আমরা যারা জীবনযাপনে মোটামুটি ব্যস্ত, চাকরি, ঘর-সংসার তেল-নুন আর দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির হিসেবের চাপে পিষ্ট হয়ে যাচ্ছি, তাদের হাতে খুব কম সময়ই থাকে বিনোদনের 🏅জন্য। ফিল্ম, টেলিফিল্ম বা নাটক দেখার সময় বেশি পাওয়া যায় না। কিন্তু এর মধ্যেই ঠিকঠিক সময় বের করে নেওয়া যায়, যদি নির্মাণ ভালো হয়। তেমনই একটি কাজ সম্প্রতি দেখলাম ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হইচই-এ। তানিম নূরের নির্দেশনায়𓆏, থ্রিলার সিরিজ “কায়জার” ।
একজন গোয়েন্দা পুলিশ অফিসার, তার ভিডিও গেইমসের প্রতি আসক্তি, দাম্পত্য বিচ্ছেদ পরবর্তী জীবন, নিজের প্রাক্তন স্ত্রী, কন্যা এবং তাদের আলাদা সংসার নিয়ে তার মনোস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব, পেশা জীবনের নানান জটিলতা এই সব নিয়েই কাহিনী আগায়, এরই মধ্যে খুন এবং খুনের পেছনের রহস্য উদঘাটনের মধ্য ꦜদিয়ে সিরিজ চলতে থাকে।
সম্পর্কের জটিলতা থেকে সৃষ্ট দূরত্ব সুন্দর করে এসেছে এই সিরিজে। আমাদের প♎িতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় বিয়ে, বিয়ে পরবর্তী দাম্পত্য কলহ, বিচ্ছেদ, প্রাক্তনের আলাদা করে সংসার শুরু করার পরবর্তী বিষয়গুলো নানান জায়গায় সাধারণত নেতিবাচকভাবে তুলে ধরা হয়। ‘🥀কায়জারে’ এক্ষেত্রে আসলে ভালো ও খারাপ দুটি দিকই তুলে ধরা হয়েছে।
আমার ভালো লেগেছে অম্লান এবং কায়জারের মধ্যে♋ ঝগড়ার দৃশ্যটি। বন্ধুত্বের একটা সুন্দর গল্প এখানে আছে, তেমনি দ্বন্দ্বও আছে।
তবে অ্যাকশন, সাসপেন্সের সাথে টুইস্ট ಞআরেকটু থাকলে খারাপ হতো না। ডায়ালগ ভালো লেগেছে, তবে আরো একটু কৌতুহলোদ্দীপক হতে পারত। পরবর্তী সিজনে এমন কিছু হবে, সেই আশায় থাকলাম।
এই আশাটা নির্দ্বি꧒ধায়ꦐ করতে পারি, কেননা স্বাগতা এবং আহমেদ রুবেলকে কয়েক ঝলক দেখে মনে হলো সামনে আরো ভালো কিছু আসবে।
যদি হিসেব কষতে বসি, তবে এতে কিন্তু নতুন কিছুই নেই। পুরনো থ্রিলার গল্পগুলোর মতোই। খুন হয়, একজন ঘটনার সূত্র বের করে, তার একটা সাগরেদ থাকে, কিডন্যাপ হয়, ভাবা হয় নি এমন কেউ অপরাধী হিসেবে সামনে আসে ইত্যাদি। কিন্তু তারপরও সিরিজটা প্রত্যাশা পꦕূরণ করেছে।
এখন তো প্র🌄চুর থ্রিলার ওয়েব সিরিজ হচ্ছে, কিন্তু ‘কায়জার’ অন্যান্য অনে🎃ক ওয়েব সিরিজ থেকে মানসম্পন্ন হয়েছে।
‘কায়জারে’ আফরান নিশো`র কাজ দুর্দান্ত লেগেছে। নিশোর কাজের মধ্যে, “মরীচিকা” সিরিজটা দেখার পর থেকেই তার ভক্ত আমি। এরপর এই কায়জার খুব ভালো লাগল। শক্তিমান অভিনেতাদের মধ্যে শতাব্দী ওয়াদুদ, সুমন আনোয়াররা সব সময়ই এগিয়ে থাকেন। কিন্তু তাদের সকলের সাথে পাল্লা দিয়ে এবার নিশো এগিয়ে গেছেন অন🧔েক। স্ক্রিনে তার উপস্থিতি বেশি, কিন্তু সেই হিসেবে একবারও একঘেয়ে মনে হয় নি। অ্যান্টাগনিস্ট হিসেবে, ইমতিয়াজ বর্ষণ খুবই ভালো করেছেন। নতুন হিসেবে সৌম্য জ্যোতি🤡কে নিয়ে লিখতেই হয়। ‘কায়জারে’র গেমস খেলার পার্টনার অনন্ত চরিত্রে, সৌম্য জ্যোতিকে আমার দারুণ লেগেছে। পশ্চিমবঙ্গের অর্জুন চক্রবর্তী, ঋদ্ধি সেন এদের মতো ট্যালেন্টেড এবং সুদর্শন তরুণ অভিনেতা বাংলাদেশে তেমন দেখা যায় না ভেবে আফসোস হতো। এটা কমিয়ে এনেছে সৌম্য জ্যোতি। যাক পাওয়া গেলো।
অম্লান চরিত্রে মোস্তাফিজুর নূর ইমরান, তন্ময় চরিত্রে শঙ্খ জামান এবং শিরিন চরিত্রে রিকিতা নন্দিনী শিমুকে ভালো মানিয়েছে। এবং কোন চরিত্রই একটি অন্যটি থেকে অপ্রধাণ মনে হয় নি। শিশু শিল্পী ঋদ্ধ🍸ির অভিনয় যথেষ্ট পরিপক্ক ছিলো। এবং তার চরিত্রটিও খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিলো।
নিলয়, জয়া, সাবা চরিত্রে, শিল্পীরা নিজেদের জায়গায় ভালো কাজ করেছেন। মানে একটা ভারসাম্যꦺ ছিলো প্রতিটি চরিত্রে, কেউ খুব পাকা অভিনেতা, আবার কেউ খুব দুর্বল অভিনয় করেছে এরকম হয় নি ব্যপারটা।
সিরিজ থিম সংটা ভালো লেগেছে সবচেয়ে বেশি, বিশেষ করে নব্বই দশকের একটা আমেজ পাওয়া গেছে এতে। শিশু পার্ক, চিড়িয়াখানা, সংসদ ভবন, মানে সেই সময়ের সেজেগুজে বেড়াতে যাওয়ার জায়গা, পুরনো ভিডিও ফুটেজগুলো নস্টালজিক ছিলো। সেই আগের জামাকাপড়, ভিডিও গেমসের মেশিন, সেই শিশুপার্কের দোলনা, অল্প🃏 কয়েকটা রাইড, শৈশবের সুন্দর স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়। কেমন একটা আবেগীয় ভ𒅌ালো লাগায় হারিয়ে যেতে হয়েছে।
ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকে কাইয়ুম সা𓆉নু সন্ধি সুন্দর কাজ করেছেন।
একটা পয়সা উসুল করা, ঝকঝকে এব𓆏ং দুর্দান্ত সিরিজ উপহার দেওয়ার জ꧅ন্য তানিম নূরকে ধন্যবাদ।