতে পারে না। তবে বন্ধু থাকা ভালো। এবং সত্যিই যদি কোনো ভালো বন্ধু হয়, সেটা ওর জন্য সুখবর।
বাবুয়ার কারণে রুপা ওর চাকরি ছেড়ে দিল। এমনি একটা কাজ নিয়েছিল সময় কাটানোর জন্য। সারাক্ষণই লেগে রইল ছেলের সঙ্গে। আর কিশওয়ার লন্ডনে হাইকমিশনের চাকরিটা যখন চলে গেল ও তাড়াতাড়ি আরেকটা চাকরি খুঁজে নিল। হাইকমিশন থেকে সাধারণ একটা কাজ। একটা বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানে কেরানিগিরি। বলল, ছেলের জন্য রাস্তা ঝাড়– দিয়ে থাকতে হলেও থাকব। হোলমউড স্কুলে ছেলেকে ভর্তি করে দেব। এটা আমি ঠিক করেছি। সাত থেকে উনিশ বছর এই স্কুলে অটিস্টিক শিশুদের লেখাপড়া এবং নানা কারিগরি বিদ্যা শেখানো হয়। আমি এখান থেকে যাব এবং এসব কারণে পৃথিবীর আর কোথাও যেতে রাজি নই। এমনকি স্বর্গেও নয়। 
দরকার নেই দেশে ফেরার। রুপা বলে, ‘আমাদের ছেলে হোলমউড স্কুলে ভর্তি হবে? ইশ ভাবতে পারছি না।। তারপর? ভালো হয়ে যাবে।’ কিশওয়ার জানায়, ‘ভালো হবে কি না জানি না। তবে খানিকটা স্বাবলম্বী হবে আশা করছি। ওদের আর কোনো ছেলেপুলে হলো না। বলল, কাকবন্ধ্যা তুমি। আর দেখ কেমন করে ঈশ্বর আমাদের দুই গালে দুই থাপ্পড় মারলেন।
রুপা বলে, ‘তা হোক তবু তো বাবুয়া আছে।’
যা বলেছিলেন ডাক্তার তাই। নিজের ঘরে থাকতে ভালোবাসে বাবুয়া। না কোনো প্রকার বন্ধুবান্ধব সে চায় না। তার খেলনা আছে। লেগো আছে। মা যখন ছেলেকে আদর করে বুকে টেনে নেন, বাবুয়া কেমন কঠিন হয়ে থাকে। মা চোখ মোছেন। বুঝতে পারেন এসব ভালোবাসার আদান-প্রদান ও জানে না। বাবুয়ার জন্যই বোধ হয় কিশওয়ার আর রুপাও তাদের জীবনে স্বাভাবিকতা হারাতে বসেছে। রাত জেগে ইস্টিমারের আলো দেখার মতো সেসব ছেলেমানুষি ঘটনা ঘটে না তেমন। রাত জেগে নানা সব সিনেমা দেখা। রুপার প্রিয় হরোর মুভিগুলোও ও তেমন দেখে না আর। রাত জেগে এসব দেখা ছিল তার আনন্দের বিষয়। কিশওয়ার একটা কাগজে কলাম লেখে। আর চাকরি করে। ওরা দুইজন হয়তো এখন অনেকটা দূরে চলে গেছে। একটা নদী ওদের মাঝখানে। অশান্ত নদী, যা ওদের দূরে সরিয়ে দিয়েছে। রাতে যখন ঘুমাতে যায় রুপা বড় ক্লান্ত সে। কী ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে। বোধ করি মনে করে বাবুয়ার এমন হওয়ার কারণ তার কোনো পাপ। এই ভেবে কখনো জায়নামাজের পাটি ভেজায় ও। মাপ চায়। অনন্তলোকে ঈশ্বর কি সেব শোনেন? কে জানে।
পাশের বাড়িতে এক চমৎকার পরিবার এলো। স্বামীটি ভারতীয় আর তাঁর স্ত্রী ইতালির। এক মাত্র মেয়ে অরোরা তেরো বছর বয়সের। দারুণ চটপটে। আর অনবরত কথা বলে। তখন বাবুয়ারও তেরো চলছে। দু-এক মাসের এদিক-ওদিক। অরোরার প্রধান কাজ হলো বাবুয়ার সঙ্গে কথা বলা। কিন্তু বাবুয়া তেমন কথা বলে না। একদিন অরোরা বলে, ‘আন্টি বাবুয়া কি আমার সঙ্গে রাগ করেছে। কথা বলে না কেন?’
না, অরোরা ও রাগ করেনি। ও এমনই। কথা বেশি বলে না। অরোরা কী ভাবে। কিন্তু মুখে কিছু বলে না। বলেন রুপা, ‘আসলে এটা ওর সমস্যা। মনের ভাব ব্যক্ত করতে কথা ঠিকমতো না বলতে পারা। অন্য আর সব সমস্যার কথা রুপা বলে না। 
অরোরা সে কথা শুনে কীভাবে, ঠিক বোঝা যায় না। অরোরা বাংলা বলে চমৎকার। ইংরেজিও বলে। এবং ইতালির ভাষাও জানে। অসম্ভব বুদ্ধমতী মেয়ে। বোঝা যায় বাবুয়া ওকে পছন্দ করে। তেমন কথা বলুক আর না বলুক। একজন চুপ আর একজন সারাক্ষণ বকবক। রুপা তাকিয়ে দেখে। খুশি হয় এই ভেবে এত দিন পর বাবুয়ার একজন বন্ধু হয়েছে। এবং এর আগে বাবুয়া কারও সঙ্গে এভাবে মেশেনি। এবং মেয়েটি চায় বাবুয়াকে সহজ করতে এবং কথা বলাতে। মনে মনে মেয়েটা যে কী সংকল্প করেছে কে জানে। বড় ছবির বই দেখতে দেখতে অরোরা বলে, ‘দেখ দেখ কী সুন্দর ফুল।’ হয়তো একটি শব্দ উচ্চারণ করে বাবুয়া বলে, ‘ফুল’। এর বেশি কিছু নয়। প্রতিদিন বাড়ি যাওয়ার সময় অরোরা যখন বাই বাই বলে বাবুয়া কেবল হাত নাড়ায়। ফিরে আসে অরোরা। বলে বল, ‘বাই’। তারপর হয়তো সেই শব্দ শোনা যায় কখনো। আবার কখনো নয়। আপেল অচার্ডে বা খোলা জায়গায় বা ঘাসের মাঠে খেলতে পছন্দ করে না বাবুয়া। সে ঘরের ভেতর থাকতে ভালোবাসে। তার একার জগতে আরোরা এখন। মাঝে মাঝে রুপা আদর করে বলে, ‘আমার অরোরা বরিয়ালিস মা এলো রে। খুবই ভালো লাগছে মেয়েটি যেভাবে বাবুয়ার সঙ্গে থাকে, হাসে। এরপরেও বাবুয়াকে একটা হাসতে দেখা যায় না।’ 
অরোরার ভেতরে চমৎকার এক ইমোশনের ঝরনা। যেন ইতালি আর ভারতের ইমোশনে মিশিয়ে নিবিড় গভীর অপূর্ব অরোরা। রুপা বুঝতে পারে বাবুয়া অরোরাকে পছন্দ করে। কোনো দিন না এলে মন খারাপ করে থাকে। আর এলে খুশিও হয়। অরোরাকে মনে হয় ঈশ্বরের দান। বলে রুপা কিশওয়ারকে, ‘অরোরা একেবারে গডসেন্ড।’ কিশওয়ার বলে, ‘সত্যিই অরোরা অপরূপ।’
রুপা আর কিশওয়ার বুঝতে পারে বাবুয়া একটু-আধটু অঙ্ক পারে। আর কোনো কিছু নয়।
স্থানীয় সিনেমা হলে একটা ছোটদের সিনেমা এলো। অভয়ের দেশে। বা দ্য ল্যান্ড অব নো ফিয়ার। দারুণ ছবি। একজন ছেলে আর মেয়ে সেই অভয়ের দেশে হারিয়ে তারপর কী হলো সেসব। যেমন আশ্চর্য সুন্দর সব ছবি, তেমনি মজার গল্প। গাছ কথা বলছে। পাখিরাও। প্রজাপতিদের পিকনিক। আর রাতের তারারা সেই জগতে ছুটে এসে ওদের জীবনের গল্প বলছে। কখনো ঝরনা যাত্রা থামিয়ে এসব দেখছে। অসাধারণ সব ফটোগ্রাফি। ঝলমল সব দৃশ্য। অপরূপ তার সবকিছু। মনোলোভা ছবিতে ভরপুর। এ এমন একটা সিনেমা, যা দেখলে ছোটরা কেন, বড়রাও খুশি হয়। রুপা আর কিশওয়ার ঠিক করল সিনেমাটা বাবুয়াকে দেখাবে। পাশের বাড়ির বাবুয়ার বাবা অরুন সোমের মাথায় অন্য পরিকল্পনা। তিনি জানেন বাবুয়ার কথা। অনেক সহানুভূতিশীল তিনি। 
তিনি বললেন, ‘এবার সিনেমা হলে ওদের দুজনকে পাঠিয়ে দিন। অরোরা আর বাবুয়া।’
কেবল ওরা দুইজন? রুপা প্রশ্ন করে। 
আপনারাও যাবেন। তবে সে কথা যেন ওরা জানতে না পারে। দেখি কী হয়? উনি এক গ্রামার স্কুলে অঙ্কের মাস্টার। 
আপনারা ওদের পৌঁছে দিয়ে অদৃশ্য হয়ে যাবেন। দেখুন ওরা দুইজন দুইজনের দায়িত্ব কীভাবে নেয়। 
ঠিক আছে। রুপা আর কিশওয়ার রাজি হয়ে যায়। 
রোববারে সুন্দর করে সাজিয়ে দেওয়া হলো তেরো বছরের বাবুয়াকে। আর অরোরা নতুন ফ্রকে একেবারে ঝলমলে। অনেক দিন পর খুব ভালো করে সেজেছে রুপা। আর সে চেহারার দিকে তাকিয়ে আছে কিশওয়ার। সেই অপরূপ সিল্কের নীল শাড়িটা না? আঁচলে ময়ূরের পাখা। গলায় একটা হালকা নীল পাথরের চেইন। কানে দুলছে নীল দুল। একটা পারফিউমও মেখেছে। গন্ধটা দারুণ। নিনারিচি মনে হয়।
বাবুয়া আর অরোরা যেখানে বসেছে, তার কয়েক সারি পেছনে ওরা। পাশাপাশি বসে আছে। বাবুয়ারা ওদের দেখতে পায়নি। কিন্তু ওরা ঠিকই দেখতে পাচ্ছে। বাবুয়াকে বড় একটা ক্রিসপের প্যাকেট দেওয়া হয়েছে। কতগুলো ওদের ভালোলাগা টফি। অন্য অটিস্টিক শিশুর মতো বাবুয়া ঠিক শেয়ার করতে জানে না। দেখা যাক কী হয়। পেছনে বসে ওরা মাঝে মাঝে অরোরার হাসি শুনতে পায়। বাবুয়া কখনো হো হো করে করে হাসে না। হয়তো ও হাসছে। বাবুয়ার নিজস্ব নিঃশব্দ হাসি।
ইন্টারভালের সময় আলো জ্বলে। ওরা দেখে বাবুয়া ক্রিসপের প্যাকেটা অরোরার সামনে ধরে আছে আর অরোরা ক্রিসপ তুলে নিয়ে মুখে পুরছে। বাবুয়া শেয়ার করছে এবং খুশি মনে। ওরা দুজনে হাসে। তারপর আবার সিনেমা শুরু হয়। এবার রুপা কিশওয়ারের কাঁধে মাথা রেখে কী এক সুখে সিনেমা দেখছে। অনেক দিন পর এই যুগল দুজনের সান্নিধ্যে আজ বড় খুশি। সেই ইস্টিমারের আলো দেখা সময়ের মতো। না হলে সমুদ্র আর পাহাড় দেখার মতো। না হলে ঝাউবনের গহিনে হাত ধরে চলার মতো সুন্দর সময়। না হলে কিশওয়ার কিছু পড়ছে আর রুপা শুনছে। না হলে দুজনে রবীন্দ্রনাথের অপার জগতে। অনেক দিন পরে। কিশওয়ার আস্তে করে ডাকে, রুপা। রুপা বলে, ‘আজ অনেক দিন পর আমার খুব ভালো লাগছে।’ কিশওয়ার বলে,  ‘আমারও’। 
তারপর যেমন করে দুটো কবুতর একজন আরেকজনের ডানায় মুখ রেখে সময় পার করে, ঠিক তেমনি করে বাকি সময় কেটে যায়। সিনেমা শেষ হয়। আলোতে দেখা যায় অরোরা হাত ধরে আছে বাবুয়ার। দুইজনে আস্তে আস্তে বাইরে আসছে। ক্রিসপের প্যাকেট শেষ হয়ে গেছে। এখন কিছু চকলেট বাবুয়ার হাতে। ওরা জানে অরোরার বাবা এসে অরোরাকে আর বাবুয়ার বাবা-মা এসে বাবুয়াকে নিয়ে যাবে। ওরা দুইজন বসে আছে বেঞ্চে। অরোরা কথা বলছে। সিমোর টুকরো টুকরো কথা। বাবুয়া শুনছে। হাসি লেগে আছে মুখে। বাবুয়া একটা চকলেট বাড়িয়ে দেয় অরোরার দিকে। অরোরা বলে, ‘থ্যাঙ্কয়ু বাবুয়া।’ বাবুয়ার সারা মুখ হাসির আলোতে আজ একেবারে অন্য রকম। রুপার দুই চোখে পানি। রুমালে তাড়াতাড়ি মুছে ফেলে।
অরুন সোম এসে অরোরাকে গাড়িতে তুলে নেয়। আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে রুপা আর কিশওয়ার বাবুয়ার সামনে দাঁড়ায়। জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে অরোরা বলে,‘বাই। সি ইউ বাবুয়া।’
হাসি হাসি মুখে বাবুয়া বলে পরিষ্কার গলায়, ‘বাই। অরো।’ এর বেশি ও বলতে ঠিক পারে না কিন্তু তাতে কি এসে যায়। আজ বাবুয়ার নতুন জন্ম হয়েছে। সে আজ প্রথম উপলব্ধি করছে বন্ধুর মতো কোনো ঘটনা। 
রুপা আর কিশওয়ারের মাঝখানে বাবুয়াকে মনে হয় নতুন একজন। মনে পড়ে ডাক্তারের কথা, ‘ওরা একা থাকতে পছন্দ করলেও কখনো কোনো বন্ধুত্ব মিরাকল করতে পারে। কোনো সুন্দর পছন্দের ভালো লাগার একজন যে ওকে বুঝতে শেখায় ভাবাবেগ বা ইমোশন যার নাম।
আর যাদের ভেতরে একটা নদী ওদের বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল, সেখানে আজ রুপা আর কিশওয়ার দেখতে পায় ইস্টিমারের আলো। জল কেটে জলযান চলেছে। এই আলোতে ইস্টিমার একসময় পৌঁছে যায় গন্তব্যে। ঠিক তেমন করে বাবুয়া একদিন গন্তব্যে পৌঁছে যাবে। ওরা দুইজন হাসে। আর বাবুয়া কী ভাবছে, ‘আবার কখন আসবে অরোরা। হয়তো তাই।’
মা অরো। মা বলেন, ‘ও খুব ভালো তাই না বাবুয়া।’ বাবুয়া কথা না বলে মাথা নাড়ে।
মা আবার চোখের পানি মোছেন।